মাদারীপুর শহরের সড়কগুলো বেহাল, সাধারণ মানুষের ক্ষোভ

বিশেষ প্রতিনিধি, মাদারীপুর : মাদারীপুরের পৌর শহরের ভিতরের জনগুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোর বেহাল অবস্থা। সড়কের বিভিন্নস্থানে বড় বড় গর্ত হয়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষের চলাচলে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। এতে করে সাধারণ মানুষদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা যায়। দ্রুত সড়কগুলো সংস্কারের দাবী জানিয়েছেন শহরবাসী।

সরেজমিনে দেখা যায়, মাদারীপুর জেলার প্রধান বাণিজ্যিক কেন্দ্র হচ্ছে পুরানবাজার। শুধু শহরবাসী নয় এই বাজারে উপজেলার মানুষজনকেও নানা প্রয়োজনে আসতে হয়। এখানে কাচা-বাজার, আসবাবপত্র, ফার্ণিচার, কাপড়, জুতা, স্যান্ডেলসহ সমস্ত প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনা কাটা করতে আসতে হয়। এছাড়াও পুরানবাজারের জেলার বেশির ভাগ ব্যাংকগুলো গড়ে উঠায় লেনদেনের জন্যই এই সড়ক ব্যবহার করতে হচ্ছে।

শহীদ বাচ্চু সড়ক : কালকিনি, রাজৈর উপজেলারসহ পশ্চিম দিকের পুরানতন বাসস্ট্যান্ড, নতুন বাসস্ট্যান্ড, ইটেরপুল, গোলাবাড়ি, থানতলী, পাকদী, খাগদী, চরমুগরিয়া, কুমারটেড, কালীরবাজার, শ্রীনদী, দুধখালী, মস্তফাপুর, ঘটকচরসহ বিভিন্ন এলাকার মানুষজনে পুরানবাজার ঢুকতে এই পথটি ব্যবহার করতে হচ্ছে। এছাড়াও পুরাতন বিসিকে যাতায়াতের জন্যইও এই সড়ক দিয়ে মালামাল আনা নেয়া করতে হচ্ছে। অথচ এত গুরুত্বপূর্ণ শহীদ বাচ্চু সড়কটির অবস্থা খুব খারাপ। এই সড়কের একটি বড় অংশজুড়ে তরমুগরিয়া এলাকা থেকে কাজীর মোড় পর্যন্ত বেশ কয়েকটি জায়গায় বড় বড় গর্ত হয়েছে। আবার কিছু জায়গায় খোয়া-পিচ উঠে গেছে। সেই সাথে বর্ষা মৌসুম হওয়ায় সড়কের গর্তগুলো পানিতে ভরে থাকে। ফলে এই সড়ক দিয়ে প্রতিদিন শত শত যাতায়াতকারীরা ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। এছাড়াও এই সড়কে রয়েছে সামসুন্নাহার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়। এই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদেরও এই সড়ক দিয়ে চলাচল করতে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।

এছাড়াও শহীদ বাচ্চু সড়কটি ঈদুল-উল-ফিতরের কয়েকদিন আগে সংস্কার করলেও বর্তমানে এই অবস্থা হওয়ায় শহরবাসীর মধ্যে ক্ষোভ আরো বেশি দেখা গেছে।

রেন্ডিতলা সড়ক : শহরের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক হচ্ছে পুরানবাজারের রেন্ডিতলা সড়ক। এই সড়কটিরও বেহালদশা। পুরানবাজারের রেন্ডিতলা থেকে মিলন সিনেমা হল হয়ে আমিরাবাদ সড়কেরও একই অবস্থা। এই সড়কটি দিয়ে পানিছত্র, কুলপদ্বি, ছিলারচর, মঠেরবাজার, খোয়াজপুর এলাকাসহ শহরের পূর্ব ও দক্ষিণ দিকের সব মানুষজনকে এই সড়ক দিয়ে যাতায়াত করতে হয়। এই সড়কেরও একই অবস্থা। বড় বড় গর্তসহ নানা জায়গায় খোয়া-পিচ উঠে গিয়ে চলাচলে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।

এছাড়াও এই দুই সড়কের মাঝখান দিয়ে পুরানবাজারের দিকে গেছে ডা. সিরাজুল ইসলাম তোতা ও আ. হামিদ সড়ক। এই সড়কেরও বেশ কিছু জায়গায় গর্ত ও খোয়া-পিচ উঠে গেছে।

অপরদিকে শহরের উত্তরদিকের বসবাসকারীদের এই সড়কগুলো দিয়েই সদর হাসপাতাল, থানাসহ জেলার বাহিরে যেতে হচ্ছে। অথচ এতো জনগুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোর এই অবস্থা হওয়ায় শহরবাসীর মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।

ইউআই সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় সড়ক : মাদারীপুর ইউনাইটেড ইসলামিয়া সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের সড়কটিও দীর্ঘদিন ধরে বেহালদশা। এই সড়ক জুড়ে ছোট-বড় গর্তসহ বিভিন্ন জায়গায় খোয়া ও পিচ উঠে গেছে। এতে করে এই বিদ্যালয়ে পড়া শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের প্রতিদিনই পড়তে হচ্ছে ভোগান্তিতে। এছাড়াও সড়কগুলোতে ছোট খাট দুর্ঘটনা লেগেই থাকে। তাছাড়া এই সড়কটিতে একটু বৃষ্টি হলেই পানিতে ভরে যায়। তখন পড়তে হয় আরো ভোগান্তিতে। জেলা সদরের একমাত্র সরকারী বালক বিদ্যালয়ের সড়কটির এই অবস্থা থাকায় সচেতনমহল ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

