E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিশুদের মোবাইল ফোন আসক্তি

হারিয়ে গেছে রূপকথার গল্প, খাওয়া আর ঘুম পাড়াতে ‘কার্টুন-গেমস’

২০২৩ মার্চ ১৭ ১৫:৪১:৪৭
হারিয়ে গেছে রূপকথার গল্প, খাওয়া আর ঘুম পাড়াতে ‘কার্টুন-গেমস’

জে.জাহেদ, চট্টগ্রাম : শিশুদের সিংহভাগ সময় এখন দখল করে নিয়েছে মোবাইল ফোন। কর্মব্যস্ত অভিভাবকেরা বাচ্চাকে শান্ত রাখার জন্য তার হাতে ফোন বা ট্যাব ধরিয়ে দেন। গান, কার্টুন বা ভিডিও গেম চালিয়ে দিয়ে তাকে শান্ত রাখা হয়। এসব ডিভাইসগুলো নিয়মিত ব্যবহারে ক্রমশ যে শিশুরা এগুলোর প্রতি তীব্র আসক্ত হচ্ছে তার খেয়াল নেই।

তথ্য বলছে, বিশ্বে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী প্রতি ৩ জনে ১ জন শিশু। প্রতিদিন সংখ্যাটা প্রায় ১ লাখ ৭৫ হাজার, যার অর্থ প্রতি হাফ সেকেন্ডে একজন শিশু ইন্টারনেট ব্যবহার করছে। গত জুলাই মাসে প্রকাশিত জনশুমারি ও গৃহগণনার প্রাথমিক প্রতিবেদন বলছে, দেশে ৫ থেকে ১৭ বছর বয়সীদের মধ্যে নিজের ব্যবহারের জন্য মোবাইল ফোন রয়েছে ৫৫ দশমিক ৮৯ শতাংশ; যা ওই বয়সী শিশুর মোট সংখ্যার অর্ধেকের বেশি।

ফলে, শিশুরা ভয়াবহ বিপদের দিকে ধাবিত হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, একটি মোবাইল কল যখন দুই মিনিট স্থায়ী হয় তখন তা শিশুদের মস্তিষ্কের হাইপার অ্যাক্টিভিটি সৃষ্টি করে, যা পরবর্তী এক ঘণ্টা পর্যন্ত তাদের মস্তিষ্কে বিরাজ করে। যার ফলে শিশুর স্নায়ু দুর্বল হয়ে পড়ে, মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়, রক্তের চাপ বাড়ে, এমনকি নিয়মিত ঘুমের ব্যাঘাতও ঘটায়।

শিশু-কিশোরদের স্মার্টফোন আসক্তি নিয়ে অভিভাবকদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। বেশিরভাগ অভিভাবকই বলছেন প্রথম দিকে খাবার খাওয়াতে বা কান্না থামাতে সন্তানকে স্মার্টফোন দিলেও এখন আসক্তি হয়ে গেছে। মোবাইল না দিলে খেতে চায় না তারা।

চকবাজার এলাকার মাহমুদুল করিম বলেন, এখন মোবাইল না দিলে শিশুরা খাবার মুখে দেয় না। একই অভিযোগ আগ্রাবাদের আইরিন আক্তারের। তিনি বলছেন, খেলাধুলার জায়গার অভাবে আরও বেশি ঘরবন্দি হয়ে পড়ছে শিশুরা। এতে মোবাইল আসক্তির মাত্রা বাড়ছে।

কোতোয়ালি এলাকার মাহবুব আলম নামে এক অভিভাবক বলেন, 'ওদের সকালটা শুরু হয় মোবাইল দিয়ে। আমি এটা কোন ভাবেই কন্ট্রোল করতে পারছি না। এক সময় রূপকথার গল্প শুনিয়ে শিশুদের খাওয়ানো কিংবা ঘুম পাড়াতো হতো। কিন্তু এখন মোবাইলে কার্টুন কিংবা গেমস দেখিয়ে।

চট্টগ্রাম ইবনে সিনা হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. তৈয়ব আলী হ্যাপী বলেন, একটি শিশু যদি চার ঘণ্টা মোবাইল দেখে পড়তে বসে তবে কিন্তু সে পড়তে পারবে না কারণ তার চোখ ক্লান্ত হয়ে গেছে। একই ভাবে ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ১৬ বছরের কম বয়সী শিশুদের মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে দেয়া যাবে না। মোবাইল ফোনের বিকিরণের কারণে অন্ধত্বসহ চোখে ভয়াবহ সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে শিশুদের।

চট্টগ্রাম মেডিকেলে চোখের সমস্যা নিয়ে আসা রোগীদের ৩০ শতাংশ শিশু। অতিমাত্রায় মোবাইলের প্রতি আসক্তিতে মাথা ব্যথা ও পানি পড়াসহ চোখে দেখা দিচ্ছে নানা উপসর্গ। চট্টগ্রাম মেডিকেল থিসিস পার্টের এম. এস রেসিডেন্স ডা. অনিন্দাতা চৌধুরী বলেন, 'আমরা যে চোখের পাতা ফেলি, এই পাতা ফেলার মধ্যেও কিন্তু একটা উপকার হয়। এতে আমাদের চোখের উপরিভাগটা ভিজে থাকে এবং শুকনা থাকে না।'

চক্ষু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাদকের চেয়ে ক্ষতিকর মোবাইল নির্ভরতার কারণে শিশুরা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে বাস্তবিক জগত থেকে। চমেক শিশু চক্ষু রোগ বিশেষজ্ঞ সহকারি অধ্যাপক ডা. উৎপল সেন বলেন, 'খাওয়াটা সে সঠিকভাবে খাচ্ছে কিন্তু খাওয়া হজম হওয়ার জন্য যে পাচক রসটা দরকার সেটা অনেক কম হচ্ছে। ফলে বাচ্চাগুলো অপুষ্টিতে ভোগে।

(জেজে/এসপি/মার্চ ১৭, ২০২৩)

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test