E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

উদ্বিগ্ন পরিবেশবাদীরা, মানতে নারাজ কেইপিজেড

পুড়ছে কর্ণফুলী-আনোয়ারার ‘ফুসফুস’, ছাই হচ্ছে অরণ্য

২০২৩ মার্চ ২৬ ১৬:৩৬:৩৯
পুড়ছে কর্ণফুলী-আনোয়ারার ‘ফুসফুস’, ছাই হচ্ছে অরণ্য

জে. জাহেদ, চট্টগ্রাম : প্রথমে পাহাড় কেটে সাবাড় হলেও এবার কিন্তু বিধ্বংসী আগুনে ছাই হচ্ছে কেইপিজেডের অরণ্য। মানুষের অক্সিজেন সরবরাহ হয় অরণ্য থেকে। কেইপিজেডের জঙ্গল নানা প্রজাতির গাছগাছালি আর প্রাণির আভাসস্থল। কিন্তু কর্ণফুলী আনোয়ারার ‘ফুসফুস’ আজ বিপন্ন। আগুনের লেলিহান শিখা ক্রমশ গ্রাস করছে ওই চিরহরিৎ বনভূমিকে।

কিছুদিন আগেও কেইপিজেডের পাহাড় কেটে সাবাড় করার অভিযোগে পরিবেশ ও ভ্রাম্যমান আদালত অভিযান চালিয়ে বন্ধ করেছিল পাহাড় কাটা। কিন্তু এবার কর্ণফুলী-আনোয়ারার ফুসফুস খ্যাত কেইপিজেডের পাহাড়ি বনের অভ্যন্তরে বোটানিক্যাল গার্ডেন সংলগ্ন এলাকায় বনে আগুন জ্বলছে, পুড়ছে চারা গাছ, নষ্ট হচ্ছে বড় গাছ, বিপন্ন হচ্ছে পাখিসহ উপকারী কীটপতঙ্গ।

কয়েক বছর ধরেই চৈত্র মাসে কেইপিজেডের ভেতর বনের বিভিন্ন স্থানে আগুন দেয় বনখেকোরা। পাহাড় নিধন করে পাহাড় খেকোরা। এ সুযোগে নিরিবিলি পরিবেশ থাকায় বনের মূল্যবান বৃক্ষও পাচার করার অভিযোগ রয়েছে। রবিবার সরেজমিনে গেলে বড়উঠানের স্থানীয় লোকজন ও বন বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে উঠে আসে এমন তথ্য।

জানা যায়, দেয়াঙ পাহাড় বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বিভাগের একটি ঐতিহাসিক পাহাড়। এটি চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ তীরবর্তী বর্তমান আনোয়ারা-কর্ণফুলী বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে অবস্থিত। এই অঞ্চলেই আরাকানিদের চাটিগাঁ দুর্গ ও দেয়াঙ কারাগার অবস্থিত ছিল। এ পাহাড়ে রয়েছে বিস্তীর্ণ তৃণভূমি। এসব বৃক্ষ সংরক্ষণ ও দেখার দায়িত্ব বনবিভাগের। কিন্তু বন বাগানে বার বার আগুন দিচ্ছে বনখেকোরা। অসহায় বন বিভাগ।

ফ্রি স্টাইলে পাহাড় কেটে কেইপিজেড কর্তৃপক্ষ স্থাপন করছে একের পর এক কারখানা। এতে ধ্বংস হচ্ছে প্রাকৃতিক ভারসাম্য। আর একের পর এক পাহাড় কাটায় বণ্যপ্রাণীরা হারিয়ে ফেলছে আবাসস্থল। এতে প্রায় বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে দেয়াং পাহাড়ের অপার সৌন্দর্য।

চট্টগ্রাম বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা মোঃ খোরশেদ আলম বলেন, ‘বন বিভাগের অধীনে থাকা বন পুড়িয়ে দেওয়ার সাথে অবশ্যই বনখেকোরা জড়িত। এ জন্য প্রতিবছর বন আইনে মামলা করা হয়। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।’

