E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

কর্ণফুলীতে ব্যাঙের ছাতার মতো গজাচ্ছে স্কুল-কলেজ!

২০২৩ জুলাই ১৮ ১৭:০৩:২৩
কর্ণফুলীতে ব্যাঙের ছাতার মতো গজাচ্ছে স্কুল-কলেজ!

জে.জাহেদ, চট্টগ্রাম : চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার আনাচে-কানাচে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠছে একের পর এক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। সরকারি অনুমোদন ছাড়াই অধিকাংশ স্কুল-কলেজ চলছে পাড়া-মহল্লার অলিগলি ও ভাড়া বাসায়। প্লে-গ্রুপ থেকে অষ্টম, উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত পাঠদান করা হচ্ছে এসব প্রতিষ্ঠানে। স্বল্প জায়গায় গড়ে ওঠা এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে শিক্ষার্থীদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশ।

উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ইউনিয়নের অলিগলিতে, পাড়া-মহল্লায়, প্রধান সড়কের ওপর বিভিন্ন ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়েছে। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অধিকাংশেরই নেই কোনো অনুমোদন। শিক্ষার পরিবেশ, ভালো মানের শিক্ষক ছাড়াই চলছে এসব প্রতিষ্ঠান। এলাকার গৃহিণী ও শিক্ষার্থীদের দিয়ে চলছে পাঠদান। নাম মাত্র বেতনে তারা সেখানে শিক্ষকতা করেন। এর বাইরে শিক্ষার্থীদের কোচিং করিয়ে বাড়তি আয় করেন।

দেখা যায়, অনুমোদনহীন এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অন্ধকার রুমে ক্লাস নেওয়া হচ্ছে। দিনেও সূর্যের আলো পৌঁছায় না এসব শ্রেণিকক্ষে। তার ওপর স্কুল কর্তৃপক্ষ বাড়তি আয় করতে শিক্ষার্থীদের নিম্নমানের প্রকাশনীর মানহীন বই কিনতে বাধ্য করে। প্রতি মাসে একাধিক কিন্ডার গার্ডেন স্কুলে পরীক্ষার পর পরীক্ষা। এসব স্কুলে পাঠ্য বইয়ের কোনো গুরুত্ব না থাকলেও জোর করে সেগুলো পড়তে বাধ্য করা হচ্ছে।

বছরের পর বছর অনুমোদনহীন এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চললেও কেউ তদারকি করতে আসেনি। তবে নিজেদের অনুমোদন না থাকায় এসব স্কুল-কলেজগুলো অন্য কোনো অনুমোদিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন করিয়ে পাবলিক পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ করে দেয়। এরমধ্যে রয়েছে নানা বিচিত্র নামে মাদরাসা ও হেফজ খানা। যে সব প্রতিষ্ঠানে ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে নামে মাত্র ১৫/১২ জন। এসব প্রতিষ্ঠানের মান ও পরিবেশ নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

কর্ণফুলী উপজেলার চরপাথরঘাটা, ইছানগর, খোয়াজনগর, চরলক্ষ্যা ইউনিয়নের সৈনেরটেক, কুইদ্দ্যারটেক, শিকলবাহার মাষ্টারহাট, কলেজবাজার, বড়উঠানের ফকিরনিরহাট, জুলধার পাইপের ঘোড়া বাজারসহ একাধিক জায়গায় গড়ে উঠেছে নানা অবৈধ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নেই কোন পরিচালনা কমিটি, যিনি শিক্ষক তিনিই আবার কমিটি। কিছু কিছু স্কুল পরিচালনা কমিটিতে নামকেওয়াস্তে এলাকার প্রভাবশালীদের নাম জড়িয়েছেন। যাতে কৌশলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ব্যবসা নিরাপদে চালানো যায়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে খোয়াজনগরের এক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান নাম না প্রকাশ করা শর্তে বলেন, আমাদের জায়গা সংকটের কারণে খেলার মাঠ নেই। জাতীয় সংগীত পড়ানোর জায়গা নেই। তা সত্য। তবে আমরা চেষ্টা করছি। ভালো কিছু করার। এমনকি অভিভাবকদের জন্য ছাউনি করা যাচ্ছে না। সে কারণে কিছুটা ঝুঁকি নিয়ে শিক্ষার্থীদের যাতায়াত করতে হচ্ছে। পড়তে হচ্ছে।

জানতে চাইলে আলমগীর নামক এক শিক্ষক বলেন, অনুমোদনের জন্য আবেদন করে এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়ালেখা করা হচ্ছে। অনুমোদনের জন্য অপেক্ষা করেনি আর। ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা এসব মাদরাসা, হেফজখানা, স্কুল-কলেজ, মান-পরিবেশ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এইসব স্কুলে পড়া এক ছাত্র রিপন বলে, স্কুলের কাছে বাসা হওয়ায় আম্মু এখানে ভর্তি করিয়েছে। ক্লাসে অনেক অন্ধকার। খেলার জায়গা নেই। বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দেওয়ার জায়গা নেই। স্যার-ম্যাডাম পড়ানোর সময় সবাই হইচই করে বলে ঠিকমতো পড়া বুঝতে পারি না। সে কারণে নিয়মিত স্কুলে আসতে ইচ্ছা করে না।

জানতে চাইলে কর্ণফুলী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বাবুল চন্দ্র নাথ বলেন, ‘উপজেলার আনাচে-কানাচে অননুমোদিত অনেক স্কুল গড়ে উঠেছে। এসব স্কুলের পাশে বসবাস করা অনেকেই তাদের সন্তানদের সেখানে পড়াচ্ছেন। অনুমোদন না থাকলেও এসব স্কুল হরহামেশা চলছে, কোনোভাবেই বন্ধ করা সম্ভব হচ্ছে না। বদ্ধ এবং সংকীর্ণ স্থানে গড়ে ওঠা এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের জন্য কোনো ধরনের সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা নেই। শুধু বাণিজ্যিক কারণে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়েছে। আমরা চেষ্টা করতেছি এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে একটা নিয়মে আনা যায় কিনা। কারণ এভাবে ছেড়ে দেওয়া যায় না। বাড়তি চাপ পড়ছে উপজেলার অন্যান্য বৈধ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উপরও।’

শিক্ষা সচেতন অভিভাবকরা বলেছেন, এদের রোধ করতে আইন না থাকায় কোনো পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তবে শিক্ষা আইনে এসব স্কুলের বিষয়ে সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। অনুমোদন ছাড়া কোনো ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা যাবে না। এ আইন বাস্তবায়ন হলে অনুমোদন ছাড়া কেউ আর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে পারবে না।বর্তমানে যেসব প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে, সেগুলোকে তাদের পার্শ্ববর্তী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত করে দেওয়া হলে নিয়মে আসতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন অনেক অভিভাবক।

(জেজে/এসপি/জুলাই ১৮, ২০২৩)

পাঠকের মতামত:

০১ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test