E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

২ বছরের কমিটির সাড়ে ৬ বছর পার!

ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আর আ.লীগের সম্পাদকই চালাচ্ছে কর্ণফুলী যুবলীগ!

২০২৩ আগস্ট ০২ ১৭:১৪:২৬
ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আর আ.লীগের সম্পাদকই চালাচ্ছে কর্ণফুলী যুবলীগ!

জে. জাহেদ, চট্টগ্রাম : চট্টগ্রাম কর্ণফুলীতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অন্যতম সহযোগী সংগঠন আওয়ামী যুবলীগ মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে সাড়ে ৪ বছর আগেই। বলতে গেলে বর্তমান কমিটির কোন মেয়াদ নেই। তবুও এই কমিটির হাল ধরেছেন ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নাজিম উদ্দিন হায়দার। আর যুবলীগকে বিদায় জানিয়ে সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ সেলিম হক উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হলেন। কিন্তু এখনো তিনি উপজেলা যুবলীগের সম্পাদক হিসেবে সকল কর্মকাণ্ড চালাচ্ছেন বলে জানা গেছে। যা গঠনতন্ত্র বিরোধী বলে অনেকেই সমালোচনা করছেন। যদিও ভূরি ভূরি প্রমাণ রয়েছে এক নেতার একাধিক সম্পাদকীয় পদ আকড়ে ধরার।

আপাত দৃষ্টিতে এটাই স্পষ্ট, ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আর আ.লীগের সম্পাদকই চালাচ্ছেন কর্ণফুলী উপজেলা যুবলীগ! এরাই পাঁচ ইউনিয়নে যুবলীগের নতুন কমিটি ঘোষণা করে পদ পদবি দিচ্ছেন। ইতোমধ্যে জুলধা ও চরপাথরঘাটা ইউনিয়ন যুবলীগের কমিটি তার প্রমাণ। সাংগঠনিক কার্যক্রমে চাঙ্গা ভাব ফেরাতে তৃণমূল নেতাকর্মীদের পদে এনে ভালো কিছু করার চেষ্টা করছেন নাজিম-সেলিম।

বিশ্বস্ত সূত্র বলছে, কর্ণফুলী উপজেলা যুবলীগের কমিটি ভেঙ্গে দিতে পারে যেকোন সময়। এমন আশঙ্কায় তড়িগড়ি করে ইউনিয়ন কমিটি দেওয়ার দৌঁড় শুরু করেছে। নিজেদের পছন্দসই লোকদের কমিটিতে আনতে চেষ্টা করছেন। মাঠের নেতারা জানান, গত একযুগ থেকে ইউনিয়ন যুবলীগের ক্ষীণ অবস্থানকে গতিশীল ও সক্রিয় করতে রাজনীতির মাঠে সক্রিয় এবং ত্যাগী নেতৃত্বদের পদে আনা জরুরী হলেও সেটা সহজে বাস্তবায়ন হচ্ছে না, কমিটি দিতে না গড়িমসি ও হিসাব চক কষছেন।

এতে সাবেক ও বর্তমান ছাত্রনেতা যারা ছাত্রত্ব শেষে যুবলীগ করার অপেক্ষায় এমন একাধিক ছাত্রনেতাদের রাজনীতি বিকাশের পথ রুদ্ধ হচ্ছে। যদিও চট্টগ্রামে সাংগঠনিক সফরে এসে কেন্দ্রীয় যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নাঈম এবং কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুর রহমান সোহাগ জানিয়েছিলেন, সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদের বিরুদ্ধে যুবসমাজকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। জেলা, উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে যুবলীগকে সুসংগঠিত করতে হবে। যুবলীগের কমিটিতে ত্যাগী নেতা কর্মীদের মূল্যায়ণ করতে হবে। নিষ্ক্রিয় কর্মীদের যেনো স্থান দেওয়া না হয়। বিতর্কিত কোন লোককে যেন পদ দেয়া না হয়।

এমন পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় নেতাদের দিক নির্দেশনাও কর্ণফুলী যুবলীগ মানছে না। নিজেদের কমিটির মেয়াদ নেই। তাঁরাই আবার নতুন কমিটি গঠনের চিন্তা করেছেন। সব কিছুর হযবরল অবস্থা। কর্ণফুলীতে উপজেলা যুবলীগে ৭১ সদস্যের সর্বশেষ কমিটি হয়েছিল ২০১৭ সালের ২৭ জানুয়ারি। ফলে, উপজেলা যুবলীগের অনেক নেতাকর্মীরা চান, বিতর্কিত নেতাদের দূরে সরিয়ে নতুন নেতৃত্ব তৈরির। কেননা, দীর্ঘদিন একই ব্যক্তিরা দায়িত্বে থাকায় দিন দিন বেপরোয়া হয়ে ওঠেছে যুবলীগের কিছু নেতা।

