E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

কর্মকর্তাদের সম্পৃক্ততার অভিযোগ, আদালতে মামলা

পানি উন্নয়ন বোর্ডর শত শত কোটি টাকার কাজ হাতিয়ে নিয়েছে একটি প্রতারক চক্র

২০২৩ মার্চ ২৪ ১৭:৩৫:৪৫
পানি উন্নয়ন বোর্ডর শত শত কোটি টাকার কাজ হাতিয়ে নিয়েছে একটি প্রতারক চক্র

আসাদ সবুজ, বরগুনা : বরগুনা ও পটুয়াখালীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় জাল-জালিয়াতি ও প্রতারণার মাধ্যমে পানি উন্নয়ন বোর্ডর শত শত কোটি টাকার কাজ হাতিয়ে নিয়েছে একটি প্রতারক চক্র। আর এ কাজের সাথে সম্পৃক্ততা রয়েছে খোদ পানি উন্নয়ন বোর্ডের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা। এমন অভিযোগে বরগুনার আদালতে মামলা করেছেন ভুক্তভোগী এক ঠিকাদার।  এসব ঘটনা জানিয়ে বৃহস্পতিবার বেলা ১১ টার সময় বরগুনা সাংবাদিক ইউনিয়নে সংবাদ সম্মেলন করেছেন ওই ঠিকাদার।

সংবাদ সম্মেলনে মামলার বাদী ঠিকাদার মাইন উদ্দিন আসাদ জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ড বরগুনা ও পটুয়াখালী অঞ্চলের সিংহভাগ বড় কাজ জালজালিয়াতির মাধ্যমে বাগিয়ে নিচ্ছে পটুয়াখালী জেলার একটি প্রতারক চক্র। এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড বরগুনার সদ্য বদলি হওয়া নির্বাহী প্রকৌশলী জনাব মোঃ নূরুল ইসলাম পান্নার কাছে বারবার অভিযোগ করেও তিনি বা তারা কোন প্রতিকার পাননি। উপরন্তু প্রভাবশালী ওই প্রতারকচক্রের রোষানলে পরে মিথ্যে মামলার শিকার হয়েছেন তিনিসহ একাধিক ঠিকাদার। ভয়ভীতি ও হুমকীর সম্মুখীন হচ্ছেন প্রতিনিয়ত।

ভুক্তভোগী ঠিকাদার মাঈন উদ্দিন আসাদ আরো জানান, পটুয়াখালী জেলার মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান হিরু (৪২), নূরে এলাহী আলম ইভান (২৫), মোঃ মিজানুর আলম ওরফে স্বপন মৃধা (৫৫), মোঃ রিয়াজ উদ্দিনসহ (৫৫) তাদের বেশ কয়েকজন সহযোগী এ প্রতারক চক্রের মূল হোতা। তাদের নিয়ন্ত্রনাধিন ৫টি লাইসেন্স ‘মেসার্স আবুল কালাম আজাদ’, ‘এমডি মিজানুর আলম’, মেসার্স মহি উদ্দিন আহম্মেদ, (৪) মেসার্স রিয়াজ উদ্দিন এবং (৫) মেসার্স আল মামুন এন্টারপ্রাইজ-এর অনুকূলে বরগুনা ও পটুয়াখালী অঞ্চলের পানি উন্নয়নবোর্ডের সিংহভাগ কাজ জালজালিয়াতির মাধ্যমে হাতিয়ে নিচ্ছে। এতে যেমন রাষ্ট্রের শত শত কোটি টাকা লোপাট হচ্ছে তেমনি দিন দিন ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে স্থানীয় প্রকৃত ঠিকাদারগন। এসব বিষয়ে তারা পানি উন্নয়ন বোর্ড বরগুনার নির্বাহী প্রকৌশলী নূরুল ইসলাম পান্নাসহ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েও কোন প্রতিকার পাননি।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে মাঈন উদ্দিন আসাদ উল্লেখ করেন, বর্তমান সময়ে ইজিপি সিস্টেমে দরপত্র আহবান করা হয়। এই সিস্টেমে দরপত্রে অংশগ্রহণকারীদের যাচাই বাছাই-এর ক্ষেত্রে একটি অন্যতম যোগ্যতা হিসেবে বিবেচিত হয় পূর্ববর্তী কাজের অভিজ্ঞতার সার্টিফিকেট। এই প্রক্রিয়ায় যার যতবেশি কাজের অভিজ্ঞতার সার্টিফিকেট রয়েছে তিনি তত বেশি যোগ্য হিসেবে কাজ পাওয়ার ক্ষেত্রে এগিয়ে থাকেন। এই চক্রটি নানা জালজালিয়াতির মাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরে অসাধু কর্মকর্তাদের ‘ম্যানেজ’ করে ভুয়া অভিজ্ঞতার সনদ বানিয়ে বড় বড় কাজ হাতিয়ে নিচ্ছে। লিখিত বক্তব্যের সাথে মাইন উদ্দিন আসাদ ওই প্রতারক চক্রের দাখিলকৃত বেশ কিছু ভুয়া কাজের সনদ সাংবাদিকদের হাতে দেন। যেসব ভুয়া সদনের মাধ্যমে ওই চক্রটি পানি উন্নয়ন কোর্ডের শত শত কোটি টাকার কাজ হাতিয়ে নিয়েছেন।

