E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

আ.লীগ নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা মেলেনি 

নবীনগরের লাউর ফতেপুরের সেই শিক্ষকের অবশেষে ভুল স্বীকার

২০২৩ এপ্রিল ১৫ ১৭:৫৮:৫৯
নবীনগরের লাউর ফতেপুরের সেই শিক্ষকের অবশেষে ভুল স্বীকার

গৌরাঙ্গ দেবনাথ অপু, ব্রাহ্মণবাড়িয়া : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার লাউর ফতেহপুর কে. জি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন সভাপতি আওয়ামীলীগ নেতা ব্যারিষ্টার জাকির আহাম্মদের বিরুদ্ধে ওই বিদ্যালয়েরই সিনিয়র শিক্ষক ইব্রাহিম মিয়ার আনীত অভিযোগের অবশেষে সত্যতা পাওয়া যায়নি। ফলে মিথ্যেবাদী ওই শিক্ষক ব্যারিষ্টারের বিরুদ্ধে দেয়া তাঁর অসত্য বক্তব্য প্রদানের জন্য দু:খ প্রকাশ করে প্রকাশ্যে ভুল স্বীকার করেছেন। আজ শনিবার বিদ্যালয়ে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত এক সভায় ওই শিক্ষক তার এই ভুল স্বীকার করেন। ওই শিক্ষককে টেলিফোনে সম্প্রতি আওয়ামীলীগ নেতা ব্যারিষ্টার জাকির আহাম্মদ অকথ্য ভাষায় 'গালিগালাজ করে হুমকী' দিয়েছেন বলে অভিযোগ ওঠে।

পরবর্তীতে ওই শিক্ষক কতিপয় সাংবাদিকের কাছে সাক্ষাৎকার দিয়ে প্রশাসনের কাছে এ ঘটনার প্রতিকার চেয়ে যে বক্তব্য দেন, সেটি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ায় এ নিয়ে ওই শিক্ষকের পক্ষে ও বিপক্ষে গত কয়েকদিন ধরে ফেসবুকে বিভিন্নভাবে লেখালেখি হয়।

উদ্ভুত এ পরিস্থিতিতে করণীয় নির্ধারণের লক্ষে আজ শনিবার বেলা ১১টার দিকে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি সাবেক ছাত্রনেতা ডা. মিজানুর রহমানের সভাপতিত্বে বিদ্যালয়ে এক জরুরী সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় আওয়ামীলীগ নেতা ব্যারিষ্টার জাকির আহাম্মদ, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহজাহান কবির, লাউর ফতেপুর ইউপির চেয়ারম্যান মো. জাহাঙ্গীর আলম, শিক্ষক ইব্রাহিম মিয়াসহ স্থানীয়, গণ্যমান্য, ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। দীর্ঘ ওই সভা শেষে এক পর্যায়ে ঘটনার বিবরণ ও সাক্ষীর ভিত্তিতে ব্যারিষ্টার জাকির আহাম্মদের বিরুদ্ধে আনীত ওই শিক্ষকের অভিযোগের সত্যতা খুঁজে পায়নি উপস্থিত নেতৃবৃন্দ। এ অবস্থায় শিক্ষক ইব্রাহিম মিয়া সভায় এ অনাকাংখিত ঘটনায় দু:খ প্রকাশ করে ব্যারিষ্টারের বিরুদ্ধে তার মিথ্যে মরগড়া বক্তব্য প্রদানের জন্য প্রকাশ্যে ভুল স্বীকার করেন।
এ বিষয়ে শিক্ষক ইব্রাহিম মিয়ার বক্তব্য জানতে বারবার তার মুঠোফোনে কল দেয়া হলে, তার ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।

তবে এ বিষয়ে লাউর ফতেপুর কে. জি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহজাহান কবির জানান, 'ঘটনাটি ক্ষমার অযোগ্য। এরপরও তিনি (ইব্রাহিম) একজন শিক্ষক। তাই তিনি এ ঘটনার জন্য দু:খ প্রকাশ করে ভুল স্বীকার করায় সভায় উপস্থিত সকলেই বিষয়টি উদার মানসিকতায় ওই শিক্ষককে ভবিষ্যতের জন্য সতর্ক করে দিয়েছেন।'
প্রধান শিক্ষক জানান,'আমার কাছে মনে হয়েছে, ওই শিক্ষককে দিয়ে এ ধরণের মনগড়া কাহিনী অন্য একটি তৃতীয় পক্ষ পরিকল্পিতভাবে করিয়েছেন। যা খুবই দু:খজনক।

সভায় উপস্থিত ইউপি চেয়ারম্যান মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, 'ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। একজন শিক্ষক কিভাবে এমন মিথ্যের আশ্রয় নিয়ে একজন রাজনৈতিক নেতার বিরুদ্ধে এমন জঘণ্য বক্তব্য প্রদান করে সাংবাদিকদের কাছে সাক্ষাৎকার দেন? আবার সেই সাক্ষাৎকার এত দ্রুত কিভাবে ফেসবুকে ভাইরাল হয়? '