গত দুই সপ্তাহে পাঁচ ইউনিয়নের একাধিক যুবলীগ নেতাকর্মী ও একদম তৃণমূল নেতাদের সাথে কথা হলে তাঁরা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হয়ে জানান, মাত্র কয়েক মাস পরেই জাতীয় নির্বাচন। এই মুহুর্তে যুবলীগে নাজিম উদ্দিন হায়দার ও মুহাম্মদ সেলিম হক কে খুব দরকার। বরং সম্মেলন হোক আর যাই হোক উপজেলা যুবলীগে তাঁদেরকেই রেখে সভাপতিকে ভারমুক্ত করা উচিত। কারণ কর্ণফুলীতে আওয়ামী লীগের চেয়ে যুবলীগ অনেক শক্তিশালী। এটা অটুট রাখতে তাঁদের দরকার রয়েছে। যে স্থানে নতুন কেউ এসে সহজেই হাল ধরতে পারবে না বলে মন্তব্যে জানান।

যদিও মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির বিষয় ও নিজে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হয়ে কিভাবে যুবলীগ চালাচ্ছেন এমন প্রশ্ন করলে কাগজে কলমে কর্ণফুলী উপজেলা আওয়ামী যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ সেলিম হক বলেন, ‘জেলা কমিটি যদি সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করে তাহলে অবশ্যই সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন একটি কমিটি হবে। তবে যতটুকু জানি এখনো জেলার সব ইউনিয়নের সম্মেলন এখনো হয়নি। পুরো জেলায় ইউনিয়নের সম্মেলন হলে তারপর উপজেলা যুবলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। যুগ্ম সম্পাদক আওয়ামী লীগের মূল পোস্ট না হওয়াতে আওয়ামী লীগে এখন না গেলেও আমার তেমন প্রভাব পড়বে না দলে। তাই যুবলীগে এখনো আছি। তাছাড়া যুবলীগের গঠনতন্ত্রে আওয়ামী লীগে থাকলেও যুবলীগে দায়িত্ব পালন করতে পারবে না এই ধরনের কোনো নির্দেশনা নেই।’

অন্য প্রসঙ্গে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নাজিম উদ্দিন হায়দার বলেন, ‘আগে কর্ণফুলী যুবলীগ কেমন ছিল তা আমি বলব না। বর্তমান যুবলীগকে শক্তিশালী ও উজ্জ্বিবিত করতে অনেক ভালো ভালো কর্মসূচি নিচ্ছি। আমি দায়িত্ব নেবার পর দুই ইউনিয়নে কমিটি দিয়েছি। আগষ্টের পরে আরও তিন ইউনিয়নে কমিটি দেওয়া হবে। আমি যুবলীগকে একটা শুশৃঙ্খল ব্র্যান্ডে পরিণত করতে চাই। আগামী নির্বাচনের আগে যেন কর্ণফুলীর প্রতিটি পড়া মহল্লা থেকে যুবলীগের কর্মী বাহিনী গড়ে উঠে।’

সেলিম হক যেহেতু উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সে হিসেবে তিনি দুদিকে দায়িত্ব পালন করলে যুবলীগের সভাপতি হিসেবে আপনার কোন সমস্যা হয় কিনা জানতে চাইলে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আরও বলেন,‘ না সমস্যা হবার কথা নয়। কারণ উনাকে আ.লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে তা ঠিক। কিন্তু এ পর্যন্ত এখনো তিনি আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক হিসেবে কোন অনুষ্ঠানে যায়নি। হয়তো যাবেও না।’

চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী যুবলীগের সভাপতি দিদারুল ইসলাম চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক জহুরুল ইসলাম জহুর এর মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও তাঁরা কেউ ফোন রিসিভ না করায় মন্তব্য যুক্ত করা সম্ভব হয়নি।

এমনকি দীর্ঘদিন যারা উপজেলায় দায়িত্বে ছিলেন তাঁরা কেন এতদিন ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড কমিটি দিতে পারেননি এমন প্রশ্ন করা হলেও যুবলীগের সাবেক সভাপতি বর্তমান উপজেলা আ.লীগের সম্পাদক মো. সোলায়মান বলেন, ‘আসলে আমরা চেষ্টা করলেও নানা কারণে সে সময় তা করতে পারিনি। করোনাও ছিল। এখন তো সম্মেলন হয়েছে। আশা করি যাঁরা দায়িত্বে আছেন তাঁরা নিশ্চয় বিষয়টি দেখবেন বলে তিনি মন্তব্য করেন।’

(জেজে/এসপি/আগস্ট ০২, ২০২৩)

পাঠকের মতামত:

০৩ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test