মাইন উদ্দিন আসাদ তাঁর লিখিত বক্তব্যে আরও উল্লেখ করেন, শুধু ভুয়া সদনই নয়, বিভিন্ন সময়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বিভিন্ন কর্মকর্তার স্বাক্ষর জালসহ তাদের নামে ভুয়া ইমেইল আইডি খুলে তা ব্যবহার করেও প্রতারণার মাধ্যমে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি করে আসছে এ চক্রটি।

সংবাদ সম্মেলনে মাইন উদ্দিন আসাদ আরও জানান, প্রভাবশালী এ প্রতারক চক্রের প্রতিটি সদস্যই এখন আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ। শত কোটি টাকার মালিক। প্রত্যেকেই চড়েন কোটি টাকার দামি গাড়িতে। দেশ বিদেশের নামি দামি রিসোর্টে ঘুরে বেড়ান তারা সপরিবারে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই প্রতারকচক্রটি শুধু বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ঠিকাদারি কাজই নিয়ন্ত্রণ করেন না, তাঁরা অবৈধ টাকার প্রভাব খাটিয়ে নিয়ন্ত্রণ করেন পটুয়াখালী জেলার রাজনীতিও। তাদের অবৈধ টাকার প্রভাব এবং নানা কুচক্রান্তের কাছে হার মানতে বাধ্য হন সেখানকার ত্যাগী রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দও। এ চক্রটির অন্যতম হোতা স্বপন মৃধা পটুয়াখালী পৌরসভার সকল ঠিকাদারি কাজ নিয়ন্ত্রণ করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। রিয়াজ মৃধা পটুয়াখালী বাস মালিক সমিতির সভাপতি। তার সিন্ডিকেট বাণিজ্যের কারণে পটুয়াখালী জেলায় দূর পাল্লার কোন পরিবহন ঢুকতে পারে না। এতে পদ্মাসেতুর সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছে পটুয়াখালী জেলার বিভিন্ন এলাকার হাজার হাজার সাধারণ মানুষ।

মাইন উদ্দিন আসাদ জানান, রাষ্ট্রিয় অর্থের নজিরবিহিন এ হরিলুট ঠ্যাকাতে চিহ্নিত এ প্রতারক চক্রের পাঁচ সদস্যসহ তাদের সহায়তাকারী পানি উন্নয়ন বোর্ড, বরগুনার দুর্নীতিবাজ উপসহকারী প্রকৌশলী (এসও) মোঃ শাহজালালের দুর্নীতির বিরুদ্ধে তিনি বরগুনার চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করেছেন। আদালত এ অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা যাচাইয়ের জন্য বরগুনার ডিবি পুলিশকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন বলেও জানান তিনি।

এ বিষয়ে ঠিকাদার মোঃ মিজানুর আলম ওরফে স্বপন মৃধা ও ঠিকাদার নুর এলাহী আলম ইভান একাধিক বার ফোনের মাধ্যমে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তারা ফোন রিসিভ করেননি।

অপর ঠিকাদার মোঃ রিয়াজ উদ্দিনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যারা আমার বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করেছেন, তাদেরকেও আমি চিনি না, তারাও আমাকে চেনে না, আমার কোন কাজ বরগুনা কিংবা পটুয়াখালীতে চলমান নেই। বর্তমানে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সাথে জড়িত আছি, আপাতত সেখানেই সময় দিচ্ছি। মূলত আমাকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্যই অফিস কিংবা কোন ঠিকাদার এদের দিয়ে সংবাদ সম্মেলন করিয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পানি উন্নয়ন বোর্ড বরগুনার সদ্য বদলীকৃত নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ নূরুল ইসলাম পান্নাকে একাধিক বার কল করলে তিনি কল রিসিভ করেননি।

(এএস/এসপি/মার্চ ২৪, ২০২৩)

পাঠকের মতামত:

১৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test