ইউ আই সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের অস্টম শ্রেণীর ছাত্র সিয়াম সরদার বলেন, আমাদের স্কুলের যাতায়াতের এই সড়কটির অবস্থা খুব খারাপ। তাই সরকার যেন এই সড়কটি দ্রুত মেরামত করে দেন।

ইউআই সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের সড়কটি দিয়ে প্রতিদিন যাতায়াতকারী অভিভাবক ফারজানা আক্তার বলেন, এই পথ দিয়ে প্রতিদিনই যাতায়াত করতে হয়। সড়কটির বিভিন্ন জায়গায় ভাঙ্গা। এমনকি ইউআই সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান গেটের সমানের সড়কেও বেশ ভাঙ্গা। তাই চলাচল করতে আমাদের সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। এমনকি প্রায় সময় আমার বাচ্চার ড্রেসে কাদা-মাটি লেগে নষ্ট হয়ে যায়। তাই দ্রুত এই সড়কটি মেরামত দরকার।

পথচারী জয়ন্তি মল্লিক বলেন, এই সড়ক দিয়ে ইউআই স্কুলের শিক্ষার্থীরা আসা-যাওয়া করে। অনেক ভাঙ্গাচুড়া সড়কটি। তাই এটি মেরামত করা জরুরি।

পুরানবাজারের কাজীরমোড় এলাকার ফার্নিচার ব্যবসায়ি মো. নুরু হাওলাদার বলেন, শহীদ বাচ্চু সড়কটির অবস্থা খুব খারাপ। এখানে আমাদের কাজ করতে নানা সমস্যা হচ্ছে। কাস্টমারও ঠিকমতো আসে না। তাই দ্রুত এটি মেরামত দরকার।

পুরানবাজারের ভ্যানগাড়িতে করে ফল বিক্রেতা মো. সাকিল বলেন, আমি ঘুরে ঘুরে ফল বিক্রি করি। এই সড়ক দিয়ে প্রতিদিন যাতায়াত করতে হয়। কয়েকদিন আগে গর্তে পড়ে ভ্যানগাড়ি উল্টে গিয়ে আমার সব ফল নষ্ট হয়ে গেছে। শুধু আমার না, এই পথ দিয়ে চলাচলকারী সবাইকে নানা সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। তাই এটি দ্রুত সংস্কার করা দরকার।

অটোচালক আল-আমিন বলেন, এই সড়কটি রোজার ঈদের সময় ঠিক করেছে। কিন্তু এত অল্প সময়ের মধ্যেই এই সড়কের এই ভয়াবহ অবস্থা হয়েছে।

মাদারীপুরের সচেতন নাগরিক কমিটির সভাপতি ইয়াকুব খান শিশির বলেন, শহরের সড়কগুলোর যে অবস্থা। তাতে করে চলাচল করাই কষ্টকর। এই সড়কগুলোর জন্য সাধারণ মানুষের ভোগান্তির যেন শেষ নেই। পৌরসভার কর্তৃপক্ষের কাছে এই সড়কগুলো দ্রুত মেরামতের দাবী জানাই।

মাদারীপুর পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সাইদুর বাশার টফি বলেন, শহীদ বাচ্চু সড়কটি খুবই ব্যস্ত সড়ক। এখান দিয়ে বহু মানুষ ও যানবাহন চলাচল করে। বিশেষ করে বিসিকে যাতায়াতের জন্য ভারী যানবাহন চলাচল করে। এই সড়কের বেশ কিছু জায়গায় ড্রেন নেই। মূলত ঐ সব জায়গায় বৃষ্টির পানি জমে এই গর্তের সুষ্টি হয়েছে। কার্পেটিং সড়কের জন্যই তাড়াতাড়ি সড়কের এই অবস্থা হয়। বৃষ্টি একটু কমলেও আশা করছি আগামী ১৫ দিনের মধ্যেই সড়কটির সংস্কারের কাজ করা হবে। তাছাড়া আগামী বছর ড্রেনসহ সড়কটি উন্নয়নকরণ করা হবে বলে আশা করছি।

মাদারীপুর পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী শেখ মো. আবুল কালাম বলেন, শহীদ বাচ্চু সড়কটি শীঘ্রই মেরামত করা হবে। ইতিমধ্যেই ঠিকাদারকে বলা হয়েছে। বৃষ্টির কারণে কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না। বৃষ্টি একটু কমলেই কাজ ধরা হবে। এছাড়া ইউআই সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের সড়কটি বড় প্রকল্পের কাজ হবে। তাই সেই প্রকল্পের কাজ এগুচ্ছে। আশা করছি আগামী সেপ্টেম্বর মাসে এ ব্যাপারে টেন্ডারের আহবান করা হবে। তাছাড়া শহরের যে সড়কগুলো ভেঙ্গে গেছে সবগুলোই পর্যাক্রমে মেরামত করা হবে।

(এএসএ/এসপি/আগস্ট ০৭, ২০২৩)