স্থানীয়রা জানান, কেইপিজেডের সমতলের পাহাড়গুলো সবুজ ঘাসে বেষ্টিত। এ পাহাড়ে রয়েছে বন্যপ্রাণি। রয়েছে হাতি ও বানরসহ নানা প্রাণি। এখন বনের জমিতে থাকা গাছগাছালি আগুনে পুড়ে উজাড় করা হচ্ছে। এতে সংকট দেখা দেয় গো খাদ্যের। হাতির আবাস নষ্ট হচ্ছে বলে লোকালয়ে হামলা করছে কেইপিজেডে থাকা হাতির দল। বিচরণভূমিগুলো এখন পুড়িয়ে মরুভূমিতে পরিণত করা হচ্ছে।

এতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশন বিএইচআরএফ-এর মহাসচিব বিশিষ্ট কলামিস্ট পরিবেশবাদী আইনজীবি জিয়া হাবীব আহসানও। তিনি বলেছেন, ‘বৈশ্বিক জলবায়ু সঙ্কটের মধ্যে আমরা অক্সিজেন ও জীববৈচিত্রের অন্যতম প্রধান উৎসের এমন ক্ষতি মেনে নিতে পারি না। চট্টগ্রাম তথা কর্ণফুলী আনোয়ারার মানুষকে অবশ্যই কেপিজেডের বন রক্ষা করতে হবে। তারচেয়ে বেশি রক্ষার দায়িত্ব নিতে হবে কোরিয়ান এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোন কতৃপক্ষকে।’

এ বিষয়ে পটিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা নুরে আলম হাফিজ বলেন, ‘জনবল সংকটের কারণে কেইপিজেড বনে নিয়মিত টহল করা সম্ভব হয় না। তবে যেখানে গাছ পুড়ে গেছে সেখানে পুনরায় গাছ লাগানো হবে। তার মানে রিপেয়ারিং করতে হবে। তবে কারা আগুন দেয় খোঁজ খবর নিব। অসাধু মানুষেরা বনের নিয়ম-কানুন মানতে চায় না।’

বড়উঠান এলাকার স্থায়ী বাসিন্দারা জানিয়েছেন, কেইপিজেড পরিকল্পিতভাবেই পুড়িয়ে দিচ্ছে বন। এমনটাই দাবি করেছেন তাঁরা। স্যাটেলাইট দৃশ্য ও গুগল ম্যাচে দেখা যায়, এক সময় কেইপিজেড এর একটি বিরাট অংশ সবুজ চাদরে আচ্ছন্ন ছিল। বর্তমানে যা হিংস্র থাবায় গ্রাস হয়ে যাচ্ছে। অথচ বন উজাড় করার সাথে সম্পৃক্ত নয় কেইপিজেড এমনটাই দাবি করে কেইপিজেডের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) মুশফিকুর রহমান।

তিনি বলেন, ‘আমরা কেন আগুন লাগাবো। কেউ হয়তো সিগারেট খেয়ে ফেলেছে। আমরা বোটানিক্যাল গার্ডেন এলাকায় বন পরিষ্কার করছি। যেখানে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষককের তত্বাবধানে বিভিন্ন গাছ লাগানো হবে।’

চট্টগ্রাম জেলা পরিবেশ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. ফেরদৌস আনোয়ার বলেন, ‘বনে আগুন লাগিয়ে বন সাবাড় করলে বিষয়টি দেখবেন বনবিভাগ। পরিবেশে সাধারণত পাহাড় কাটার বিষয়টি দেখে থাকেন।’

চট্টগ্রাম বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ-আল-মামুন বলেন, ‘কেইপিজেডের ভেতর সংরক্ষিত বন থাকলে সেটা দেখার দায়িত্ব বন বিভাগের তা সঠিক। আমি বিষয়টি খোঁজ খবর নিয়ে অবশ্যই ব্যবস্থা নেব।

(জেজে/এসপি/মার্চ ২৬, ২০২৩)

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test