E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

দীর্ঘ সময় অপেক্ষা শেষে মেলে ওএমএস এর চাউল, আটা

২০২৩ সেপ্টেম্বর ০৩ ১৪:২২:৫১
দীর্ঘ সময় অপেক্ষা শেষে মেলে ওএমএস এর চাউল, আটা

স্বাধীন মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ, যশোর : দ্রব্য মূল্যের উর্ধ গতির কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। সমাজের মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষদের কম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে না। বিশেষ করে খেটে খাওয়া দিন মজুর যারা দিন আনে দিন খায়। এরা নিজের ক্ষেতে কাজ করে আশানুরোপ ফলন ঘরে তুলতে পারছে না।

অন্যদিকে অপরের ক্ষেতে কাজ করে যে সামান্য মজুরি পাচ্ছে তা দিয়ে সংসারের ব্যয় ভার বহন করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ছে। নিজের ক্ষেত না থাকা ভ্যান চালক, রিকসা চালক, মুটে, টল দোকানদার, হকার, বিভিন্ন দোকান ও কারখানার কর্মচারিরাও হিমশিম খাচ্ছে সংসার চালাতে। তাদের নির্ধারিত সামান্য মজুরিতে ২/৫ জনের খাবার চাহিদার ব্যয় বহন করা দুরুহ ব্যাপার। তারপরও জীবনের প্রয়োজনে বেঁচে থাকার তাগিদে চালিয়ে যেতে হচ্ছে টিকে থাকার সংগ্রাম।

দুবেলা দুমুঠো ভাতের বন্দবস্ত করতে ছুটতে হচ্ছে ভোর থেকে গভীর রাত অবধি। স্বল্প মূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রি কিনতে ধন্না দিতে হচ্ছে ওপেন মার্কেট সেল (এএমএস) নাম সরকারি ভর্তুকি দান কৃত অনুমোদিত ডিলার পয়েন্টে। সেখানে মাথা প্রতি ৩০ টাকা কেজি দরে ৫ কেজি চাল, ২৪ টাকা কেজি দরে ৫ কেজি আটার জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে ঘন্টার পর ঘন্টা। তবে সবার ক্ষেত্রে এই অপেক্ষার ফল যে সুমিষ্টি হচ্ছে তেমনটা নয়।

অনেকের পরিবারে ডায়বেডিসের রোগী থাকার কারণে আটার চাহিদা থাকছে। সেই আটার চাহিদা মেটাতে গভীর রাত থেকে ওয়ার্ডের নির্দিষ্ট ডিলার পয়েন্টে দিতে হচ্ছে লম্বা লাইন। কেননা সকাল ৯ টা থেকে এই সব ডিলার পয়েন্টে আগে ভাগে আটা বিক্রি করা হয়। আটার চাহিদা শেষ হলে বিক্রি শুরু হয় চাউল। তবে ক্রেতার চাহিদা থাকার পরও আটা মজুত না থাকাতে অনেক ডিলার আটা বিক্রি করতে পারেন না। দেখা গেছে পরিবারের অন্যন্য সদস্যরা বাইরে অন্য কাজের সাথে যুক্ত থাকেন। যে কারণে পরিবারের বয়স্ক বাবা, মা চাউল, আটার কেনার জন্য ডিলার পয়েন্টে অপেক্ষা করে। বয়সের ভারে নুয়ে পড়া এই সব মানুষের চোখে মুখে নিরবতা। মায়াবি চোখে অপলক চেয়ে থাকা এই নিরবতা যেন শেষ হতেই চাই না।

যশোর শহরে ঘুরে ঘুরে সরকার অনুমোদিত ১২ টি ওপেন মার্কেট প্লেস(এএমএস) এর ডিলার পয়েন্ট দেখা গেছে। সেখানে মানুষ গভীর রাত থেকে লম্বা লাইনে অপেক্ষা করে স্বল্প মূল্যে চাউল, আটা কেনার জন্য। সেখানে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের সাথে কথা বলে জানা গেছে অনেকের সংসারে আয় রোজগার করার মানুষ নেই। কেউ বিধবা, কেউবা স্বামী পরিত্যাক্ত অসহায় নারী। বয়স্ক পিতার কাজ করার ক্ষমতা নেয়। সন্তান বাইরে কাজ করতে গেছে। পিতা ভোর রাতে একটা প্যাকেট হাতে নিয়ে এসে দাঁড়িয়েছে লম্বা লাইনে। কেউ সকালের খাবার সাথে করে এনেছে। কেউ দোকান থেকে একটা রুটি, এক কাপ চা খেয়েই অপেক্ষা করে যাচ্ছে।

খড়কি থেকে ওএমএস এর চাউল আটা নিতে আসা সায়রা বেগম জানান, তার সংসারে ৩ জন লোক। স্বামী মারা গেছেন। তাকেই সংসার চালাতে হয়। কম দামে চাউল, আটা কিনতে পারলে তার একটু সুবিধা হয়। সে কারণে ভোরে এসে লাইনে বসেছেন।

বাগমারার বয়স্ক বৃদ্ধা নিফা দত্ত জানান, সে আটা নিতে আসে। নিয়মিত আটা পায়। ডিলার কোনো দিন আটা না দিয়ে ফেরত পাঠায়নি। আটা নিতে আসলে দিন মার যায়। সাড়ে ৯ টাই স্লিপ দেয়।ছেলেরা আসলে তাদের কাজ মার যাবে। ঘরের বউদের এখানে পাঠানো যাবে না। সে কারণে তিনি সকালে না খেয়ে আটা নিতে এসে বসে চা পাউরুটি খাচ্ছেন।

স্টেশনপাড়ার কামরুনাহার জানান, কিছু কিছু ডিলার তার নিজের ভাড়া করা লোক দিয়ে চাউল আটা তুলে নিয়ে ব্লাকে বিক্রি করে। ডিলারদের ভাড়াটিয়া সেই সব লোকেরা সাধারণ মানুষদের সাথে খারাপ ব্যবহার করে। এমনকি মারধরও করে থাকে।

বেজপাড়ার আনিছুর রহমান মোল্যা জানান, সে বড় ছেলের সংসারে থাকে। তারা এই ৫ কেজি চাউল নিয়ে ১০ জন সদস্য খায়। সরকারি ভাবে কার্ডের ব্যবস্থা করলে তাদের উপকার হবে।

ওএমএস ডিলার রফিকুল ইসলাম পিনু জানান, শুক্র শনিবার বাদে সপ্তাহে ৫ দিন চাউল আটা বিক্রি হয়। ১৭১ জনকে ৫ কেজি করে চাউল, ১৭১ জনকে ৫ কেজি করে আটা দেওয়া হয়।

সহকারি উপ খাদ্য পরিদর্শক মো. শাহিন আক্তার জানান, সপ্তাহে শুক্রবার, শনিবার বাদে ৫ দিন ডিলারদের মাধ্যমে ওএমএস চাউল, আটা বিক্রি করা হয়। প্রত্যেক ডিলার ১ টন চাউল, ১ টন আটা বরাদ্ধ পায়। কোনো মানুষ এসে যেন না ফিরে যায় সে জন্য ডিলারদের বলা হয়েছে যতক্ষণ চাউল, আটা থাকবে ততক্ষণ যেন দেওয়া হয়।

(এসএমএ/এএস/সেপ্টেম্বর ০৩, ২০২৩)

পাঠকের মতামত:

১৯ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test