E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

চাঁদপুরে পাসপোর্ট অফিসে সোয়া ৩ বছরে  রাজস্ব ৩৫ কোটি টাকা

২০১৪ অক্টোবর ২৩ ১৯:২৭:৩৬
চাঁদপুরে পাসপোর্ট অফিসে সোয়া ৩ বছরে  রাজস্ব ৩৫ কোটি টাকা

চাঁদপুর প্রতিনিধি : চাঁদপুরে মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) ইস্যু খাতে গত সোয়া ৩ বছরে প্রায় ৩৫ কোটি ১১ লাখ ২০ হাজার টাকা রাজস্ব আয় হয়েছে। এই বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয়ের বিপরীতে প্রায় ৯৫ হাজার ৩’শ পাসপোর্ট ইস্যু করা হয়।

এছাড়া আরো ২ হাজার ৫’শটি পাসপোর্ট ইস্যুর অপেক্ষায় রয়েছে। অথচ অনেক পাসপোর্ট প্রার্থী জন্মনিবন্ধন, জাতীয় পরিচয়পত্রসহ ত্রুটিজনিত বিভিন্ন কারণে পাসপোর্ট প্রাপ্তিতে বিড়ম্বনা হয়। এক্ষেত্রে পাসপোর্ট প্রাপ্তিতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রে কিছুটা শিথিলতা থাকলে হয়তো সরকারের রাজস্ব আয় আরোও বেশি হতো বলে গ্রাহকদের অভিমত।

চাঁদপুরে পাসপোর্ট ইস্যুর কার্যক্রম চালুর সাথে সাথেই দালাল সিন্ডিকেট চক্র সক্রিয় হয়ে উঠে। তাদের সামাল দিতে গিয়ে সে সময়ের পাসপোর্ট কর্মকর্তাদের বেকায়দায় পড়তে হয়। এক পর্যায়ে কঠোর ভূমিকার কারণে দালালদের তৎপরতা পর্যায়ক্রমে হ্রাস পেতে থাকে। পরবর্তীতে ২০১০ সালের ১৫ জুন চাঁদপুরে স্থাপন করা হয় আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস। এর ১ বছর পর শুরু করা হয় মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট ইস্যু কার্যক্রম। এটি শুরু হতে না হতেই পুনরায় দালাল চক্র সক্রিয় হয়ে উঠে। ফলে আবারো শুরু হয় পাসপোর্ট প্রার্থীদের ভোগান্তি।
গত ২০১৩ সালের ৫ সেপ্টেম্বর চাঁদপুর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সহকারি পরিচালকের দায়িত্ব নেন মো. জাহিদুল হক। তিনি আসার পর থেকেই দালাল চক্রকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেন। জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের সহায়তায় অনেক দালালকে নিবৃত্ত করা হয়েছে ইতোমধ্যে। বর্তমানে দালাল চক্রের উৎপাত কমে যাওয়ায় পাসপোর্ট প্রার্থীদের ভোগান্তি অনেকাংশে লাঘব হয়।

এ প্রসঙ্গে পাসপোর্ট প্রার্থী ফরিদগঞ্জের আনোয়ার হোসেন, মতলব উত্তরের বারেক বেপারীসহ একাধিক প্রার্থী জানায়, পূর্বের তুলনায় দালালদের উৎপাত এখন অনেকটা কম। ফলে ইদার্নীং পাসপোর্ট প্রার্থীর সংখ্যা বেড়েছে। তারা জানায়, পূর্বে দালালরা অতিরিক্ত ২/৩ হাজার টাকা বেশি নিত। কিন্তু বর্তমানে সেই প্রতারণা থেকে সাধারণ মানুষ মুক্ত।

