E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

নগরকান্দায় যৌতুকের দাবিতে স্ত্রীর উপর মধ্যযুগীয় বর্বরতা

২০২৩ মে ০৮ ১৩:২৭:৩২
নগরকান্দায় যৌতুকের দাবিতে স্ত্রীর উপর মধ্যযুগীয় বর্বরতা

নগরকান্দা (ফরিদপুর) প্রতিনিধি : ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার তালমা ইউনিয়নের বিবিরকান্দি গ্রামের আবদুল কাশেম মাতুব্বরের মেয়ে আরিফা আক্তারকে (২৪) যৌতুকের দাবিতে তার স্বামীসহ শ্বশুরবাড়ির লোকজন শারীরিক নির্যাতন করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তাকে গৃহবন্দী করে ৫ লাখ টাকা দাবি করে নির্যাতন চালায় তারা। এ খবর পেয়ে রবিবার দিবাগত গভীর রাতে পুলিশ তাঁকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে। আরিফাকে উদ্ধার করে তার বাবা মায়ের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

রবিবার দিবাগত মধ্যরাতে আরিফার স্বামীর বাড়ী ফরিদপুরের সালথা উপজেলার মাঝারদিয়া ইউনিয়নের কাগদি গ্রাম থেকে তাকে উদ্ধার করে সালথা থানা পুলিশ।

বর্তমানে ওই গৃহবধূ ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এ ঘটনায় নির্যাতিতার পরিবার থেকে মামলা করার প্রস্তুতি চলছে বলে জানা গেছে।

আরিফা আক্তারের পরিবারের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, ২০২০ সালে নগরকান্দা উপজেলার তালমা ইউনিয়নের বিবিরকান্দি গ্রামের স্কুল শিক্ষক আবুল কাশেম মাতুব্বরের মেয়ে আরিফা আক্তারের সঙ্গে সালথা উপজেলার মাঝারদিয়া ইউনিয়নের কাগদি গ্রামের কৃষক মফিজুর শেখের ছেলে হাসান শেখের (২৫) সঙ্গে বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে স্বামীসহ শ্বশুরবাড়ির লোকেরা তাকে বাবার বাড়ি থেকে যৌতুক হিসেবে বিভিন্ন সময় টাকা পয়সা আনার জন্য চাপ দিচ্ছিল। আরিফা বাবার কাছ থেকে কয়েক দফায় কয়েক লাখ টাকা এনে দিয়েছেন। কিন্তু কিছুদিন পর আবার যৌতুকের দাবীতে নির্যাতন শুরু করে। এভাবেই প্রায় ৩ বছর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের স্বীকার হয়ে আসছিলেন আরিফা। তাদের সংসারে হাবিবা আক্তার নামে দেড় বছর বয়সী এক কন্যা সন্তান রয়েছে। সর্বশেষ রোববার (০৭ এপ্রিল) দিবাগত রাতে বিদেশ যাওয়ার জন্য স্ত্রী আরিফার কাছে ৫ লাখ টাকা দাবি করেন হাসান ও তাঁর পরিবার। এতে আপত্তি জানালে আরিফার ওপর সবাই মিলে শারীরিক নির্যাতন চালায়। এতে আরিফার শরীরের বিভিন্ন স্থানে মারাত্বক জখম হয়। শারিরীক নির্যাতনের বিষয়টি প্রতিবেশীরা গোপনে ফোন করে আরিফার বাবাকে জানায়। এ খবর পেয়ে মেয়েকে উদ্ধারের জন্য আরিফার বাবা সালথা থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেন। রবিবার দিবাগত গভীর রাতে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে আরিফাকে উদ্ধার করে।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আরিফা আক্তার বলেন, ‘সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে স্বামীর বাড়ির লোকজনের নির্যাতন সহ্য করেও স্বামীর সংসার করে আসছি। কিন্তু আমার স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকদের অমানবিকতা এবং নির্যাতন মোটেও বন্ধ হয়নি। যৌতুকের জন্য প্রায় সময়ই তাঁরা শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করে আসছিল। বিদেশ যাওয়ার নামে ৫ লাখ টাকার জন্য রোববার রাতে আমাকে প্রচণ্ডভাবে মারপিট করে ঘরে বন্দী করে রাখে। আমার বাবা খবর পেয়ে, পুলিশের সহযোগিতায় আমাকে উদ্ধার করে।

নির্যাতনের অভিযোগ প্রসঙ্গে আরিফার স্বামী হাসান শেখ বলেন, বিয়ের সময় মেয়ের বাবার পক্ষ থেকে আমাকে পাকা ঘর সহ বিভিন্ন সামগ্রী দেওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু এখনো তারা আমাকে তেমন কিছু দেয়নি। তিনি বলেন, ‘এটি সাংসারিক বিষয়। এ অভিযোগ নিয়ে আমার কিছুই বলার নেই।

সালথা থানার এসআই রাকিবুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা ওই গৃহবধূর পরিবারের অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই, তাঁকে উদ্ধার করে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছি।

সালথা থানার ওসি শেখ সাদিক বলেন, গৃহবধূকে ঘরে আটকে রেখে নির্যাতন করা হচ্ছে এমন একটি অভিযোগ পাই। পুলিশ তাকে দ্রুত উদ্ধার করে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে।

(পিবি/এএস/মে ০৮, ২০২৩)

পাঠকের মতামত:

১৯ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test