E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শ্রীনগরে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে যত্রতত্র কৃষি জমির মাটি কাটা চলছেই  

২০২৩ জুন ০৬ ১৮:৩০:১১
শ্রীনগরে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে যত্রতত্র কৃষি জমির মাটি কাটা চলছেই  

শ্রীনগর প্রতিনিধি : মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে যত্রতত্রভাবে উপজেলার কুকুটিয়া ইউনিয়নের পশ্চিম নওপাড়া ও টুনিয়ামান্দ্রা বিস্তীর্ণ ধানিচকে চলছে কৃষি জমি কাটা ও ভরাটের মহোৎসব। বাড়ৈগাঁও-বিবন্দীর প্রায় আড়াই কিলোমিটার পাকা সড়কের আশপাশে বিভিন্ন ফসলি জমি স্ক্যাভেটর মেশিন দিয়ে কাটা হচ্ছে। এসব জমির চারপাশে পকেটিং করার মধ্য দিয়ে বর্ষায় অবৈধ ড্রেজারে ভরাটের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। পশ্চিম নওপাড়া গ্রামের মো. আলমগীর হোসেন অবৈধভাবে স্ক্যাভেটর (ভেক্যু) মেশিন দিয়ে এসব জমির মাটি কাটছেন বলেন অভিযোগ উঠেছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, যত্রতত্রভাবে ভেক্যু দিয়ে মাটি কাটার ফলে অন্যান্য কৃষি জমিগুলো হুমকির মুখে পড়ছে। এরই মধ্যে ড্রেজার ব্যবসায়ী আলমগীর পশ্চিম নওপাড়া গ্রামের সাবেক এক পুলিশ কর্মকর্তার বাড়ির সংলগ্ন পাঁকা সড়কের পূর্ব পাশে কৃষি জমি ভেক্যু দিয়ে কেটে পকেট বানাচ্ছে। তার পাশেই সড়কের পশ্চিম পাশে প্রায় দুই একর কৃষি জমি ড্রেজার সংযোগের মাধ্যমে ভরাট কর্মযজ্ঞ চালাচ্ছেন তিনি। এছাড়া একই সড়কের পশ্চিম নওপাড়া মাদ্রাসা থেকে সামান্য দক্ষিণ দিকে ঝুলদী গ্রামের জন্য নির্মিত কাঁচা রাস্তা সংলগ্ন আলাদা আলাদাভাবে আলগীরের নিয়ন্ত্রণাধীন ভেক্যু দিয়ে প্রায় ৫ একর কৃষি জমির মাটি কাটা হচ্ছে। অপরদিকে মাটি কাটার এসব ভারি যন্ত্র (ভেক্যু) এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় আনা নেওয়া ক্ষেত্রে এলাকার প্রধান পাঁকা সড়কটির (এলজিইডি) ব্যাপকভাবে ক্ষতিসাধন করবার চিত্র চোখে পড়েছে। ভেক্যুর ওভারলোডিংয়ে ধারালো লোহার চেন চাকার ঘর্ষণে সড়কের কার্পেটিং ফুটু হওয়ার পাশাপাশি পিচ উঠে গেছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে বৃষ্টি মৌসুমে সড়কের পিচ উঠে সরকারের কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সড়কটি বেহাল হয়ে পড়বে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মাটি খেকো আলমগীর হোসেন নিয়ননীতির তোয়াক্কা না করে স্থানীয় প্রশাসনকে বৃদ্ধাআঙ্গুলী দেখিয়ে দিনরাত সমান তালে অবৈধ ড্রেজার বাণিজ্য করে আসছে। আলমগীর হোসেন এলাকায় প্রভাবশালী হওয়ায় ভুক্তভোগীরা প্রকাশ্যে তার এই কর্মকান্ডের বিষয়ে মুখ খুলতে পান না।

