E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

১৯ বছর স্প্লিন্টারের আঘাত বয়ে বেড়াচ্ছেন টুকু

২০২৩ আগস্ট ২১ ১৯:৪৩:৩৫
১৯ বছর স্প্লিন্টারের আঘাত বয়ে বেড়াচ্ছেন টুকু

স্বাধীন মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ, যশোর : একুশে আগস্টে গ্রেনেড হামলায় আহত হওয়া যশোরের কে এম সফিকুল ইসলাম টুকু ১৯ বছর ধরে স্প্লিন্টারের আঘাত বয়ে বেড়াচ্ছেন। তিনি ছিলেন তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত দেহরক্ষী। ভয়াল সেই স্মৃতি মনে উঠলে এখনও বিমর্ষ হয়ে পড়েন তিনি। নিজের জীবন বাজি রেখে নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করা এ মানুষটি এখন কেশবপুরের ভাড়া বাসায় পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। মনে এখন তাঁর জমাট দুঃখ। কষ্টে দিন পার করলেও বুঝতে দেন না কাউকে।

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার দিনে সফিকুল ইসলাম টুকু আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত দেহরক্ষী দলের (পিএসএফ) ১৮ সদস্যের হিসেবে দায়িত্বরত ছিলেন। ওই দিন ২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে শেখ হাসিনার জনসভায় ট্রাকের উপরে সভামঞ্চের সামনে তিনি নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছিলেন।

বর্তমানে মানবেতর জীবন-যাপনের খবর পেয়ে তাঁর ভাড়া করা কেশবপুরস্থ বাসায় গেলে সেই দিনের অনেক ঘটনা স্মৃতিচারণ করেন। স্মৃতিচারণ করতে যেয়ে সফিকুল ইসলাম টুকু বলেন, ঘটনার দিন বেলা সাড়ে ৩টার দিকে সভা শুরু হয়। নেত্রী (শেখ হাসিনা) বিকেল আনুমানিক ৫টায় সভাস্থলে পৌঁছান। এরপর ট্রাকের তৈরি মঞ্চে উঠে দীর্ঘ ২০ মিনিট বক্তৃতা করেন। বক্তৃতা শেষ করে জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু বলে মাইক থেকে সরে যাওয়ার মূহুর্তে একটি গ্রেনেড দক্ষিণ দিক থেকে ট্রাকের পাশের ডালার উপরে পড়ে। ওই সময় সামনে থাকা জনতার ভেতর গ্রেনেডটি বিস্ফোরিত হয়। তখনই আমরা ও দলীয় নেতাকর্মীরা মানববর্ম তৈরি করে নেত্রীকে ট্রাক থেকে দ্রুত নামিয়ে মার্সিডিজ বেঞ্জ গাড়িতে তুলে দিই।


তিনি আরও বলেন, ওই হামলার সময় নেত্রী (শেখ হাসিনা) যখন ঘটনাস্থল ত্যাগ করছিলেন তখন তিন থেকে সাড়ে তিন মিনিটের ব্যবধানে একাধিক গ্রেনেড বিস্ফোরিত হয়ে এলাকা ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে যায়। সে সময় আমিও স্প্লিন্টারবিদ্ধ হই। চারদিক থেকে মানুষের আর্তনাদ শোনা যাচ্ছিল। কাছ থেকে দেখেছি কারও হাত নেই, কারও পা নেই আবার কারও নিথর দেহ মাটিতে পড়ে আছে। আমাদের সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার নেত্রকোনার নিহারঞ্জন ধরের এক পায়ের হাটুর নিচে গ্রেনেডে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্থ হয়। হাসপাতালে নিয়ে অসুস্থ অবস্থায় তাকে আমি রক্তদান করি। চোখের সামনে ঘটে যাওয়া সেই ভয়াল স্মৃতি মনে করলে আজও বিমর্ষ হয়ে পড়ি। এর মধ্যেও আওয়ামী লীগের নীতি আদর্শ নিয়ে সাধারণ মানুষকে সুসংগঠিত করে দলের সকল কর্মকান্ডে নিজেকে সম্পৃক্ত করে রেখেছি। কিন্তু শারীরিক যন্ত্রণা আর চিকিৎসা ব্যয়ে এখন মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়তে হচ্ছে। নিজের আহত হওয়ার বিষয়ে বলতে বলতে অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়েন তিনি। চোখ মুছতে মুছতে বলেন স্প্লিন্টারবিদ্ধ হওয়ার পরে শরীরে অস্ত্রোপচার করি। আজও পিঠসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় স্প্লিন্টারের ক্ষতস্থানে যন্ত্রণায় কাতর হই।

শারীরিক অসুস্থতার কারণে ২০১০ সালে ঢাকা থেকে আমি গ্রামের বাড়ি যশোরের মণিরামপুর উপজেলার গৌরিপুরে ফিরে আসি। সেখানে কিছুদিন থাকার পর কেশবপুর শহরের উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন এলাকায় পরিবার নিয়ে বসবাস করছি। ঢাকা ও যশোর থেকে চিকিৎসা নিয়েছি। এখনও আমাকে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ খেতে হয়। বর্তমানে আমার হার্টের সমস্যাও ধরা পড়েছে। সংসারে স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। ছেলে সেলিমুল হাসনাঈন খান সার্জেন্ট পুলিশ ও মেয়ে সারারা ইসলাম লেখাপড়া করছেন। বর্তমানে স্ত্রীও অসুস্থ। আমি ও আমার স্ত্রীর চিকিৎসাসহ মেয়ের লেখাপড়ার ভার বহন করতে গিয়ে প্রতিনিয়ত সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। একপ্রকার মানবেতর জীবন-যাপন করছি।

মনে জমা দুঃখের সঙ্গে বলেন, সে সময় নেত্রীর সঙ্গে দেখা করতে যারা আমার সহযোগীতা নিতেন। তাঁদের অনেকেই আজ এমপি-মন্ত্রী। তারাও আমার খোঁজ নেন না। শুধু তাই নয়, কেন্দ্রের কেউ এখন মনে করেন না।

(এসএমএ/এএস/আগস্ট ২১, ২০২৩)

পাঠকের মতামত:

১৯ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test