E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সাতক্ষীরা সদর থানা লকআপ থেকে নিখোঁজ ডাঃ মোখলেছুর

সাবেক দুই ওসি ও এসআই এর বিরুদ্ধে দায়েরকৃত অপহরণ, হত্যা ও লাশ গুমের মামলার তদন্তে ধীরগতি

২০২৩ ফেব্রুয়ারি ০৮ ১৯:৪১:৫৬
সাবেক দুই ওসি ও এসআই এর বিরুদ্ধে দায়েরকৃত অপহরণ, হত্যা ও লাশ গুমের মামলার তদন্তে ধীরগতি

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : সাড়ে ছয় বছর আগে সাতক্ষীরা সদর থানা লকআপ থেকে শহরের পারকুকরালির হোমিও চিকিৎসক  ডাঃ মোখলেছুর রহমান জনি নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় আদালতে সাতক্ষীরা সদর  থানার সাবেক দু’ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এমদাদ শেখ, ফিরোজ হোসেন মোল­া ও উপপরিদর্শক হিমেল হোসেনের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত অপহরণ, হত্যা ও লাশ গুমের মামলায় পুলিশের অপরাধ ও তদন্ত শাখায় (সিআইডি) ন্যস্ত হওয়া তদন্তে  দেড় বছরে অগ্রগতি নেই। বুধবার ধার্য দিনে সংশ্লিষ্ট বিচারক সাতক্ষীরার মুখ্য বিচারিক হাকিম ছুটিতে থাকায় আগামি ২১ মে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য পরবর্তী দিন ধার্য করা হয়েছে।

মামলা ও ঘটনার বিবরণে জানা যায়, ২০১৬ সালের ৪ আগষ্ট রাত সাড়ে ৯টার দিকে অসুস্থ বাবার জন্য বাইসাইকেলে ঔষধ কিনতে যেয়ে সাতক্ষীরা শহরের লাবনী সিনেমা হলের সামনে ফটোস্টাটের দোকান থেকে সদর থানার উপপরিদর্শক হিমেল শহরের পারকুকরালির শেখ আব্দুর রাশেদ এর ছেলে হোমিও চিকিৎসক মোখলেছুর রহমান জনিকে(২৭) থানায় ধরে নিয়ে যান। ৫,৬ ও ৭ আগষ্ট স্ত্রী জেসমনি নাহার রেশমা তার শ্বশুর ও স্বজনদের নিয়ে থানা লক আপে তাকে খাবার দিয়েছেন, তার সঙ্গে কথা বলেছেন। থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এমদাদুল হক শেখ ও উপপরিদর্শক হিমেলের সঙ্গে কথা বললে জনির জঙ্গি সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে জানানো হয়। স্বামীর মুক্তির বিনিময়ে তৎকালিন থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শেখ এমদাদ হোসেন ও উপপরিদর্শক হিমেল জনির স্ত্রী রেশমার কাছে দাবি করেন মোটা অংকের টাকা। ৮ আগষ্ট থানায় গেলে জনিকে পাওয়া যায়নি। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ নেতা, পুলিশ সুপার, সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক, জনপ্রতিনিধি ও সাংবাদিকদের জানিয়ে কোন লাভ হয়নি। পুলিশ সাধারণ ডায়েরী না নেওয়ায় সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করা হয়।