নাম প্রকাশে এক জন প্রতিনিধি বলেন, উপজেলাব্যাপী এখন বিভিন্ন চকে অবাধে কাটা হচ্ছে ফসলি জমি,পরিবর্তন করা হয়েছে শ্রেণি। এছাড়া ভরাট করা হচ্ছে অসংখ্য জলাধার। আবার কৃষি জমির মাটি বিক্রি করে বানানো হচ্ছে পুকুর। আর এ ধরণের অনিয়ম করা হচ্ছে স্থানীয় প্রশাসনের সংশ্লিষ্টদের বিনা অনুমতিতে। রাত পোহালেই দেখা যাচ্ছে জলাধার হয়ে যাচ্ছে উঁচু ভূমি। আর ফসলি জমি হয়ে যাচ্ছে পুকুর। দ্রুত এসব জমির রকম পরিবর্তণ হয়ে যাচ্ছে কোন রকম ছাড়পত্র ছাড়াই ! এ যেন দেখার কেউ নেই ? এমনটা চলতে থাকলে কালের বিবর্তণে এ অঞ্চলে ফসলি জমি সব হারিয়ে যাবে। এতে খাদ্য উৎপাদন সংকটের মধ্যে পড়বে।

সুশীল মহল বলছেন, দেশের প্রচলিত আইনে বলা আছে ১৮ ‘ক’ এর অনুচ্ছেদে পরিবেশ সংরক্ষণ আইন-১৯৯৫ ও জলাধার সংরক্ষণ আইন-২০০০’র বিধান অনুযায়ী খাল-বিল, নদী-পুকুর ও জলাশয় ভরাট নিষিদ্ধ হলেও স্থানীয় প্রভাবশালী ড্রেজার ও মাটি সিন্ডিকেট চক্রের সদস্যদের ক্ষমতার কাছে পেরে উঠছে না প্রশাসন। স্থানীয় প্রশাসন মাঝে মধ্যে অভিযান চালিয়ে ছাড়পত্রবিহীর মাটি উত্তোলন কাজে ব্যবহৃত ড্রেজার ও মাটি কাটার যন্ত্র স্ক্যাভেটর মেশিন আটক করে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কাছ থেকে আর্থিক জরিমান আদায় করছেন। তবে মাটি খেকোদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন না করায় একই অপরাধমূলক কাজে কদিন বাদেই সংশ্লিষ্ট মাটি খেকোরা বহাল তবিয়তে থাকতে দেখা যাচ্ছে। এমনই একজন কুকুটিয়া এলাকার পশ্চিম নওপাড়া গ্রামের রুহুল আমীন শেখের ছেলে ড্রেজার ব্যবসায়ী আলমগীর হোসেন। সে পশ্চিম নওপাড়া, টুনিয়ামান্দ্রা, ঝুলদী, পাড়াগাঁও ও কর্কটপাড়া চকে অসংখ্য কৃষি জমি কাটার পাশাপাশি জলাশয় ভরাট বাণিজ্যে বহাল তবিয়তে আছেন। আলমগীর হোসেন অবৈধভাবে এলাকার বিভিন্ন গ্রামীন রাস্তাঘাট কেটে ও ছিদ্র করে ড্রেজার পাইপলাইনের সংযোগ দিয়ে ও ভারি ভেক্যু আনা নেওয়া করে এখানকার কাঁচাপাকা সড়কের ব্যাপক ক্ষতিসাধন করছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত আলমগীর হোসেন বলেন, পশ্চিম নওপাড়া সাবেক এসপির বাড়ির পাশে ড্রেজার দিয়ে একটি কৃষি জমি ভরাট করছেন।

ঝুলদী-টুনিয়ামান্দ্রা চকে ভেক্যু দিয়ে কৃষি জমি কাটার বিষয়ে তিনি বলেন, ওখানে একটি ভেক্যু আমার। বাকি কাজে যে ভেক্যু ওইটা অন্যের। ভেক্যু আনা নেওয়া করে প্রধান পাকা সড়কটির ক্ষতিসাধন করার বিষয়ে তিনি বলেন, বুঝতে পারিনি। এভাবে রাস্তার ক্ষতি হয়ে যাবে। এসব জমি কাটা ও ভরাট কাজে তার কাছে কোন ছাড়পত্র নেই বলেও স্বীকার করেছেন তিনি।

এ ব্যাপারে কুকুটিয়া ইউনিয়ন ভূমি উপ-সহকারী কর্মকর্তা মো. নাসিরউদ্দিন জানান, বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে আগামীকাল সরেজমিনে গিয়ে দেখে প্রয়োজনী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

(এএম/এসপি/জুন ০৬, ২০২৩)

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test