E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

বাড়ি গাড়ি জমিসহ কয়েক কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারীর

২০২৩ জুন ১০ ১৪:৫৩:৩২
বাড়ি গাড়ি জমিসহ কয়েক কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারীর

রাজন্য রুহানি, জামালপুর : জামালপুরে অবসরপ্রাপ্ত তৃতীয় শ্রেণীর এক কর্মচারীর চারতলা বিশিষ্ট একটি বাড়ি, দুতলা বিশিষ্ট দুটি বাড়ি, প্লট, একটি প্রাইভেট কার, ৩০০ শতাংশ কৃষি জমিসহ কয়েক কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ উঠেছে।

এ অবৈধ সম্পদের তালিকা করে সম্প্রতি তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন, প্রেসক্লাবসহ জেলার কয়েকজন সাংবাদিকদের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছে স্থানীয়রা। এমনকি দুর্নীতিগ্রস্ত এই ব্যক্তির বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিও জানানো হয়েছে অভিযোগটিতে।

অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়, জামালপুর সদর উপজেলার শরিফপুর ইউনিয়নের পিঙ্গলহাটি গ্রামের মৃত শমসের আলীর পুত্র শরাফত আলী শরাফত শহরের দক্ষিণ কাচারীপাড়ার ফিসারী রোডের বাসিন্দা। শরাফত আলী একজন তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী ছিলেন। তিনি ২০১৪ সালে সর্বশেষ কর্মস্থল মাদারগঞ্জ সাব রেজিস্ট্রি কার্যালয়ের অফিস সহকারী পদ থেকে অবসর গ্রহণ করেন। সেই সময় তাঁর মাসিক বেতন ছিলো ২৮ থেকে ২৯ হাজার টাকা।

অভিযোগপত্র থেকে আরও জানা যায়, তিনি তার চাকরি জীবনে অসৎ উপায়ে অর্থ উপার্জন করে এই বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন। জামালপুর শহরের দক্ষিণ কাচারীপাড়া এলাকার ফিসারি রোডের খেজুরতলা মসজিদের সামনে তাঁর চারতলা বিশিষ্ট একটি বাড়ি রয়েছে। এছাড়াও একই এলাকার আজাদ ডাক্তারের মোড় থেকে ফকির বাড়ির দিকে রাস্তার পুবপাশে একটি হাফ বিল্ডিংসহ একটি প্লট রয়েছে। প্লটটি তিনি এক ব্যবসায়ীর কাছে ভাড়া দিয়েছেন। এছাড়াও শরাফত আলীর একটি প্রাইভেট কার রয়েছে। প্রাইভেটকারটি তিনি ভাড়া দিয়েছেন। তবে মাঝেমধ্যে নিজে যাতায়াতের জন্য ব্যবহার করেন। ফিসারি রোডে দুতলা বিশিষ্ট দুটি বাড়ি রয়েছে। বাড়িগুলো তাঁর মেয়েদের নামে থাকলেও মূলত তাঁর অর্থেই জমি ক্রয় ও ভবন নির্মাণ করা হয়। শরাফত আলীর স্থায়ী ঠিকানা পিঙ্গলহাটিতে ৫০ বিঘা আবাদি জমিসহ সেখানেও একটি বাড়ি রয়েছে। এছাড়াও সম্প্রতি চারতলা বাড়ির পেছনে ৫ শতাংশ জমি ক্রয় করেছেন শরাফত আলী। জামালপুরের কয়েকটি ব্যাংকে তাঁর প্রচুর পরিমাণ নগদ অর্থ রয়েছে। কর্মরত থাকা অবস্থায় তাঁর ঘুষ লেনদেনের একটি ভিডিও ও সংবাদ বিভিন্ন গণমাধ্যমেও প্রচার হয়।