অবশেষে ২০১৭ সালের ২ মার্চ হাইকোর্টে রিট পিটিশন (২৮৩৩/১৭) দাখিল করেন জেসমিন নাহার রেশমা। মামলায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ আটজনকে বিবাদী করা হয়। পরবর্তীতে আদালত মাখলেছুরকে ওই বছরের ১২ এপ্রিলের মধ্যে সাতক্ষীরার বিচারিক হাকিম আদালতে হাজির করানোর নির্দেশ এর পাশাপাশি ৯ মে এ সংক্রান্ত তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ঢাকা লিগ্যাল সেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এএসএম জাভিদ হাসানকে নির্দেশ দেওয়া হয়। প্রতিবেদন রিটকারির বিপক্ষে যায়।পরে আদালতের নির্দেশে ২০১৭ সালের বছরের ৩ জুলাই সাতক্ষীরার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম হাবিবুল­াহ মাহমুদ হাইকোর্টে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। প্রতিবেদনে থানা লক আপ থেকে ডাঃ জনির নিখোঁজ হওয়ার সত্যতা পাওয়া গেছে মর্মে প্রতীয়মান হয়। পরবর্তীতে এক আদেশে ওই বছরের ৩ অক্টোবরের মধ্যে এ সম্পর্কিত তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য পিবিআইকে (পুলিশ ব্যুরো ইনভেসটিগেশন) নির্দেশ দেওয়া হয়। পিবিআই তদন্ত প্রতিবেদনে ডাঃ জনিকে থানায় এনে আটক রাখার সত্যতা মেলেনি বলে উলে­খ করা হয়। ২০১৮ সালের ২৪ জানুয়ারি তদন্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনা শেষে মহামান্য হাইকোর্ট ডাঃ জনি নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় থানায় সাধারণ ডায়েরী নিয়ে তার তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নেওয়ার জন্য থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এমদাদুল হক শেখ, ফিরোজ হোসেন মোল­া ও উপপরিদর্শক হিমেল হোসেনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা গ্রহণ ও একইসাথে তাদের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করা যেতে পারে বলে এক আদেশে উলে­খ করেন। পরবর্তীতে বিভিন্ন জায়গার আইন সহায়তা চেয়ে না পেয়ে বিশিষ্ট মানবাধিকার কর্মী মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউণ্ডেশনের চেয়ারপার্সন অ্যাড. সুলতানা কামালের সহায়তায় নিখোঁজ জনি’র বাবা শেখ আব্দুর রাশেদ ২০২১ সালের ১৭ আগষ্ট সাতক্ষীরা মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় আসামী সদর থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শেখ এমদাদ হোসেন, ফিরোজ হোসেন মোল­া ও উপপরিদর্শক হিমেলের বিরুদ্ধে জনিকে অপহরণ করে হত্যার পর লাশ গুমের অভিযোগ আনা হয়। মামলার নথিতে হাইকোর্টে দায়েরকৃত রিট পিটিশনের আদেশের জাবেদা নকল, রিট পিটিশন, বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদন ও পিবিআই প্রতিবেদনের ছায়ালিপি জমা দেওয়া হয়। পরে আদালতের নির্দেশনা অনযায়ি ওইসব কাগজপত্রের সত্যায়িত কপি জমা দেওয়ার পর গত ২৯ আগষ্ট মামলার (সিআর-৬৩৬/২১) শুনানী গ্রহণ করা হয়। শুনানী শেষে সাতক্ষীরার মুখ্য বিচারিক হাকিম মোঃ হুমায়ুন কবীর ওই বছরের ১৪ অক্টোবরের মধ্যে পুলিশের অপরাধ ও গোয়েন্দা বিভাগের একজন সহকারি পুলিশ সুপার অথবা তার উর্দ্ধের পদমর্যাদার কর্মকর্তাকে দিয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য সংম্লিষ্ট বিভাগের পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দেন। সে অনুযায়ি মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা পুলিশের অপরাধ ও গোয়েন্দা বিভাগের সাতক্ষীরা শাখার সহকারি পুলিশ সুপার কাজী দাউদ হোসেন তদন্ত শুরু করে বাদি আব্দুর রাশেদ, পুত্রবধু জেসমিন, মানবাধিকার কর্মী ও দীপ্ত টিভি’র সাংবাদিক রঘুনাথ খাঁ, সাংবাদিক কল্যাণ ব্যাণার্জীসহ বেশ কয়েকজনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন।

২০১৬ সালের ১০ আগষ্ট উপপরিদর্শক হিমেলের সঙ্গে নিখোঁজ মোখলেসুরের স্ত্রী জেসমিনের কথোপকথনের অডিও কপি, মেরি কার্ড), ২৬ ডিসেম্বর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফিরোজ হোসেন মোল­ার সঙ্গে জেসমিনের কথোপকথনের মেমরি কার্ড সংগ্রহ করে কণ্ঠস্বর ডিজিটাল ফরহেনসিক বিশ্লেষক দ্বারা পরীক্ষা করিবার অনুমতি প্রার্থনা করেন কাজী দাউদ হোসেন। যদিও ২০১৭ সালের ১৯ জুন বিচার বিভাগীয় তদন্তে ম্যাজিষ্ট্রেট হাবিবুল­াহ মাহমুদের কাছে জেসমিনের সঙ্গে ফিরোজ হোসেন মোল­ার কথোপকথনের বিষয়টি স্বীকার করেন। ২০১৭ সালের ১০ সেপ্টেম্বর পিবিআই তদন্তে উপপরিদর্শক হিমেল হোসেন ও থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফিরোজ হোসেনের সঙ্গে জেসমিনের কথোপকথনের মেমরি কার্ড যাচাই বাছাই কণ্ঠস্বর তাদের বলে স্বীকার করেন।

এ ব্যাপারে মামলার বাদি পক্ষের আইনজীবী অ্যাড. মোসলেম জানান, তদন্ত প্রতিবেদন না এলে বিচার কার্যক্রম দ্রুত করার কোন সূযোগ নেই। মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা গোয়েন্দা অপরাধ ও তদন্ত শাখার সাতক্ষীরা শাখার সহকারি পুলিশ সুপার কাজী দাউদ হোসেন জানান, স্পর্শকাতর মামলা। তাই তদন্তে দেরী হচ্ছে।

এর আগে ২০১৮ সালে উপপরিদর্শক হিমেলের বিরুদ্ধে ৬/১৮, ও সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এমদাদ শেখ ও ফিরোজ হোসেন মোল­ার বিরুদ্ধে যথাক্রমে ১৬/২০ ও ১৭/২০ বিভাগীয় মামলা দায়ের করা হয়।

(আরকে/এএস/ফেব্রুয়ারি ০৮, ২০২৩)

পাঠকের মতামত:

১৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test