চেয়ারম্যান জানান, ভবিষ্যতে এ ধরণের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটলে আমরা কাউকেই আর ক্ষমা করবো না। এমন ঘটনায় আমরা কঠোর বিচার করবো।'

তবে প্রধান শিক্ষক ও ইউপি চেয়ারম্যান দুজনেই জানান, 'এই মিথ্যে বক্তব্য ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ার পর ব্যারিষ্টার জাকির আহাম্মদ কলেজের নাইটগার্ড শাহীন মিয়া ওই শিক্ষকের ওপর হামলা করে যে গর্হিত অন্যায় করেছে, সেটিও জঘণ্য,কাজ হয়েছে। আর সেজন্য শাহীন মিয়া ওই শিক্ষকের পা ধরে প্রকাশ্যে ক্ষমা চেয়েছেন। ভবিষ্যতে এ ধরণের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটলে, আরো কঠোর বিচার করা হবে।'

এদিকে আওয়ামীলীগ নেতা ব্যারিষ্টার জাকির আহাম্মদ তাঁর বিরুদ্ধে আনীত ওই শিক্ষকের মনগড়া বক্তব্য মিথ্যে প্রমাণিত হওয়ায় শুকরিয়া প্রকাশ করে বলেন, 'আমি আগেই বলেছি, শিক্ষক ইব্রাহিম মিয়ার অভিযোগ সত্য নয়। এটি কারও দ্বারা প্ররোচিত হয়ে তিনি আমার বিরুদ্ধে এমন মনগড়া জঘণ্য বক্তব্য দিয়েছেন। এরপরও উনি (ইব্রাহিম) শিক্ষক মানুষ হয়ে ঘটনার জন্য দু:খ প্রকাশ করে তার জন্য ভুল স্বীকার করেছেন, এরপর আর কিছু থাকেনা। '

তবে ব্যারিষ্টার জাকির আহাম্মদ জানান, 'সমাজের বিবেক খ্যাত সাংবাদিকদের কাছে আমার অনুরোধ হল, শুধু একজনের কাছ থেকে কোন অভিযোগ পেয়েই একপেশে প্রশ্নবিদ্ধ বিতর্কিত সংবাদ যেন কেউ না করেন। এতে সাংবাদিকদের প্রতি পাঠক ও দর্শকদের আস্থা ও বিশ্বাস নষ্ট হয়ে যায়। যা খুবই দু:খজনক।'

উল্লেখ্য, লাউর ফতেহপুর কে. জি উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক মো. ইব্রাহিম মিয়া গত বৃহস্পতিবার দৈনিক বাংলা ৭১ এর কাছে অভিযোগ করে ঘটনার বর্ণনা দিয়ে জানান, 'বৃহস্পতিবার বেলা আনুমানিক সাড়ে এগারটার দিকে স্কুলের হেড স্যারের কক্ষে আমি যাই। এসময় হেড স্যার তাঁর মোবাইল ফোনটি আমার হাতে দিয়ে বলেন, স্কুলের সাবেক সভাপতি ব্যারিষ্টার জাকির আহাম্মদ স্যার তোমার সঙ্গে জরুরী কথা বলবেন। আমি তখন মোবাইল ফোনটি হাতে নিয়ে সালাম দিয়ে কথা বলতে শুরু করার সঙ্গে সঙ্গেই ব্যারিষ্টার জাকির স্যার আমাকে অকথ্য ও অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকেন। আমি তখন স্যারকে ফোনে বারবার বুঝাতে চেষ্টা করেছি, আপনি আমার সম্পর্কে যা শুনেছেন, সেসব সত্য নয়। কিন্তু তিনি (ব্যারিষ্টার) এরপরও গালিগালাজ অব্যাহত রেখে আমাকে দেখে নেয়ার হুমকী দেন। এরপর আমি স্কুল থেকে বের হয়ে বাসায় চলে গেলে, ব্যারিষ্টার জাকির আহাম্মদ কলেজের নাইটগার্ড শাহীন মিয়া আমার বাসায় গিয়ে আমার ওপর হামলা করেন। এসময় আমি প্রাণে বাঁচতে পাশের একটি হিন্দু বাড়িতে আশ্রয় নিলে, সেখানে গিয়েও শাহীন আমাকে সবার সামনে মারধর করে। আমি এর বিচার চাই।'

শিক্ষক ইব্রাহিমের ওই বক্তব্যের ভিডিও ফুটেজ কতিপয় সাংবাদিক ফেসবুকে ছড়িয়ে দিলে, সেটি দ্রুত ভাইরাল হয়ে যায়।

পরে এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ডা. মিজানুর রহমান জানান,'অনাকাংখিত এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে শিগগীরই প্রকৃত দোষীর বিরুদ্ধে আমরা কঠিন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।' এরপরই ঘটনার তিনদিন পর আজ শনিবার বিদ্যালয়ে এক সভা করে ঘটনাটির বিচার মীমাংসা হয়।

(জিডি/এসপি/এপ্রিল ১৫, ২০২৩)

পাঠকের মতামত:

২৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test