E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিবচরে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ১৯, তদন্ত কমিটি গঠন

২০২৩ মার্চ ২০ ০১:০০:৫৯
শিবচরে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ১৯, তদন্ত কমিটি গঠন

মাদারীপুর প্রতিনিধি : মাদারীপুর শিবচর উপজেলার কুতুবপুরের পদ্মাসেতুর এক্সপ্রেসওয়েতে রবিবার সকালে চাকা ব্লাস্ট হয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ঢাকাগামী ইমাদ পরিবহণের একটি যাত্রীবাহী বাস নিচে পড়ে ১৯ জন যাত্রী মারা গেছেন। এতে আরো ২৫ জন যাত্রী আহত হয়েছেন। এই ঘটনায় বিকেলে ৪ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

পুলিশ, স্থানীয়, নিহতের পরিবার ও ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা গেছে, রবিবার সকাল ৫ টার দিকে খুলনার সোনাঢাঙ্গা বাস টারমিনাল থেকে ৯ জন যাত্রী নিয়ে ইমাদ পরিবহণের যাত্রিবাহি একটি বাস ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসে।

আসার পথে গোপালগঞ্জসহ বিভিন্ন কাউন্ডার থেকে যাত্রি নিয়ে বাসটি দ্রুতগতিতে ভাঙ্গা-মাওয়া এক্সপ্রেসহাইওয়ে দিয়ে পদ্মাসেতুর দিকে যাওয়ার পথে শিবচরের কুতুবপুর নামক স্থানে পৌছালে গাড়ির বাম পাশের চাকা বøাষ্ট হয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মহাসড়ক থেকে ছিটকে প্রায় ৫০ মিটার নিচে সারর্ভিস লেনে ছিটকে পড়ে। এতে বাসটি সামনের অংশ সম্পূর্ণ দুমড়ে-মুচড়ে যায়। এ সময় বাসের মধ্যে থাকা ১৭ জন যাত্রী ঘটনাস্থলে মারা যান। এছাড়াও আহত হয় আরো ২৫ জন যাত্রী। বিকট শব্দে স্থানীয়রা ছুটে আসেন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে হাইওয়ে থানা পুলিশ, শিবচর থানা পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মিরা ঘটনাস্থলে গিয়ে হতাহতদের উদ্ধার করে শিবচর উপজেলা হাসপাতালসহ স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২ জন যাত্রী মারা যান। এতে করে নিহতের সংখ্যা দাড়ায় ১৯ জন। তবে ঢাকা মেডিকেলে দুই নিহতের নাম বাদে বাকি ১৭ জনের পরিচয় পাওয়া গেছে।

নিহতরা হলেন গোপালগঞ্জ গোপিনাথপুর এলাকার তৈয়ব আলীর ছেলে হেদায়েত মিয়া, বনগ্রাম এলাকার শামসুল শেখের ছেলে মোসতাক আহম্মেদ, সদর উপজেলার আলী শেখের ছেলে সজীব শেখ, পাচুরিয়া এলাকার মাসুদ হোসেনের মেয়ে সুইটি আক্তার, টুঙ্গিপাড়ার কাঞ্চন শেখের ছেলে করিম শেখ, সদর উপজেলার আবু হেনা মোস্তফার মেয়ে আফসানা মিমি, মোকসেদপুর এলাকার আমজেদ আলীর ছেলে মাসুদ আলী, খুলনা সোনাডাঙা এলাকার শেখ মোহাম্মদ আলীর ছেলে আব্দুল্লাহ আল মামুন, খুলনা সাউথ মেন্টাল রোড এলাকার চিত্ত রঞ্জন ঘোষের ছেলে চিন্ময় প্রসুন ঘোষ, ডুমুরিয়া এলাকার পরিমল সাদু খায়ের ছেলে মহাদেব কুমার সাদু খা, আমতলা এলাকার শাহজাহান মোল্লার ছেলে আশফাকুর জাহান লিংকন, বাগেরহাট জেলার শান্তি রঞ্জন মজুমদারের ছেলে অনাদি মজুমদার, ফরিদপুরের সৈয়দ মুরাদ আলীর ছেলে মো. ইসমাইল, নড়াইল লোহাগড়া এলাকার বকু শিকদারের ছেলে ফরহাদ শিকদার, বাসের চালক ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আলী আকবরের ছেলে জাহিদ হাসান ও হেল্পার মিরাজ।

ভাগ্যক্রমে বেচে থাকা গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানি থানার কৌশরী গ্রামের আজিজ শিকদারের ছেলে উজ্জল শিকদার বলেন, আমি দুর্ঘটনার সময় বাসের মধ্যে ঘুমিয়ে ছিলাম। হঠাৎ বিকট শব্দে আর ঝাকুনিতে আমার ঘুম ভেঙ্গে যায়। দেখি আমার পাশে ৮টি লাশ পড়ে আছে। এসময় কয়েকজন লোক এসে আমাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন।

শিবচর ফায়ার সার্ভিসের গ্রুপ লিডার তরুন-অর-রশিদ খান বলেন, সংবাদ পেয়ে আমরা দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে উদ্ধার কাজ শুরু করি। এই ঘটনায় ১৯ জন মারা গেছে। ১৭ জন শিবচরে আর ঢাকাতে ২ জন মারা গেছেন।

তিনি আরো বলেন, গাড়ির বামপাশের চাকা ব্লাস্ট হয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। ধারণা করা হচ্ছে গাড়িটি দ্রুতগতিতে চালাছিলেন।


শিবচর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রাজিবুল ইসলাম বলেন, আমরা এখানে ১৭ জন মারা গেছে বলে নিশ্চিত হয়েছি। বাকী দুজন ঢাকাতে মারা গেছে। ১৭ জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তাদের মরদেহ পরিবারের সদস্যদের কাজে হস্থান্তর করা হচ্ছে। একই সাথে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দাফনের জন্য প্রতিটি পরিবারকে ২৫ হাজার টাকা করে দেয়া হচ্ছে।


মাদারীপুর পুলিশ সুপার মো. মাসুদ আলম বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে সকালে হালকা বৃষ্টি হবার জন্য রাস্তা পিচ্ছিল ছিলো। দ্রুতগতিতে গাড়ি চালানোর জন্য চাকা ব্লাষ্ট হয়ে এই দুর্ঘটনা হতে পারে।

মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুন বলেন, “বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহতদের দাফনের জন্য প্রতিটি পরিবারকে ২৫ হাজার টাকা করে এবং আহত প্রতিজনকে চিকিৎসার সহযোগিতার জন্য ৫ হাজার টাকা করে দেয়া হচ্ছে।

(এএসএ/এএস/মার্চ ২০, ২০২৩)

পাঠকের মতামত:

২৫ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test