E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সালথা উপজেলা নির্বাচন অফিসে সেবার নামে টাকা নেয়ার অভিযোগ

২০২৩ মে ০৮ ১৮:৪৮:১০
সালথা উপজেলা নির্বাচন অফিসে সেবার নামে টাকা নেয়ার অভিযোগ

সালথা প্রতিনিধি : ফরিদপুরের সালথা উপজেলা নির্বাচন অফিসে টাকা ছাড়া নতুন ভোটার হওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এখানে ভোটার হতে হলে ভোটারপ্রতি পাঁচ থেকে সাত হাজার টাকা করে দেওয়া লাগছে। চাহিদামতো যারা টাকা দিতে পারছেন না, তারা মাসের পর মাস ঘুরেও ভোটার হতে পারছে না। এমনকি অনেকে ভোটার হওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বলে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ। এ ছাড়া জাতীয় পরিচয়পত্রে ভুল সংশোধন ও ভোটার হস্তান্তর, সব কাজেই হচ্ছে টাকার বিনিময়ে।

এসব অর্থ লেনদেনে উপজেলা নির্বাচন অফিসে রয়েছে দুর্নীতিবাজ কর্মচারীদের একটি সিন্ডিকেট। ওই সিন্ডিকেটের সঙ্গে অর্থের চুক্তি না করলে কোনো ধরণের সেবা মেলে না। নতুন উপজেলা নির্বাচন অফিসার যোগদানের পর থেকেই বেপরোয়া ঘুষ-বাণিজ্যের প্রথা চালু হয়েছে বলে জানা গেছে।

জানা গেছে, গত ফেব্রæয়ারী মাসের ১২ তারিখে যোগদান করেন উপজেলা নির্বাচন অফিসার মো. আব্দুল রশিদ। তিনি যোগদানের পর থেকে অফিসের সব কার্যক্রম পরিবর্তন হয়েছে। জনসাধারণকে সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রকাশ্যে অর্থ লেনদেনের নিয়ম চালু করা হয়। তবে তিনি সরাসরি কোনো দেন-দরবার করেন না। ঘুষ-বাণিজ্যের জন্য অফিসের কর্মচারীদের দিয়ে একটি সিন্ডিকেট তৈরি করেছেন। সিন্ডিকেটের মুলহোতা হিসেবে রয়েছে নির্বাচন অফিসের স্ক্যানিং অপরেটার মো. কায়েস শেখ, ডাটা এন্ট্রি অপরেটার মো. রাজিবুল ইসলাম ও পরিছন্নতা কর্মী মো. নাঈম মোল্যা।

সোমবার (৭ মে) সকালে উপজেলা নির্বাচন অফিসে নতুন ভোটার হতে আসেন উপজেলার গট্টি ইউনিয়নের জয়ঝাপ গ্রামের মো. নজির মোল্যার ছেলে মো. রাব্বী মোল্যা। তিনি অফিসে এসে ইমার্জেন্সি ভোটার হতে চাইলে অফিসের কর্মচারী মো. কায়েস শেখ তার কাছে পাঁচ হাজার টাকা দাবি করেন। পরে রাব্বী বিষয়টি স্থানীয় সাংবাদিকদের অবগত করেন।

রাব্বী অভিযোগ করে বলেন, আমি গত চার মাস আগে নতুন ভোটার হওয়ার আবেদন করি। সোমবার অফিসে এসে আমার ভোটার হওয়ার বিষয় খোঁজখবর নিলে কর্মচারী কায়েস বলেন নির্বাচন অফিসারের সঙ্গে কথা বলতে। আমি নির্বাচন অফিসারের কাছে গেলে তিনি আমাকে বলেন, আপনার আবেদন গ্রহণ হলে আপনার মোবাইলে এসএমএস যাবে। এসএমএস গেলে তখন আইসেন। আমার মন মেজাজ ভাল না, আমি দুই মাস ধরে বেতন পাই না। পরে আবার কর্মচারী কায়েস শেখের কাছে গেলে তিনি বলেন, নতুন ইমার্জেন্সি ভোটার হতে হলে ৫ হাজার টাকা লাগবে। টাকা দিলে দ্রæত ভোটার হতে পারবেন।

