E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ফরিদপুরে কার্বন ফ্যাক্টরীতে পরিকল্পিত অগ্নিকাণ্ডের অভিযোগ, ১৩ দিনেও মামলা নেয়নি পুলিশ

২০২৩ আগস্ট ০৪ ১৮:২৪:০৯
ফরিদপুরে কার্বন ফ্যাক্টরীতে পরিকল্পিত অগ্নিকাণ্ডের অভিযোগ, ১৩ দিনেও মামলা নেয়নি পুলিশ

রিয়াজুল রিয়াজ, বিশেষ প্রতিনিধি : ফরিদপুর বোয়ালমারী থানায় খানখরদী গ্রামে অবস্থিত কে এইচ কার্বন ফ্যাক্টরীতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে গত ২২ জুলাই বিকাল সাড়ে তিনটায়। ফরিদপুর ফায়ার সার্ভিসের ৩ টি ইউনিটের প্রচেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার আগে পুড়ে যায় কে এইচ কার্বন ফ্যাক্টরি'র গোডাউন। এতে প্রায় ৩ কোটি ২৫ লাখ ৫০ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন ফাক্টরীটির বর্তমান মালিক মোঃ হিরু মুন্সী।

কে.এইচ কার্বন ফ্যাক্টরীর অগ্নিকাণ্ড একটি স্পট নাশকতা, ওই গোডাউনে অগ্নিসংযোগ করা ৩ ব্যক্তির পরিচয়, প্রত্যক্ষদর্শীদের নাম-ঠিকানা, এবং উক্ত অগ্নিকাণ্ডে ক্ষয়-ক্ষতির পরিমান উল্লেখ করে অগ্নিকাণ্ডের পরের দিন (২৩ জুলাই) এই বিষয়ে স্থানীয় বোয়ালমারী থানার একটি অভিযোগপত্র জমা দেন কেএইচ কার্বন ফাক্টরীর জেলারেল ম্যানেজার মোঃ শহিদ মিয়া (৬০)। কিন্তু গত ১৩ দিনেও সেই অভিযোগপত্রটি আমলে নেইনি পুলিশ।

উক্ত বিষয়ে জানতে চাইলে ফরিদপুরের বোয়ালমারী থানার ওসি আব্দুল ওয়াহাব মিয়া দৈনিক বাংলা ৭১ কে জানান, 'অভিযোগ নেই নাই এটা বললে ভুল হবে, অভিযোগটি অসম্পূর্ণ তাই এটি আমলে নেই নাই।' ওসি আব্দুল ওয়াহাব আরো জানান, যাদের বিরুদ্ধে অগ্নিসংযোগের অভিযোগ করেছে তারা ওই ফ্যাক্টরীর মুল মালিক খন্দকার রুহুল আমিনের লোক। বর্তমান মালিক ভাড়ায় চালান।' এক প্রশ্নের জবাবে এই পুলিশ কর্মকর্তা আরো জানান,'মামলা নিতে সমস্যা নেই। আমি পরামর্শ দিয়েছি, 'মুল মালিকের সাথে কথাবার্তা বলে সম্পুর্ণ একটা অভিযোগ দিতে। গোডাউন ঘরটি পুড়েছে তার একটি ক্ষতি হয়েছে। অন্যদিকে গোডাউন ঘরের মধ্যে থাকা বর্তমান মিল মালিকের সম্পদ পুড়েছে তারও একটা ক্ষতি হয়েছে। তাই বলছি দুইজনের সর্বমোট ক্ষতির পরিমাণ উল্লেখ পুর্বক একটা অভিযোগপত্র এনে দুইজন মিলে জমা দিন। আমি মামলা নিবো।' আরেক প্রশ্নের জবাবে ওসি আব্দুল ওয়াহাব আরো জানান, 'আমি কোন পক্ষ নিচ্ছি না, এই ফ্যাক্টরীর মুল মালিক নোয়াখালী জেলার সোনাইমুড়ী উপজেলা চেয়ারম্যান ও স্থানীয় থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি। আমি অগ্নিকাণ্ডের কয়েকদিন পর তদন্তে গিয়ে ফ্যাক্টরীতে রুহুল আমিন সাহেবের সাথে আমার দেখা হয় এবং কথা হয়। তিনি বলেছেন, এইখানে তার লোকের বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হয়েছে। এইগুলো মিটমাট করে আসুক মামলা নিবো।' তিনি আরো বলেন, ওই ফ্যাক্টরীতে হিরু মুন্সীর সিসি কাামেরা লাগালো না কেনো? সেটা থাকলে তো আমরা সহজে বের করতে পারতাম।'

