E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

নওগাঁয় সংখ্যালঘু পরিবারে ফের হামলা দুই মহিলাকে মারপিট

২০১৪ অক্টোবর ২৭ ১৭:৫১:৪০
নওগাঁয় সংখ্যালঘু পরিবারে ফের হামলা দুই মহিলাকে মারপিট

নওগাঁ প্রতিনিধি : শ্লীলতাহানীর শিকার ৪ নারীর শরীরের ক্ষত না শুকাতেই সোমবার সকাল ১০টার দিকে নওগাঁর রানীনগর উপজেলার হরিপুর গ্রামে সংখ্যালঘু গোপাল চন্দ্র প্রামানিকের বাড়িতে ফের সন্ত্রাসী হামলা চালানো হয়েছে। সন্ত্রাসীরা বাড়ি সংলগ্ন পুকুর পাড়ে সংখ্যালঘু পরিবারের গীতা রানী (৫২) ও তার পুত্রবধূ সাধনা রানী (২৬) কে বেধড়ক পিটিয়ে গায়ের কাপড় ছিঁড়ে ফেলেছে।

ঘটনাস্থলে পৌঁছে গ্রামবাসীর সহায়তায় থানা পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। আহত গীতা রানীকে রানীনগর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। মাত্র ৮দিন আগে পার্শ্ববর্তী আমগ্রামের আব্দুল খালেকের নেতৃত্বে অর্ধশতাধিক ব্যক্তি দেশীয় অস্ত্রসহ সন্ত্রাসী কায়দায় হামলা চালিয়ে মারপিট, ভাংচুর, লুটপাট ও ৪ নারীকে টেনে-হেঁচড়ে বিবস্ত্র করে শ্লীলতাহানী ঘটায়। রবিবার আসামীরা সংখ্যালঘু ওই পরিবারকে মামলা তুলে নেয়ার জন্য তাদের স্বপরিবারে হত্যার হুমকিও দিয়েছে। এমন কি তাদের ভিটে-মাটি থেকে উচ্ছেদ করতেও মরিয়া হয়ে উঠে তারা। ঘটনায় গ্রামের সংখ্যালঘু পরিবারগুলো চরম আতংকগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। সোমবার সংবাদটি প্রকাশ হলে খালেক গং আরো বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে।

জানা গেছে, সোমবার সকাল ১০টার দিকে হরিপুর গ্রামের বিবাদমান পুকুরে খালেকের দুই ক্যাডার ভুট্টু ও কুদ্দুস মাছের খাদ্য দিতে যায়। এসময় ওই পুকুরে গ্রামের সংখ্যালঘু মদন চন্দ্রের স্ত্রী গীতা রানী গৃহস্থালী কাজ করছিলেন। তাকে দেখেই ভুট্টু ও কুদ্দুস অশালীন গালাগালিসহ তাকে ধাক্কা দিয়ে পুকুর থেকে তুলে দেয়। এসময় গীতা রানীর পুত্রবধু সাধনা রানী শ্বাশুড়িকে বাঁচাতে এগিয়ে গেলে তাদের দু’জনকেই বেধড়ক মারপিট করে ভুট্টু ও কুদ্দুস। এতে গ্রামবাসী ক্ষিপ্ত হয়ে ওই দু’জনকে ধাওয়া করে। কিছুক্ষণ পর খালেকের অর্ধশতাধিক লাঠিয়াল বাহিনী ফের হামলা চালালে গ্রামবাসীর সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে রানীনগর থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ঘটনার পর হরিপুর গ্রামে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে বলে রানীনগর থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুল্লাহ আল মাসউদ চৌধুরী জানিয়েছেন। ঘটনার পর রানীনগরের ইউএনও মনিরুল ইসলাম পাটোয়ারী ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

গ্রামবাসী জানায়, গত ২০ অক্টোবর সকাল ১০টার দিকে খালেকের নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী গোপাল চন্দ্রের বাড়ির দরজা ভেঙ্গে ভিতরে গিয়ে প্রথম হামলা, মারপিট. ভাংচুর ও লুটপাট চালানো হয়। হামলাকারীরা গৃহকর্তা গোপাল চন্দ্র, গোপীনাথ চন্দ্র (৪২) ও রথীন চন্দ্র (১৯) কে বেদম মারপিট করে গুরুতর জখম করে। এতেও তারা ক্ষান্ত হয়নি। পরিবারের নারী সদস্য পলি রানী, পূর্ণিমা রানী, জলি রানী ও হরিদাসী রানীকে মারপিট করে টেনে-হেঁচড়ে প্রায় বিবস্ত্র করে তাদের শ্লীলতাহানী ঘটায়। গ্রামবাসী তাদের উদ্ধার করে নওগাঁ হাসপাতালে ভর্তি করে দেয়।

এঘটনায় গোপাল চন্দ্রের পুত্র রুপচাঁদ প্রামানিক বাদী হয়ে আব্দুল খালেককে প্রধান আসামী করে ২৩ জনের নাম উল্লেখসহ অঞ্জাতনামা আরো ৩০/৩৫ জনের বিরুদ্ধে রানীনগর থানায় একটি মামলা দায়ের করে। এদিকে গ্রামের একাধিক সূত্র জানায়, সন্ত্রাসী হামলা চালানোর পর হামলাকারীরা মামলা থেকে নিজেদের রক্ষা করতে নিজেদের জখমী সাজিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়। পুলিশ আব্দুল খালেক ও জামাল নামে ২ জনকে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করে। বর্তমানে তারা জামিনে রয়েছে বলে পুলিশ জানায়। ঘটনার পর থেকে এলাকার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মাঝে চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

(বিএম/এএস/অক্টোবর ২৭, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

১৯ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test