ঘটনার সত্যতা যাছাই করতে সরেজমিনে নির্বাচন অফিসে গেলে আরও ঘুষ-বাণিজ্যের তথ্য পাওয়া যায়। এ সময় উপজেলা যদুনন্দী ইউনিয়ন বড় খারদিয়া গ্রাম থেকে নতুন ভোটার হতে আসা মো. ফারহান মিয়া অফিসের ভেতরে নির্বাচন অফিসারের সামনে অভিযোগ করে বলেন, আমি নতুন ভোটার হওয়ার জন্য আবেদন করলে- অফিসের কর্মচারীরা ইমার্জেন্সি ভোটার হতে পাঁচ হাজার টাকা দাবি করেন। পরে নির্বাচন অফিসার বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন বলে জানান।

একই গ্রামের আফতাব হোসেন নামে আরেক ব্যক্তি বলেন, আমি ৬ মাস আগে ডিজিটাল ভোটার জন্য অনলাইনে আবেদন করেছি। এখনো আমি ভোটার হতে পারিনি। উপজেলার গট্টি ইউনিয়নের বড় লক্ষনদিয়া গ্রাম থেকে নতুন ভোটার আইডি কার্ড নিতে আসা মো. রাকিব হোসেন বলেন, আমার গ্রামের আমরা দুইজন ভোটার হয়েছি। আজ আমাদের নতুন আইডি কার্ড নিতে এসেছি। কিন্তু নির্বাচন অফিসের কর্মচারীরা দুটি নতুন আইডি কার্ড উত্তোলন করতে ৫০০ টাকা দাবি করেন। স্থানীয় সমাজ সেবক মো. খোরশেদ খান বলেন, নির্বাচন অফিসের অবস্থা খুবই খারাপ। অফিসে নাকি টাকা ছাড়া সেবা মেলে না। বিষয়টি একাধিক ব্যক্তি আমাকে বলেছেন।

এদিকে সোমবার সরেজমিনে নির্বাচন অফিসে গিয়ে অভিযুক্ত নির্বাচন অফিসের স্ক্যানিং অপরেটার মো. কায়েস শেখ, ডাটা এন্ট্রি অপরেটার মো. রাজিবুল ইসলাম ও পরিছন্নতা কর্মী মো. নাঈম মোল্যার কাছে ঘুষ-বাণিজ্যের বিষয় জানতে চাইলে প্রথমে তারা কোনো উত্তর না দিয়ে সেবাপ্রত্যাশিদের সামনে অফিস থেকে বেরিয়ে যায়। পরে নির্বাচন অফিসারের সামনে এসে তাদের বিরুদ্ধে আনিত সব অভিযোগ অস্বীকার করেন। তবে এ সময় ভুক্তভোগীরা অভিযুক্ত কর্মচারীদের সামনেই ঘুষ-বাণিজ্যের অভিযোগ করতে থাকেন।

উপজেলা নির্বাচন অফিসার মো. আব্দুল রশিদ সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি আসার পর অফিসে কোনো অনিয়ম হয়নি। ভোটার হতে বা সেবা পেতে কোনো টাকা-পয়সা লাগে না। সরকারি ফি বাদে অফিসের কেউ যদি সেবাপ্রত্যাশীদের কাছে টাকা চেয়ে থাকে, তাহলে লিখিত অভিযোগ পেলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার কথা বলে টাকা নেওয়ার সুযোগ নেই। সবাই আমার সাথে কথা বলে সেবা নেয়। আমি কারো কাছ থেকে টাকা-পয়সা নেই না।

তবে এ সময় কয়েকজন সেবাপ্রত্যাশীকে নির্বাচন অফিসারের সামনেই ঘুষ-বাণিজ্যের অভিযোগ করতে দেখা যায়।

সালথা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) সহকারী কশিনার (ভূমি) মো. সালাহউদ্দীন আইয়ুবী গণমাধ্যমকে বলেন, নির্বাচন অফিসের ঘুষ-বাণিজ্যের বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে কেউ অভিযোগ করলে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ফরিদপুর জেলা সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তা মো. হাবিবুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, নতুন ভোটার হওয়া, জাতীয় পরিচয়পত্রে ভুল সংশোধন ও ভোটার হস্তান্তরে টাকা নেওয়ার কোন নিয়ম নেই। শুধু অনলাইনে আবেদনে সরকারি ফি লাগে। এর ব্যত্যয় ঘটলে সেটি আইন সম্মত নয়। তবে যারা অভিযোগ করেছে, তারা যদি আমার অফিসে এসে অভিযোগ করেন, তাহলে আমি ব্যবস্থা নেব।

(এন/এসপি/মে ০৮, ২০২৩)

পাঠকের মতামত:

১৯ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test