E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ওয়ারিশ সনদ আনতে গিয়ে রক্তাক্ত বৃদ্ধ, ইউএনও-র কার্যালয়ে সালিশ

২০২৩ জুন ১১ ২৩:২৬:২৫
ওয়ারিশ সনদ আনতে গিয়ে রক্তাক্ত বৃদ্ধ, ইউএনও-র কার্যালয়ে সালিশ

কাজী হাসান ফিরোজ, বোয়ালমারী : ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ওয়ারিশ সনদ আনতে গিয়ে আহত হয়েছেন এক বৃদ্ধ। রূপাপাত ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান সোনা মিয়ার লোকেদের আক্রমণে আহত বৃদ্ধের নাম মো. ওবায়দুর রহমান (৬০)। আওয়ামী লীগ করায় তাকে ওয়ারিশ সনদ না দিয়ে পিটিয়ে আহত করা হয়েছে বলে ভুক্তভোগীর অভিযোগ। পরে রোববার সন্ধ্যায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সালিশ বৈঠকে এর মীমাংসা করা হয়েছে।

জানা গেছে, উপজেলার রূপাপাত ইউনিয়নের কলিমাঝি গ্রামের মো. ওবায়দুর রহমান রবিবার (১১ জুন) বেলা দেড়টার দিকে রূপাপাত ইউনিয়ন পরিষদে যান। তিনি ওয়ারিশ সনদ চাইলে ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান সোনা মিয়া সনদ দিতে অস্বীকৃতি জানান। এ সময় উভয়ের মধ্যে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে চেয়ারম্যানের লোকজন তাকে মেরে মারাত্মক জখম করেন। আহত ওবায়দুরকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে নেওয়া হলে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

এদিকে এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ইউপি পরিষদ ভবনে হামলা ভাংচুরের অভিযোগে পুলিশ রূপাপাত ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি পারভেজ মোল্যা (২৪), রূপাপাত ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মোজাহিদুল মোল্যা (৪০) ও ফরিদপুর রাজেদ্র কলেজের সম্মান শ্রেণির ছাত্র সৌরভকে আটক করে।

আহত ওবায়দুর রহমান অভিযোগ করে বলেন, ইউনিয়ন পরিষদে একটি ওয়ারিশ সনদ আনতে চেয়ারম্যানের নিকট গেলে 'তিনি আমার গ্রাম কোথায় জিজ্ঞেস করেন। কলিমাঝি বাড়ির কথা বলতেই গালি দিয়ে বলেন, তোরা নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েছিস। পরে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে চেয়ারম্যানের লোকজন আমাকে মেরে রক্তাক্ত জখম করেন।' খবর পেয়ে আমার গ্রাম থেকে লোকজন আমাকে উদ্ধার করতে গেলে তাদের বিরুদ্ধে ইউনিয়ন পরিষদ ভবনে হামলা বা ভাংচুরের অভিযোগ আনা হয়েছে।

এ ব্যাপারে রূপাপাত ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মিজানুর রহমান (সোনা) বলেন, আজ শিশু কার্ডের চাল দিচ্ছিলাম। এ সময় একটা লোক এসে কম্পিউটার অপারেটরকে তার ভোটার আইডি কার্ড বের করে দিতে বলেন। এ নিয়ে দুইজনের মধ্যে কথা কাটাকাটি শুনে এগিয়ে গিয়ে জানতে চাইলাম কি হয়েছে, তখন তিনি আমাকে বলেন ভোটার আইডি কার্ড বের করে দিতে। ভোটার আইডি কার্ড উপজেলা থেকে দেওয়া হয় বলার পর বলেন, তুই আমাকে আইন শেখাস। তখন বাড়ির কথা জিজ্ঞেস করলে কলিমাঝি বলার পর বলছি, কলিমাঝি বলেই এরকম ব্যবহার করেন। বলার সাথে সাথেই তিনি (ওবায়দুর) আমার উপর হাত তুলেছেন। তখন আমার লোকজন তাকে কয়েকটা মারধর দিয়েছে। খবর পেয়ে তার লোকজন এসে পরিষদে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করে। পরে পুলিশে খবর দিলে পুলিশ এসে তিনজনকে আটক করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন করে।

এ ব্যাপারে বোয়ালমারী থানার ওসি মুহাম্মদ আব্দুল ওহাব বলেন, আহত ওবায়দুর রহমান থানায় এসেছিল। তাকে আগে চিকিৎসা নিতে হাসপাতালে পাঠিয়েছি। সে ওয়ারিশ সনদ আনতে গেলে চেয়ারম্যানের সাথে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে চেয়ারম্যানের লোকজনের সাথে ধাক্কাধাক্কি হয়। খবর পেয়ে কলিমাঝির এক দেড়শো লোক গিয়ে পরিষদ ভবনে হামলা চালায়। খবর পেয়ে ডহরনগর ফাঁড়ি পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করার জন্য তিনজনকে আটক করে।

এ ঘটনার পরে সন্ধ্যায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে এক সালিশ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় আহতের চিকিৎসার যাবতীয় ব্যয়ভার চেয়ারম্যান বহন করবেন। আর আটককৃতদের স্থানীয়দের জিম্মায় ছেড়ে দেয়া হবে।

ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন রূপাপাত ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান সোনা মিয়া, শেখর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মো. ইস্রাফিল মোল্যা, রূপাপাত ইউনিয়ন আ'লীগের সভাপতি কোবাদ হোসেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মাহিদুল হক প্রমুখ।

জানতে চাইলে সালিশ বৈঠকে উপস্থিত শেখর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মো. ইস্রাফিল মোল্যা বলেন, বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় আহতের চিকিৎসার যাবতীয় ব্যয়ভার চেয়ারম্যান বহন করবেন। আর আটককৃতদের স্থানীয়দের জিম্মায় ছেড়ে দেয়া হবে।

এ ব্যাপারে বোয়ালমারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোশারেফ হোসাইনের বক্তব্য জানতে রোববার রাত ৮টা ১৫ মিনিটে তার মুঠোফোনে ফোন দেয়া হলে তিনি ফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

প্রসঙ্গত, রূপাপাত ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মিজানুর রহমান (সোনা) স্বতন্ত্র হিসেবে ঘোড়া প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন।

(কেএইচএফ/এএস/জুন ১১, ২০২৩)

পাঠকের মতামত:

১৮ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test