এসব বিষয়ে কেএইচ ফ্যাক্টরীটি ভাড়া নিয়ে পরিচালনা করা বর্তমান মালিক মোঃ হিরু মুন্সী দৈনিক বাংলা ৭১ কে বলেন, 'ফ্যাক্টরীটি আমি যার থেকে ভাড়া নিয়েছি সেই খন্দকার রুহুল আমীন সাহেব নোয়াখালীর একটি উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা তাই আমার উপর প্রভাব খাটাচ্ছেন। টাকা ও দলীয় প্রভাবের অপব্যবহার করছেন তিনি।' বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ প্রেসিডিয়াম মেম্বার আব্দুর রহমানের স্থানীয় একজন একনিষ্ঠ কর্মী দাবী করা ও অগ্নিকাণ্ডটিতে প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হওয়া ফ্যাক্টরীটির বর্তমান মালিক মোঃ হিরু মুন্সী আরো জানান, 'আমার বিরুদ্ধে নিশ্চয়ই ষড়যন্ত্র করছেন রুহুল আমীন সাহেব। তিনি আমার কাছে ফ্যাক্টরী ভাড়া দেওয়ার পর থেকেই বিভিন্ন তাল বাহানা করে আসছেন। চুক্তি করে টাকা নিয়েছেন, ভাড়া দিয়েছেন কিন্তু তবুও দীর্ঘদিন তিনি ফ্যাক্টরীর চাবী হস্তান্তর করেননি। বেশ কিছুদিন ঘুরে পরে চাবি পেয়ে ফাাক্টরী চালু করতে হয়েছে আমার। ফ্যাক্টরীতে তার কিছু কর্মকর্তা কর্মচারী বহাল রাখার অনুরোধ করলে আমি রেখে দেই। কিন্তু ফাাক্টরী আইন শৃঙ্খলা বহির্ভূত কর্মকাণ্ড ও ফ্যাক্টরীর ক্ষতি হয় এমন নানাবিদ সন্দেহজনক কর্মকাণ্ডের কারণে আমি চাকরীর চার মাস পরেই অভিযোগে উল্লেখিত ১নং আসামী রেজাউল মাতুব্বর (৪০) পিতা: আত্তাব মাতুব্বর, ২নং আসামী বকুল শেখ (৫৫) পিতা: মোঃ বারেক শেখ ও ৩নং আসামী সবুজ (৪২) পিতা: মোঃ শাহজাহান মিয়াকে আমি চাকুরী থেকে অব্যহতি দেই। এই তিনজনই রুহুল আমীন সাহেবের খাস লোক ছিলো এখন বুঝতে পারছি। আগুন সন্ত্রাস করে আমার ফ্যাক্টরীর গোডাউন পুড়িয়ে দিয়েছে ওই তিন সন্ত্রাসী। আগুন লাগার সাথে সাথে রুহুল আমীন সাহেবকে বারবার ফোন দিয়েছি কিন্তু তিনি ফোন ধরেননি। আমাকে সর্বশান্ত করে দিয়েছে তারা। আজ যিনি আওয়ামী লীগের নাম ভাঙিয়ে, দলীয় প্রভাব খাটিয়ে ও টাকা পয়সা খরচ করে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসকে হাতের মুঠোতে নিয়ে খেলছেন তিনি এই কাজ আসামীদের দিয়ে করিয়েছেন কিনা তদন্ত করে দেখার প্রয়োজন আছে।' হিরু মুন্সী আরো বলেন, 'আমি কাল পর্যন্ত দেখবো এর মধ্যে পুলিশ আমার ফ্যাক্টরী জেনারেল ম্যানেজার মোঃ শহিদ মিয়ার করা মামলাটি আমলে না নিলে, এই বিষয়ে আগামী রবিবার ফরিদপুর প্রেস ক্লাবে মানববন্ধন করে, প্রযোজনে কোর্টে মামলা করে বিচার বিভাগীয় তদন্ত চাবো। আমি যা বুঝার বুঝে গেছি।'

মোঃ হিরু মুন্সীর ফ্যাক্টরী জিএম ও উক্ত অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার মামলার বাদী মোঃ শহিদ মিয়া ফায়ার রিপোর্ট নিতে গতকাল (৩ আগস্ট) ফরিদপুর জেলা ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক মোঃ আসাদুজ্জামান এর সাথে দেখা করতে গেলে, তার সাথে আসাদুজ্জামান রহস্যজনক কারণে অশোভন আচরণ করেন বলে জানান শহিদ মিয়া।

এই বিষয়ে অবগত হওয়ার পর ফরিদপুর ফায়ার সার্ভিসের ওয়েব সাইডে থেকে নেয়া জেলা ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক (এডি) মোঃ আসাদুজ্জামানের মুঠোফোনে ফোন করলে তিনি ফোনটি রিসিভ করেন, এবং এই প্রতিবেদকের নাম পরিচয় শুনে ফোনটি কেটে দেন। তারপর একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি আর ফোন ধরেননি।

উল্লেখ্য, মামলার অভিযোগ মতে, গত ২২ জুলাই বিকাল ৩ টার দিকে তিনজন দুর্বৃত্ত ফরিদপুর জেলার বোয়ালমারী উপজেলায় অবস্থিত কেএইচ কার্বন ফ্যাক্টরীতে ডুকে বিকাল সাড়ে ৩ টার দিকে তারা ওই ফ্যাক্টরীর গোডাউনে আগুন লাগিয়ে পালিয়ে যায়। আগুন দিয়ে পালিয়ে যেতে দেখেছেন ফ্যাক্টরীর কিছু কর্মকর্তা কর্মচারী। আগুণ নিয়ন্ত্রণে কাজ করে ফরিদপুর জেলা ফায়ার সার্ভিস, বোয়ালমারী ও মধুখালি থানা ফায়ার সার্ভিসসহ ফায়ার সার্ভিসের একাধিক ইউনিট, ফ্যাক্টরীর কর্মকর্তা-কর্মচারী ও স্থানীয় জনগণ। উক্ত অগ্নিকাণ্ডে সর্বমোট প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে অনুমান করা হচ্ছে।

(আরআর/এএস/আগস্ট ০৪, ২০২৩)

পাঠকের মতামত:

১৮ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test