চাঁদপুর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস সূত্রে জানা গেছে, চাঁদপুরে ২০১১ সালের ১২ জুলাই মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট ইস্যু কার্যক্রম শুরু হয়। এরপর থেকে হতে চলতি বছরের ২০ অক্টোবর পর্যন্ত ৩ বছর ৩ মাসে ১ লাখ ৩শ’ ২০টি পাসপোর্টের জন্য আবেদন জমা পড়ে। বিপরীতে ইস্যু করা হয় ৯৫ হাজার ৩শ’টি পাসপোর্ট। ২ হাজার ৫শ’টি পাসপোর্ট ইস্যুর অপেক্ষায় রয়েছে। উল্লেখিত পাসপোর্ট ইস্যু বাবদ সোনালী ব্যাংক চাঁদপুর ট্রেজারি শাখার একটি বুথ জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে স্থাপনের মাধ্যমে সরকারের রাজস্ব আদায় হয় ৩৫ কোটি ১১ লাখ ২০ হাজার টাকা।

সূত্র জানায়, সাধারণ ও জরুরি দুই ক্যাটাগরির পাসপোর্ট ইস্যু করা হয়। সাধারণ ক্যাটাগরির পাসপোর্ট প্রাপ্তিতে ৩ হাজার টাকার ব্যাংক ড্রাফট ও জরুরি ক্যাটাগরিতে ৬ হাজার টাকার ব্যাংক ড্রাফট করতে হয়। সাধারণ ক্যাটাগরির পাসপোর্ট ২২ কার্যদিবস ও জরুরি ক্যাটাগরির পাসপোর্ট ১০ কার্যদিবস পর ডেলিভারি দেয়া হয় বলে আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস জানায়।
২০০৭ সালের ২ সেপ্টেম্বর চাঁদপুরসহ দেশের ১৭টি জেলা শহরে নতুন করে পাসপোর্ট ইস্যু কার্যক্রম শুরু হয়। সে সময় চাঁদপুর ও পার্শ্ববর্তী লক্ষ্মীপুরের অধিকাংশ মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়ে পাসপোর্ট সংগ্রহের জন্য। এতে করে চাঁদপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে স্থাপিত পাসপোর্ট শাখায় এ কার্যক্রম চালু করতে গিয়ে সংশ্লিষ্টদের প্রথমদিকে বিপাকে পড়তে হয়।

একাধিক পাসপোর্ট প্রার্থী জানায়, মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট প্রাপ্তিতে প্রায়ই কাগজপত্র নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়তে হয় গ্রাহকদের। অনেক সময় আমরা বিদেশে অবস্থান করায় জাতীয় পরিচয়পত্র কিংবা জন্মনিবন্ধন করা হয় না। কিন্তু পুরাতন বা মেয়াদ উত্তীর্ণ হাতে লেখা পাসপোর্ট জমা দিয়ে মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট প্রাপ্তিতে প্রয়োজনীয় নিয়ম মানতে গিয়ে পিছিয়ে পড়তে হয়।
পাসপোর্ট দ্রুত পাওয়ার জন্য অনেকে দাবি তুলেছেন, পাসপোর্টে পুলিশি ছাড়পত্র নেয়ার বিধান বাতিল করতে। তাদের মতে, কারো দেশত্যাগে পুলিশের আপত্তি থাকলে বিমানবন্দর ও স্থলবন্দরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের তালিকা দিতে পারে। সেই তালিকার লোকজনের বিদেশ যেতে নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়ন করা যেতে পারে। তাহলে পুলিশ রিপোর্টের জন্য পাসপোর্ট প্রাপ্তিতে আর দীর্ঘ অপেক্ষা করতে হবে না।

চাঁদপুর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক মো. জাহিদুল হক জানান, নির্ধারিত সময়ে আমরা প্রার্থীদের পাসপোর্ট ডেলিভারি দেয়ার চেষ্টা করি। এরপরও অনেক সময় ঢাকা থেকে পাসপোর্ট আসতে দেরি হলে তখন আমাদের করণীয় কিছুই থাকে না। দালাল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এদের কম-বেশি উৎপাত আছে। এরপরও আমি চেষ্টা করি প্রার্থীরা যেন প্রতারিত না হয়। তবে এক্ষেত্রে গ্রাহকদেরও সতর্র্ক থাকতে হবে। তিনি বলেন, সরকারের বিধি অনুযায়ী আমরা গ্রাহকদের প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ আবেদন জমা দিতে অনুরোধ করি। এক্ষেত্রে আমাদের করণীয় কিছুই থাকে না।

(এমজে/জেএ/অক্টোবর ২৩, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

১৭ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test