E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

সহকারি শিক্ষক যখন ইউপি চেয়ারম্যান

রাণীনগরে আইসিটি শিক্ষক স্কুলে আসেন নিজের ইচ্ছে মাফিক, ক্লাস নেন অন্যরা

২০২৩ জুলাই ০৪ ১৫:৪৯:১৪
রাণীনগরে আইসিটি শিক্ষক স্কুলে আসেন নিজের ইচ্ছে মাফিক, ক্লাস নেন অন্যরা

নওগাঁ প্রতিনিধি : নওগাঁর রাণীনগরের মালশন-গিরিগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়ের আইসিটি বিষয়ের সহকারি শিক্ষক মো. আব্দুল মতিন। তিনি গত ২০২১সালে অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়ে নবেম্বর মাসের ১০তারিখে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ৫নং বড়গাছা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এরপর থেকে তিনি বিদ্যালয় থেকে শিক্ষক পদের বেতন-ভাতা নিয়ে চালিয়ে আসছেন চেয়ারম্যান পদের কার্যক্রম।  

সূত্রে জানা গেছে, দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার পর থেকে তিনি বিদ্যালয়ে অনিয়মিত ছিলেন। এরপর চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে আজ পর্যন্ত তিনি বিদ্যালয়ে আসেন নিজের ইচ্ছে মাফিক। নিজের বিষয়ে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পাঠদানের বিষয়ে নেই কোন আগ্রহ। তিনি বিদ্যালয়ে নিয়মিত না আসায় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বাধ্য হয়েই তার বিষয়ে পাঠদান কখনোও নিজে করাচ্ছেন আবার কখনোও বা অন্য শিক্ষক দিয়ে পাঠদানের কার্যক্রম চালিয়ে আসছেন। এই বিষয়ে একাধিকবার শিক্ষক আব্দুল মতিনকে বলার পরও শিক্ষক মতিন তা কর্ণপাত না করে বহাল তবিয়তে বিদ্যালয় বাদ দিয়ে তার চেয়ারম্যান পদের কার্যক্রম পুরোদমে চালিয়ে আসছেন। যার কারণে বছরের পর বছর ওই বিদ্যালয়ের শত শত শিক্ষার্থীরা গুরুত্বপূর্ন আইসিটি বিষয়ে নির্ধারিত শিক্ষকের মাধ্যমে সঠিক ভাবে পাঠদান না পেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে আসছে।

এছাড়া শিক্ষক আব্দুল মতিন প্রথম দিকে শিক্ষক ও চেয়ারম্যান হিসেবে দুই পদ থেকেই সরকারের সকল সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে আসতেন। পরবর্তিতে বিষয়টি তদন্ত আসলে শিক্ষক আব্দুল মতিন মুচলেখা দেন যে তিনি শুধুমাত্র শিক্ষক হিসেবে সরকারের বেতন-ভাতাদি ভোগ করবেন। এরপর থেকে তিনি শিক্ষক হিসেবেই শুধুমাত্র বেতন-ভাতাদি গ্রহণ করে আসলেও বিদ্যালয়ে নিয়মিত পাঠদান না করার কারণে স্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক ও বড়গাছা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মতিন মুঠোফোনে জানান মাঝে মধ্যে বিদ্যালয়ে গিয়ে তার আইসিটি বিষয়ে কিছু শ্রেণির শিক্ষার্থীদেরকে পাঠদান করানোর সুযোগ হয়ে ওঠে না। তবে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সম্মত থাকায় তিনি দ্রুতই তার বিষয়ে পাঠদান করানোর জন্য বিদ্যালয়ে একজন প্রক্সি শিক্ষক নিয়োগ করবেন বলে জানান।

