E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

‘টেনেটুনে চলছে সংসার’

২০২৩ মার্চ ০৩ ১৫:২৩:০৬
‘টেনেটুনে চলছে সংসার’

অরিত্র কুণ্ডু, ঝিনাইদহ : আব্দুর রাজ্জাক জন্ম থেকে প্রতিবন্ধী। ভিক্ষাবৃত্তি করে জীবন পার করেন। আগে তিনশ থেকে চারশ টাকার ভিক্ষা করতেন। এখন একশ থেকে দেড়শ টাকা আয় হয়। এ দিয়ে তার ৫ সদস্যের সংসার চলে না। তার বাড়ি ঝিনাইদহ সদর উপজেলার নগরবাথান এলাকাায়। ৫০ বছর বয়স হলেও রাজ্জাকের কোন প্রতিবন্ধী ভাতা হয়নি। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘টেনেটুনে চলছে সংসার। অনেক দিন হয়ে গেল সন্তানদের মুখে মাংস তুলে দিতে পারিনি।’ 

বংকিরা গ্রামের আবেদ আলী ৭২ বছর বয়সে ভ্যান চালিয়ে সংসার চালাচ্ছেন। পরিবারের মাত্র দুই সদস্য হলেও তার আয় ইনকাম কমে গেছে। বাজারে গেলে জিনিসপত্রের দামে তার মাথা ঘুরে যায়। শুধু আবেদ আলী বা আব্দুর রাজ্জাকই নয়, সমাজের প্রতিটি মানুষের সংসারে এখন টানাটানি। অনেক পরিবার আছেন গোস্ত এবং মাছের মুখ দেখছেন না।

ঝিনাইদহ শহরের আলী আজগরেরও একই অবস্থা। চাকলাপাড়ায় বসবাস করেন আজগার আলী। ছয় সদস্যের পরিবার। একার আয়ে সংসার চলাতে হিমশিম অবস্থা। বাজার করতে এসে জিনিসপত্রের দাম দেখে তিনিও চিন্তায় পড়ে যান। কি কিনবেন কি না কিনবেন, কিছুই যেন হিসাব মিলাতে পারছেন না। তার সঙ্গে কথা বললে তিনি বলেন, জিনিসপত্রের যে দাম, যা কামাই করি তা দিয়া কিছুই হয় না। বাজারে ১০০ টাকার মাছ কিনলে, বাকি টাকায় চাল, সবজি এসব আর কিনা যায় না। গত এক বছরেও গরুর গোশত কিনতে পারেননি। গরুর গোশত খাওয়া এখন আর আমাদের কপালে নাই।

রবিউল নামে এক রিক্সা চালক বলেন, যেভাবে দিন যাচ্ছে, সামনে অন্ধকার ছাড়া কিছুই দেখি না। সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছি। একদিন কাজ না করলে, পরের দিন খাওয়া জোটে না। যত কষ্ট শুধু আমাদের মতো গরিব মানুষের।

ব্যাপারীপাড়ার বউ বাজার, মডার্নমোড়, উপশহরপাড়া, পাগলাকানাই, হামদহ, আরাপপুর এলাকার কিছু বাজার ঘুরে ক্রেতাদের সাথে কথা বলে এমন চিত্র দেখা গেছে। নিত্যপণ্যের বাজার ক্রমশই লাগামহীন হয়ে পড়েছে। সবকিছুর দাম বাড়লেও বাড়ছে না কেবল মানুষের আয় রোজগার। এ অবস্থায় শহুরে জীবনে টিকে থাকা দায় হয়ে পড়েছে। চাকরি হারিয়ে, আয় না থাকায় অনেকেই শহর ছেড়ে পরিবার পরিজন নিয়ে গ্রামে চলে যাচ্ছেন। শহরের মধ্য আয়ের কর্মজীবী মানুষ এখন আর ভালো নেই। সবাই এখন সবচেয়ে দুঃসময় অতিক্রম করছেন। মানুষের এই দুঃসময়ে শুধু খাদ্যদ্রব্য নয়, জীবন-যাপনে প্রয়োজনীয় যাবতীয় সবকিছুর দামই হু হু করে বাড়ছে। এতে নাভিশ্বাস উঠেছে নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষের। মাসে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা আয় করা ব্যক্তিরাও এখন সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন।

বাসা ভাড়া, সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ, অফিসে যাতায়াতসহ সংসারের অন্যান্য খরচের সঙ্গে যোগ হয়েছে নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিক বাড়তি মূল্য। এদিকে রমজান মাস সমাগত। অথচ বাজার অস্থির হয়ে আছে। যেটা মোটেও কাম্য নয়। বাংলাদেশে একবার কোনো পণ্যের দাম বাড়লে তা আর কমতে চায় না, এটা স্বাভাবিক নিয়মে দাঁড়িয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যবৃদ্ধির অজুহাতে সব জিনিসের দাম হুট করেই বেড়ে যায়। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমলে তখন বাজারে দাম কমানো হয় না। তখন বলা হয় এটা আগের দামে কেনা।

এবার রমজান এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের অজুহাতে যদি পণ্য মূল্য আবারও বাড়ে তবে মানুষ আরও অসহায় হয়ে পড়বে। অনেকের হয়তো দিনে এক বেলা খেয়ে দিনাতিপাত করতে হবে। দেশের একটি অনিয়ম এখন নিয়ম হয়ে গেছে। রমজানের সময় অনেক পন্যের মূল্য বেড়ে যায়। ইতোমধ্যে খেজুর ও ছোলার দাম বেড়ে গেছে। ছোলার দাম কেজিতে ১৫ থেকে ২০ টাকা বেড়ে গেছে। যে ছোলা গত মাসে ৬৫ থেকে ৭০ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে তা এখন ৯০ থেকে ৯৫ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। খেজুর হয়তো রোজায় হাজার টাকা কেজি হবে। রমজান আসলে এসব পণ্যের দাম কেন বাড়ে, কারা বাড়ায় এটা দেখভাল করার কেউ আছে বলে মনে হয় না।

বিষয়টি নিয়ে কনজুমার এ্যসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) ঝিনাইদহ জেলার সভাপতি আমিনুর রহমান টুকু বলেন, যুদ্ধের অজুহাতে সব জিনিসির দাম বৃদ্ধি করা হয়েছে। কিন্তু মুল্যবৃদ্ধির কোন নিয়ন্ত্রন নেই। যে যার মতো ইচ্ছা পন্যের দাম বাড়াচ্ছে। ফলে নির্দিষ্ট আয়ের মানুষ খুব কষ্টে আছে।

তিনি বলেন, যারা ব্যবসা করছেন বা চাকরী করছেন তাদের তো সমস্যা নেই। যত সমস্যা নির্দিষ্ট আয়ের মানুষের। তাদের সংসার আর চলছে না।

তিনি আরও বলেন, বাজারের উপর সরকারের কঠোর নিয়ন্ত্রন থাকা দরকার। নইলে গরীব বা নিম্ন আয়ের মানুষ আরো ক্ষতিগ্রস্থ হবে বলে তিনি মনে করেন।

(একে/এসপি/মার্চ ০৩, ২০২৩)

পাঠকের মতামত:

১৯ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test