E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ইতালি যাওয়ার স্বপ্নে লিবিয়ায় নিখোঁজ ভৈরবের ৬ যুবকের সন্ধান চায় পরিবার

২০২৩ নভেম্বর ০৩ ১৮:৪৭:৩৯
ইতালি যাওয়ার স্বপ্নে লিবিয়ায় নিখোঁজ ভৈরবের ৬ যুবকের সন্ধান চায় পরিবার

সোহেল সাশ্রু, কিশোরগঞ্জ : ইতালির যাওয়ার স্বপ্ন পূরণের আশায় দালালের খপ্পরে পড়ে লিবিয়ায় পাড়ি জমান ভৈরবের ৬ যুবক। পরিবারের স্বচ্ছলতা ও ইউরোপের স্বপ্ন পুরণের জন্য নির্ঘাত মৃত্যুর কথা জেনেও নৌকাযোগে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালি যেতে গিয়ে সাগরেই থেমে যায় হাজারো যুবকের স্বপ্ন। নৌপথে লিবিয়া থেকে ইউরোপ যেতে কয়েকশত কিলোমিটার সাগর পাড়ি দিতে গিয়ে বোট ডুবে সাগরের নিখোঁজ হওয়ার পাশাপাশি বাংলাদেশী ও লিবিয়ার দালালদের হাতে জিম্মি হয়ে মুক্তিপনের টাকা পরিশোধ ও শারিরীক নির্যাতনসহ প্রাণও হারাতে হয়েছে অনেককে। এসব নির্মমতার কিছু কিছু ঘটনা প্রকাশ পেলেও বেশিরভাগ ঘটনাগুলো থেকে যায় অজানা। ভুক্তভোগী পরিবারের লোকজন শেষ পর্যন্ত তাদের নিখোঁজ সন্তানদের সন্ধান ও দেশে ফেরত পাওয়ার আশায় অপেক্ষার প্রহর গুনে মাসের পর মাস, বছরের পর বছর। 

কিশোরগঞ্জের ভৈরবের কালিপুর মধ্যপাড়ার ৬ যুবক চলতি বছরের মার্চ মাসে ইতালি যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ থেকে লিবিয়া যায় সেলিম মিয়া নামে এক দালালের মাধ্যমে। ওই দালাল লিবিয়ায় অবস্থান করেন এবং তার নিকট আত্নীয়ের মাধ্যমে ইতালি পাঠানোর চুক্তিকৃত টাকা লেন দেন করে থাকেন।

খোঁজ নিয়ে জানাযায়, কালিপুর গ্রামের মোরাদ মিয়ার ছেলে নয়ন মিয়া (১৮), সিদ্দিক মিয়ার ছেলে ওমর ফারুক মবিন (২৩), গোলাপ মিয়ার আনোয়ার হোসাইন (৩২), আকবর আলীর ছেলে শিমুল (১৮), মোশারফ হোসেনের ছেলে আব্দুর রহমান (৪০), দ্বিন ইসলাম মিয়ার ছেলে রিফাত মিয়া (২৩) নামের ৬ যুবককে ইতালি পৌঁছে দেয়ার জন্য জনপ্রতি ১০ লাখ টাকা করে বডি কন্টাক করা হয় তাদের পরিবারের সাথে। লিবিয়া যাওয়া পর্যন্ত কয়েক ধাপে ব্যাংক চেক ও নগদে ৬ পরিবারের কাছ থেকে স্বজনদের মাধ্যমে মোট ৬০ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয় দালাল সেলিম। মার্চ মাসে ভুক্তভোগী ৬ যুবককে লিবিয়ায় নেয়ার পর সেখান থেকে মে মাসের ২০তারিখে ছোট নৌকায় ডাঙ্কি দিতে গিয়ে সাগর পাড়ের কাছেই নৌকা ফেটে গেলে কোন রকম জীবন বাঁচায় তারা।

বেঁচে যাওয়া যুবকরা ২২ মে, এঘটনা বাড়িতে জানালে। বাড়ি থেকে দালালকে ফোন করে চাপ দিলে পরর্বতীতে বড় নৌকায় ডাঙ্কি দেয়ার কথা বলে ফোন রাখে। এরপর থেকে ভুক্তভোগী পরিবারের লোকজন তাদের বিদেশগামী সন্তানদের সাথে যোগাযোগ বিছিন্ন হয়ে যায় গত ছয়মাস ধরে। তাদের সন্তানদের সন্ধান পেতে দলালের সাথে যোগাযোগ করেও কোনো সুরাহা মিলেনি। দালাল সেলিম বিভিন্ন সময় শান্তনামুলক কথা বললেও সঠিক কথা বলছেনা সে। সর্বশেষ মে মাসের ২৮ তারিখের পর থেকে স্বজনরা দালাল সেলিম মিয়াকে ফোন করে পাচ্ছে না।

এ ঘটনায় ভুক্তভোগী ৬ পরিবারের পক্ষে শিমুলের মাতা মোছা. রুবিনা আক্তার বাদী হয়ে ২সেপ্টেম্বর ২০২৩ খ্রি. কিশোরগঞ্জ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-২ এ চারজনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। মামলায় অভিযুক্তরা হলেন- মো: ইসমাইল (৪৯), মো: সারোয়ার মিয়া(২২), মো. সাহানুর মিয়া (২০) ও মোছা. রেখা আক্তার (২৫)। অভিযুক্তরা দালাল সেলিম মিয়ার পরিবারের লোকজন। তাদের মাধ্যমে বিভিন্ন সময় টাকা লেন দেন করা হতো। মামলাটি কিশোরগঞ্জ পিবিআই তদন্তধীন রয়েছে। অভিযুক্ত দালাল সেলিমের বাড়ী নরসিংদি জেলার রায়পুরা উপজেলার বাঁশগাড়ী গ্রামে। বর্তমানে তার পরিবারের লোকজন রায়পুর উপজেলার মুছাপুর ইউনিয়নের ফারকান্দি গ্রামে বসবাস করছে। এঘটনায় অভিযুক্তদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি।

আজ শুক্রবার সকালে সরেজমিনে কালিপুর গ্রামে ভুক্তভোগীদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় কান্নাকাটি করছে মহিলারা। তারা জানেনা তাদের সন্তানরা কেমন আছে, কিভাবে আছে, নাকি তারা বেঁচে নেই। কোন খবরই তারা জানেনা। ছয়মাস ধরে যোগাযোগ করতে পারছেনা কোন ভাবেই। দালালকেও খোঁজে পাচ্ছেনা তারা। দিনের পর দিন, মাসের পর মাস সন্তান হারানোর ব্যাথা ও চোখের জলে অপেক্ষার প্রহর গুনছে তারা। লিবিয়ায় নিখোঁজ যুবকদের সন্ধান চায় তারা, জীবিত বা মৃত, ফেরত পেতে চায় তাদের আদরের সন্তানদের। সরকারের প্রতি তারা আবেদন জানান নিখোঁজ যুবকদের সন্ধান পেতে যেন সরকার উদ্যোগ গ্রহণ করে।

(এসএস/এসপি/নভেম্বর ০৩, ২০২৩)

পাঠকের মতামত:

০৪ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test