বিদ্যালয়ের সদ্য অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আব্দুল হামিদ বলেন, নিয়ম-নীতি অনুসারে একজন সহকারি শিক্ষককে অবশ্যই বিদ্যালয় শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে অবস্থান করতে হবে। কিন্তু আব্দুল মতিন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে বিদ্যালয়ে আসেন নিজের ইচ্ছে মাফিক। আমি প্রধান শিক্ষক থাকাকালীন সময়ে দীর্ঘ সময় ধরে শিক্ষক মতিনের পাঠদান আমিসহ অন্য শিক্ষকরা করিয়ে এসেছি। এতে করে শিক্ষার্থীদের লাভের চেয়ে ক্ষতিটা হয়েছে অনেক বেশি। কারণ অন্য শিক্ষকরা অবশ্যই ওই বিষয়ে ক্লাসে গিয়ে যতœসহকারে পাঠদান করাতে পারবেন না। শুধুমাত্র সময় অতিবাহিত করা মাত্র।

তিনি আরো বলেন তিনিসহ বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও অন্যরাও এই বিষয়ে শিক্ষক আব্দুল মতিনকে অনেকবার বলার পরও কোন লাভ হয়নি। আব্দুল মতিন বিদ্যালয়ে এসে নিয়মিত পাঠদান করানো বাদে চেয়ারম্যানের কার্যক্রম চালাতেই বেশি ব্যস্ত থাকেন। যার ফলে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বছরের পর বছর গুরুত্বপূর্ণ আইসিটি বিষয়ে সঠিক জ্ঞান অর্জন করা থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছে। এমন অনিয়মের বিরুদ্ধে বিভিন্ন কারণে আমিসহ বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণে ব্যর্থ হয়েছি। তাই শত শত শিক্ষার্থীকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দ্রুত একটি সমাধান করতে হবে বলে তিনি মনে করেন।

বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও বড়গাছা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুল আহাদ শেখ (বাবু) মুঠোফোনে জানান ব্যবস্থাপনা কমিটির পক্ষ থেকে রেজুলেশনের মাধ্যমে আব্দুল মতিনকে সমস্যাটি সমাধান করার জন্য বলা হয়েছিলো। কিন্তু আব্দুল মতিন দুই পদই বহাল রাখতে চায়। বর্তমানে ব্যস্ততার কারণে আব্দুল মতিন বর্তমানে বিদ্যালয়ে আসার আর সময় করতে পারে না। আমি তাকে যে কোন একটি পদে বহাল থাকার কথা বলে আসছি কিন্তু মতিন রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে বিদ্যালয়ে এসে পাঠদানের বিষয়টি তোয়াক্কা করছে না। আমিও রাজনৈতিক পিছুটানের কারণে আব্দুল মতিনের বিরুদ্ধে কঠোর কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারছি না। অপরদিকে বিদ্যালয়ের শত শত শিক্ষার্থীরা আইসিটি বিষয়ে সঠিক পাঠদান না পাওয়ার কারণে যে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে তা থেকে তাদের মুক্তও করতে পারছি না। তাই দ্রুতই বিষয়টির সঠিক সমাধানের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আশুদৃষ্টি কামনা করছি।

উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার কামরুল হাসান বলেন একজন শিক্ষক সরকারি বেতন-ভাতা ভোগ করবেন আর তার দায়িত্ব সঠিক ভাবে পালন করবেন না এমন হতে পারে না। শিক্ষক আব্দুল মতিনের বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে অভিযোগ পেলে অবশ্যই বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা লুৎফর রহমান বলেন আমার জানা মতে এই বিষয়ে ঢাকা থেকে শিক্ষক আব্দুল মতিনকে শোকজ লেটার দেয়া হয়েছিলো। কিন্তু তার পরে আর কি হয়েছে তা আমার জানা নেই। একই চাকরীজীবী ব্যক্তির দ্বৈত পদে অবস্থান করা নিয়ে সরকারের আইনে কিছুটা পরিবর্তন করা খুবই প্রয়োজন। তবে নির্ধারিত শিক্ষক পাঠদান না করার কারণে ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে কিনা এই বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে দ্রুতই ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

(বিএস/এসপি/জুলাই ০৪, ২০২৩)

পাঠকের মতামত:

২৭ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test