E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

রূপপুর প্রকল্পের গাড়িচালক সম্রাট হত্যা পরিকল্পিত

আদালতে মমিনের স্বীকোরক্তিমূলক জবানবন্দি

২০২৩ মার্চ ২৯ ১৮:০০:১০
আদালতে মমিনের স্বীকোরক্তিমূলক জবানবন্দি

ঈশ্বরদী প্রতিনিধি : রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান নিকিমথ কোম্পানির গাড়িচালক সম্রাট খান হত্যা পূর্ব পরিকল্পিত বলে জানিয়েছেন ঈশ্বরদী থানার অফিসার ইনচার্জ অরবিন্দ সরকার। সম্রাট ছবি-ভিডিও ফ্লাশ করবে বলে বারংবার ব্লাকমেইল করে বন্ধু মমিনের স্ত্রী সীমাকে অসামাজিক কাজে বাধ্য করায় স্বামী-স্ত্রী উভয়ে হত্যার পরিকল্পনা করে। একদিনের রিমান্ড শেষে বুধবার ( ২৯ মার্চ) আব্দুল মমিন পাবনার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-২ এ শামসুজ্জামান এর আদালতে স্বীকরোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। জবানবন্দিতে মমিন স্বামী ও স্ত্রী পরিকল্পনা করে সম্রাটকে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন।

এর আগে মঙ্গলবার (২৮ মার্চ) বিকেলে মমিনের স্ত্রী নারী সীমা খাতুনও আদালতে একইভাবে স্বীকরোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে। আদালতে স্বামী ও স্ত্রীর স্বীকরোক্তিমূলক জবানবন্দি এবং হত্যায় ব্যবহৃত আলামত উদ্ধারের মধ্য দিয়ে সম্রাট খান হত্যারহস্য উদ্ঘাটন করতে সক্ষম হয়েছে ঈশ^রদী থানা পুলিশ।

ঈশ্বরদী থানার ওসি অরবিন্দ সরকার বুধবার জানান, আব্দুল মমিন ও তার স্ত্রী সীমা পূর্ব পরিকল্পনা করেই গাড়িচালক সম্রাট খান হত্যা করে। সম্রাটের পরিবারের দাবিকৃত টাকা পাওনার বিষয়টি সত্য নয় জানিয়ে তিনি বলেন, মমিনের সাথে বন্ধুত্বের সূত্র ধরে পারিবারিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে এবং উভয় পরিবারের বাড়িতে যাতায়াত ও খাওয়া-দাওয়া চলতো। এরই এক পর্যায়ে সম্রাট গোপনে সীমাকে কিছু খাইয়ে কৌশলে অচেতন করে। অচেতন অবস্থায় সীমাকে ধর্ষণের সাথে সাথে নগ্ন ছবি ও ভিডিও ধারণ করে সম্রাট। সেই ভিডিও প্রকাশের ভয় দেখিয়ে সম্রাট বার বার সীমাকে ডাকতো এবং অসামাজিক কাজে লিপ্ত হতে বাধ্য করতো। সীমার স্বামী আব্দুল মমিনও বিষযটি জানতো। যেকারণে সম্রাটের ওপর সীমা ও স্বামী মমিন চরম ক্ষুদ্ধ ছিলো। উভয়েই সম্রাটের হাত থেকে নিস্কৃতির জন্য প্রতিশোধ পরায়ণ হয়ে সুযোগ খুঁজতে থাকে। গত ২৩ মার্চ রাতে সম্রাটকে পরিকল্পনা করেই বাঁশেরবাদায় মমিনের বাড়িতে ডেকে আনা হয়। রাত নয়টার দিকে খাওয়া-দাওয়া শেষে সম্রাট মাথা ব্যাথা কথা বলে বিছানায় শুয়ে পড়ে।

সীমার সাথে অসামাজিক কাজের জন্য কৌশলে মমিনকে ওষুধ কিনে আনতে বলে। মমিন দোকানে না যেয়ে বাইরে ঘাপটি মেরে অপেক্ষা করতে থাকে। মমিনের অনুপস্থিতির সুযোগে সম্রাট জাপটে ধরে বন্ধুর স্ত্রী সীমাকে। একপর্য়ায়ে সীমা ছুটে বাইরে বের হয়ে আসে। বাইরে অপেক্ষামান মমিন তার স্ত্রী সীমাকে ঘরে ঢুকে অভিনয় করতে বলে। এসময় ঘরে টিভি চলছিল, বাতি নেভানো এবং দরজা খোলা ছিলো। সুযোগ বুঝে মমিন রান্নাঘরে লুকিয়ে রাখা লোহার হাতুড়ি এনে সম্রাটের মাথায় আঘাত করে। পরে স্বামী-স্ত্রী উভয়ে মিলে সম্রাটকে আঘাত এবং একপর্যায়ে নাকে-মূখে কাপড় পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে মৃত্যু নিশ্চিত করে। পরে সম্রাটের মরদেহ বস্তায় ভরে প্রাডো গাড়িতে করে মমিন নিয়ে যায়।

প্রসঙ্গত: ২৩ মার্চ নিখোঁজের দুই দিন পর শনিবার (২৫ মার্চ) সকালে কুষ্টিয়ার শিলাইদহ ঘাট এলাকা থেকে চালক সম্রাট খানের লাশসহ নিকিমথ কোম্পানির ব্যবহৃত প্রাডো গাড়িটি উদ্ধার হয়। নিহত গাড়িচালক সম্রাট হোসেন (২৯) ঈশ্বরদী পৌর শহরের মধ্য অরণকোলা (আলহাজ ক্যাম্প) এলাকার আবু বক্কার সিদ্দিকের ছেলে। এ ঘটনায় ২৫ মার্চ রাতে নিহতের বাবা আবু বক্কর বাদী হয়ে বন্ধু আব্দুল মমিনকে প্রধান এবং তার স্ত্রী সীমা খাতুনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ৩-৪ জনকে আসামি করে ঈশ্বরদী থানায় মামলা করেন।

পুলিশ ২৫ মার্চ রাতেই আব্দুল মমিনের স্ত্রী সীমা খাতুনকে (৩০) আটক করে। মমিন পলাতক ছিলো। র‌্যাব-১২ এর বিশেষ অভিযানে এবং র‌্যাব-৩ এর সহযোগীতায় সীমার স্বামী আব্দুল মমিন ঢাকার হাতিরঝিল এলাকা থেকে গ্রেফতার হয়।

(এসকেকে/এসপি/মার্চ ২৯, ২০২৩)

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test