E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

কালের বিবর্তনে গৌরীপুর থেকে হারিয়ে যাচ্ছে ইন্দারা

২০২৩ মার্চ ১৯ ১৭:১০:৩৯
কালের বিবর্তনে গৌরীপুর থেকে হারিয়ে যাচ্ছে ইন্দারা

গৌরীপুর প্রতিনিধি : যুগে যুগে মানুষ সুপেয় ও বিশুদ্ধ পানি পানের জন্য নানা রকম উৎসের সন্ধান করেছে। গত শতাব্দীতেএই উৎসের অন্যতমছিলো ইন্দারা বা কুয়া। সকাল-সন্ধ্যায় গ্রাম বাংলার মা-বোনের কলসি কাঁকে নিয়ে ইন্দারা থেকে পানি নিয়ে যেতো। টিউবওয়েল, গভীর নলকূপ, বিদ্যুৎচালিত মটর ইত্যাদি ব্যবহার করে মানুষ খাবার পানি সংগ্রহ করায় কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামীণ এ ঐতিহ্যবাহী ইন্দারা। সেকারণে আর চোখে পড়ে না কলসি কাঁকে পানি আনার দৃশ্য।

ময়মনসিংহের গৌরীপুরের মানুষযখন ডোবা ও নদীর অপরিশুদ্ধ পানি পান করতো তখন পেটের পীড়াসহ নানান রোগ বালাই হতো।তখনকার সময় বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে স্বচ্ছ পানির ব্যবস্থা করতেই ইন্দারা বা কুয়ার আবিস্কার করেন।তখন বৃটিশ সরকার ও জমিদাররা এবং ধনাঢ্য বাড়িতে স্থাপিত হয় ইন্দারা। প্রাচীন বাড়িগুলোতে এখনো দেখা যায় মজে যাওয়া সেইসব ইন্দারা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, গৌরীপুর রেলওয়ে জংশন এলাকার চকপাড়া মহল্লায় একটি বিশাল ইন্দারা ছিলো। যা নষ্ট হওয়ায় পুরোনো টিন দিয়ে আবদ্ধ করে দেয়া হয়েছে। গৌরীপুর সরকারি কলেজ ব্যবহৃত তৎকালীন জমিদার সুরেন্দ্র কুমার লাহিড়ী নির্মিত ইন্দারাটা বর্তমানে ময়লা আবর্জনার বাগাড়ে পরিণত হয়েছে।

জানা গেছে, ১০-১৫ ফুট গোল গর্ত করে প্রায় ৫০-৬০ ফুট নিচ পর্যন্ত মাটি খুঁড়ে কূপ বা কুয়া বা ইন্দারা তৈরি করা হত। মাটির নিচের ঝর্না ছিল এই ইন্দারার পানির প্রধান উৎস। পাতি কূপ ও ইন্দারার মধ্যে পার্থক্য হল,ইন্দারার নিচ থেকে উপর পর্যন্ত ইট বা রিং(সিমেন্ট বালি দিয়ে তৈরি গোল কাঠামো) দিয়ে বাঁধাই করা হত আর পাতি কূপ বাঁধাই করা হত না।অনেক বাড়িতে ইন্দারার উপরে ঢাকনা লাগানো থাকতো একটি লোহার চাকা। এই মাধ্যমে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ইন্দারা দিয়ে পানি উঠাতো লোকজন আবার অনেকেই ইন্দারা থেকে পানি উত্তোলনের জন্য ব্যবহার করতো কপিকল। একটি ইন্দারা তৈরিতে অনেক অর্থ ও জায়গার প্রয়োজন হতো। খুব বেশিদিন আগের কথা নয় নব্বইয়ের (৯০) দশক পর্যন্ত অনেক এলাকার মানুষ তাদের সুপেয় পানির চাহিদা পূরণ করত গভীর ইন্দারা থেকে। তৃষ্ণা নিবারণসহ রান্না-বান্না, হরেক রকমের খাদ্য তৈরীর জন্য বিশেষ প্রয়োজন ছিলো এই ইন্দারার স্বচ্ছ পানি।

আধুনিকতার ছোঁয়ায় জীবনমান উন্নত হলেওহারিয়ে গেছে প্রকৃতির সান্নিধ্য। পানি বিশুদ্ধ করার জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে ফিল্টার কিংবা পানিতে ক্লোরিন ট্যাবলেট বা ব্লিচিং পাউডার, পটাশ বা ফিটকিরি ও আয়োডিনের মিশ্রণ অথবা বিশুদ্ধ করছে ফুটিয়ে।

গৌরীপুর উন্নয়ন সংগ্রাম পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম বলেন, আমাদের এই ইন্দারাগুলো তৎকালীন বিশুদ্ধ পানি ব্যবস্থার ঐতিহ্যের বাহক। কালের বিবর্তনে আজ তা হারিয়ে যাচ্ছে। যে দুএকটা আছে তা সংরক্ষণ করে নতুন প্রজন্মের কাছে হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য তোলে ধরতে হবে।

(এস/এসপি/মার্চ ১৯, ২০২৩)

পাঠকের মতামত:

২৪ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test