অনুসন্ধান করে জানা যায়, শহরের দক্ষিণ কাচারীপাড়া এলাকার ফিসারি রোডে খেজুরতলা মসজিদের সামনে শরাফত আলীর চারতলা বিশিষ্ট একটি বাড়ি রয়েছে। যেটির দ্বিতীয় তলায় তিনি নিজে পরিবার নিয়ে বসবাস করেন এবং বাকিগুলো ভাড়া দিয়েছেন। একই এলাকার আজাদ ডাক্তারের মোড় থেকে ফকির বাড়ির দিকে রাস্তার পুবপাশে চার শতাংশ জমির উপর তাঁর একটি প্লট রয়েছে। এই প্লটটি তিনি একজন ব্যবসায়ীর কাছে ভাড়া দিয়েছেন। সেই ব্যবসায়ী তাকে ৫০ হাজার টাকা জামানত দিয়েছেন এবং প্রতিমাসে ৮৫০০ টাকা ভাড়া প্রদান করেন। এছাড়াও তার গ্রামের বাড়ি পিঙ্গলহাটিতে প্রায় ৩০০ শতাংশ কৃষি জমি রয়েছে। যার মধ্যে প্রায় ১০০ শতাংশ জমি তিনি পৈত্রিক সূত্রে পেয়েছেন বাকি জমি তিনি চাকরিকালীন সময়ে ক্রয় করেছেন বলে জানিয়েছে তাঁর স্বজনরা।

এদিকে অভিযোগপত্রে ফিসারি রোডে দুতলা বিশিষ্ট দুইটি বাড়ির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। সেই বাড়ি দুটিতে তাঁর মেয়েরা তাঁদের পরিবার নিয়ে বসবাস করেন বলে জানায় এলাকাবাসী। তবে বাড়ি দুটির নকশা ও আকৃতি একই। সব মিলিয়ে সরেজমিনে অনুসন্ধান করে শরাফত আলীর কয়েক কোটি টাকার সম্পত্তির খোঁজ পাওয়া গেছে।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে শরাফত আলী বলেন, খেজুরতলা মসজিদের সামনে যে চারতলা বাড়ি রয়েছে, সেই জমি তাঁর স্ত্রীর নামে। তাঁর শ্বশুরবাড়ি থেকে তিনি এই জমি পেয়েছেন। পরে ১৯৯৬ সাল থেকে ধীরে ধীরে চারতলার নির্মাণকাজ সম্পন্ন করা হয়। আর যে প্রাইভেট কারের কথা উল্লেখ করা হয়েছে সেটি তাঁর নামে নয়, অন্যজনের নামে। তবে তিনি মাঝেমধ্যে যাতায়াতের জন্য প্রাইভেটকারটি ব্যবহার করেন। আর ফকিরপাড়া রোডে যে চার শতাংশ জমির প্লট রয়েছে সেটি তিনি ২০০৯ সালে ক্রয় করেছেন। আর তাঁর মেয়ের জামাইয়েরা সেই দুতলা দুটি ভবন নির্মাণ করেছেন বলে দাবি তাঁর।

শরাফত আলী আরও বলেন, স্থানীয় একটি মসজিদের ব্যবস্থাপনা কমিটি নিয়ে তাঁর সাথে কয়েকজন দ্বন্দ্ব থাকায় তাঁকে হয়রানি করতে তাঁর নামে মিথ্যা ও ভুল অভিযোগ করেছেন কতিপয় ব্যক্তি।

তবে এতো কম বেতনে কোটি টাকার সম্পত্তির মালিক হওয়া সম্ভব কিনা, এমন প্রশ্নের কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি শরাফত আলী।

এ বিষয়ে জামালপুর জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর সেলিম বলেন, “জনাব শরাফত আলী অত্যন্ত চতুরতার সাথে তাঁর সম্পদগুলো স্ত্রী ও মেয়েদের নামে দেখিয়েছেন। যাতে তিনি ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকেন। যার নামেই সম্পদ থাকুক তাঁদের আয়ের উৎসগুলো খতিয়ে দেখা দরকার। তাহলেই থলের বিড়াল বেরিয়ে আসবে। একজন তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী তাঁর চাকরিকালে যে বেতন পান তাতে তার সংসার পরিচালনা করাই কষ্টসাধ্য হয়ে যায়। সেখানে কোটি কোটি টাকার সম্পদ অর্জন মানেই অসৎ উপায়ে আয়।”

এসব বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুর্নীতি দমন কমিশনের একজন কর্মকর্তা জানান, “আমাদের কাছে কোনো অভিযোগ আসলে আমরা অভিযোগটি আমাদের প্রধান কার্যালয়ে পাঠাই। এরপর সেখানে যাচাই-বাছাইয়ের পর তদন্ত করার জন্য আমাদের নির্দেশ দেয়া হয়। পরে আমরা তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করি। তবে শরাফত আলীর বিষয়ে অভিযোগটি আমরা এখনো হাতে পাইনি। আমরা এটি হাতে পেলে আমাদের প্রধান কার্যালয়ে পাঠাবো।”

(আরআর/এএস/জুন ১০, ২০২৩)

পাঠকের মতামত:

২৭ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test