E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

শৈলকূপার মুক্তিযোদ্ধা টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজে নিয়োগ পাননি কেউ!

২০২৩ জুন ১৭ ১৪:২৮:২৯
শৈলকূপার মুক্তিযোদ্ধা টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজে নিয়োগ পাননি কেউ!

স্টাফ রিপোর্টার, ঝিনাইদহ : দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নামে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে শৈলকূপায় শতাধিক কর্মপ্রত্যাশি মানুষের কাছ থেকে হাতিয়ে নেয়া হয়েছে মোটা অংকের টাকা। এ নিয়ে এলাকায় হৈ চৈ পড়ে গেছে। সভাপতি নির্ভর এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যক্ষের কোন কতৃত্ব নেই। সবই করেন কথিত প্রতিষ্ঠানটির সভাপতি লুৎফর রহমান টুলু। তবে বাংলাদেশ টেকনিক্যাল এডুকেশন বোর্ড বা টিইবির উপ-পরিদর্শক হুমায়ন কবীর বললেন, দেশের বিভিন্ন এলাকায় মুক্তিযোদ্ধা টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজ বা একই জাতীয় নামে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা হলেও মূলত: এসবের কোন বৈধতা নেই।

এ ধরণের প্রতিষ্ঠান খোলার আগে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিতে হবে। সরজমিন দেখা গেছে, ৫ বছর আগে ঝিনাইদহের শৈলকূপা উপজেলা শহরের পানি উন্নয়ন বোর্ডের জায়গায় অবৈধভাবে নির্মিত শৈলকূপা মুক্তিযোদ্ধা টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজ নামক প্রতিষ্ঠান গজিয়ে ওঠে। তবে ৫ বছরে এই প্রতিষ্ঠানের ৩৬ শিক্ষক কর্মচারীর কেউ নিয়োগপত্র বা বৈধ কোন কাগজপত্র পাননি।

এদিকে সভাপতি লুৎফর রহমান টুলু একের পর এক প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা কমিটি পরিবর্তন করে চলেছেন। এ খবর জানেন না অধিকাংশ সদস্য। সভাপতি নিজেই এসব করেন আর বাধ সাধলে যাকে তাকে যখন-তখন বের করে দেন প্রতিষ্ঠান থেকে। আগের দুইটি ব্যবস্থাপনা কমিটিকে পাশ কাটিয়ে সভাপতি তৃতীয় কমিটি অনুমোদনের জন্য জমা দেন বগুড়ায় অবস্থিত কথিত মুক্তিযোদ্ধা টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজ ট্রাস্টি বোর্ডের কাছে। প্রস্তাবিত ওই কমিটির রেজুলেশনে সদস্য সচিব বা অধ্যক্ষের স্বাক্ষর ভ‚য়া মর্মে তা অনুমোদন না দেয়ার জন্যও আপত্তি দেন সদস্য সচিব। কিন্তু অর্থের জোরে কমিটি অনুমোদিত হয় এবং অনুমোদনের এক মাস আগেই সভাপতি ব্যাংকের হিসাব থেকে একক সাক্ষরে তুলে নিয়েছেন এক লাখ টাকা। প্রতিবাদ করায় দুমাস আগে অধ্যক্ষের কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন। শাসিয়ে দিয়েছেন প্রতিষ্ঠানে পা রাখলে গুড়ো করে দেওয়া হবে। আবার হঠাৎ করে কোন কারণ দর্শাণো ছাড়াই গত ১১ জুন সভাপতি অধ্যক্ষকে অব্যাহতি দিয়ে তার বাড়ির ঠিকানায় পাঠিয়ে দিয়েছেন চিঠি।

শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, অধ্যক্ষের বদলে সভাপতিই সব প্রশাসনিক কাজ করেন। মন:পুত না হলে যখন-তখন শিক্ষকদের বের করে দেন প্রতিষ্ঠান থেকে। শিক্ষক-কর্মচারিদের ছুটি কলেজ অধ্যক্ষ দেওয়ার নিয়ম থাকলেও তা দেন সভাপতি নিজে। শিক্ষার্থীদের চাঁদা ও সব পরিক্ষার ফিস জমা হয় সভাপতির কাছেই। কারিগরি বোর্ডের স্থলে প্রতিষ্ঠানটির অনুমোদন দিয়েছে বগুড়ার ট্রাস্টি বোর্ড। সভাপতি প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরে কোচিংসেন্টার চালু করেছেন এবং অফিসের একটি অংশ সাবলেট দিয়েছেন।

শৈলকুপা মুক্তিযোদ্ধা টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ ও সদস্যসচিব মওলা হাবিব জানান, তাকে বড় একটা অংকের বিনিময়ে দায়িত্ব দেয়া হলেও আজ পর্যন্ত তাকেসহ কাউকেই নিয়োগপত্র দেয়া হয়নি। প্রশাসনিক ও অন্যান্য দাপ্তরিক কাজ থেকে তাকে দূরে রেখে সভাপতি নিজেই সব করে থাকেন। শিক্ষক-কর্মচারিদের হাজিরা খাতা এবং হিসাব-নিকাশ অধ্যক্ষের বদলে তিনি নিজের কাছে রেখেছেন। সবার ছুটি ও এবং সুযোগ-সুবিধা তিনিই নিয়ন্ত্রণ করছেন। তাদের নির্দেশণা দেয়া হয়েছে সব কাজে অধ্যক্ষের বদলে সভাপতির সাথে যোগাযোগের জন্য। শিক্ষার্থীদের দেয়া ফি এবং চাঁদাও সভাপতি নিজেই আদায় করে তার কাছে রাখেন।

বাংলাদেশ টেকনিক্যাল এডুকেশন বোর্ডের উপ-পরিদর্শক হুমায়ন কবীর জানান, এ ধরণের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কোন বৈধতা নেই। মুক্তিযোদ্ধাদের নামে প্রতিষ্ঠান করতে হলে মন্ত্রনালয়ের অনুমোদন নিতে হয়। তাছাড়া নাম টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজ আর অনুমোদন দেন বগুড়া ট্রাস্টি বোর্ড এ আবার কেমন খবর শুনলাম যোগ করেন তিনি।

এ ব্যাপারে শৈলকূপা মুক্তিযোদ্ধা টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজ-পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি লুৎফর রহমান টুলুর সাথে কথা বললে তিনি তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যে দাবি করে জানান, যেহেতু বেশকিছু শিক্ষক-কর্মচারি অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন তাই তাকে মাস দু’য়েক হলো সবরকম কাজ থেকে বিরত রাখা হয়েছে।

গত ১১ জুন তাকে স্থায়ীভাবে অব্যাহতি দিয়ে সহকারি শিক্ষক রফিকুল ইসলাম সবুজকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দিয়ে তা বগুড়ার ট্রাস্টিবোর্ড এবং ঝিনাইদহের সংশ্লিষ্ট শিক্ষা আফিস ও স্থানীয় প্রশাসনকে অবহিত করা হয়েছে বলে সভাপতি জানান।

(একে/এএস/জুন ১৭, ২০২৩)

পাঠকের মতামত:

০২ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test