E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Walton New
Mobile Version

ঈশ্বরদীর পদ্মা নদীতে বালু উত্তোলনে হুমকির মুখে রক্ষা বাঁধ 

২০২৩ নভেম্বর ২৯ ১৩:৩৮:৫৬
ঈশ্বরদীর পদ্মা নদীতে বালু উত্তোলনে হুমকির মুখে রক্ষা বাঁধ 

ঈশ্বরদী (পাবনা) প্রতিনিধি : ঈশ্বরদীর সাঁড়া ইউনিয়নের ইসলামপাড়া এলাকায় রক্ষা বাঁধের সন্নিকটে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনে মেতেছে বালু খেকোরা। এতে হুমকির মুখে পড়েছে ২০১৭ সালে দুই শতাধিক কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত রক্ষা বাঁধ। প্রভাবশালী কথিত যুবলীগ নেতার নের্তৃত্বে বালু উত্তোলন করা হলেও ভয়ে এলাকার লোকজন কেউই কিছু বলতে সাহস পায়না।

ইতোপূর্বে সাঁড়া ইউনিয়নের ৫ নম্বর ঘাট হতে ইসলামপাড়া এলাকা পর্যন্ত বাঁধের সন্নিকটে বালু উত্তোলন করায় নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়। এতে ওই এলাকার কিছু কিছু স্থানে শুরু হয়েছে নদী ভাঙন। ভাঙন শুরু হওয়ায় পদ্মা পাড়ের বাসিন্দারা আতংকিত। সাঁড়ার ব্লকপাড়া, থানা পাড়া ও ইসলামপাড়া এলাকার কিছু অংশ ব্যাপকভাবে ভেঙে ইতোমধ্যেই নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। ভাঙন ঠেকাতে এরইমধ্যে বালুর বস্তা ডাম্পিং করার কাজ চলছে। অপরিকল্পিতভাবে প্রতিদিন শত শত ট্রাক বালু উত্তোলনের কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে এলাকাবাসীদের অভিযোগ। বালু উত্তোলন প্রতিরোধে নৌ পুলিশের ভূমিকাও প্রশ্নবিদ্ধ।

বিগত ৫ জুন ঈশ্বরদী উপজেলা প্রশাসন এবং কুষ্টিয়া জেলার ভেড়ামারা উপজেলা প্রশাসন বালু কাটা বন্ধে পদ্মায় যৌথ অভিযান পরিচালনা করে। এসময় বালু কাটা ও পরিবহনের কাজে জড়িত শ্রমিকরা গ্রেফতার হলেও মূলহোতারা ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকে।

পদ্মা নদীর তীরবর্তী এলাকা দখল করে গড়ে ওঠেছে অবৈধ বালু মহাল। বালু ব্যবসার নিয়ন্ত্রকরা বালুমহাল বলছেন না, বলছেন বালুর খোলা। অন্যান্য স্থান হতে বালু এনে এখানে স্তুপিকৃত করে ব্যবসা করছেন বলে তাদের দাবি। লক্ষীকুন্ডা নৌ-পুলিশ এসব দেখেও দ্যাখেন না। নির্বিঘ্নে বালুর ব্যবসার কাজে অনেকেরই সহযোগীতা রয়েছে বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন। এলাকাবাসীদের সাথে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চলমান হরতাল-অবরোধের পাশাপাশি দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন নিয়ে প্রশাসনের ব্যস্ততার সুযোগ গ্রহন করে বালু উত্তোলনে মেতেছে চক্রটি। বিগত প্রায় ১৫ দিন ধরে নদীতে ড্রেজার দিয়ে বালু কাটা হচ্ছে। প্রথমদিকে দিনের বেলায় বালু উত্তোলন করা হলেও গত কয়েকদিন ধরে রাতের আঁধারে ‘চুপেচাপে’ নদী থেকে বালু তোলা হচ্ছে। সাঁড়ার ওই এলাকায় পাহাড় সমান বালুর স্তুপ সাজিয়ে ভ্যাট-ট্যাক্স ছাড়াই শুধু ম্যানেজ করেই বছরের বছর জমিয়ে চলছে রমরমা বালুর ব্যবসা। খরচ বলতে নৌকা ভাড়া, চাঁদা আর লেবার খরচ।

সরেজমিনে ইসলামপাড়া এলাকার কয়েকজনের সাথে কথা বললে তারা কেউই বালু চক্রের হোতার নাম বলতে রাজী হয়নি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এলাকাবাসীরা জানান, বালুর উত্তোলনের সাথে যারা জড়িত, তারা খুবই প্রভাবশালী। মঙ্গলবার (২৮ নভেম্বর) দিবাগত গভীর রাতেও নদীতে বালু কাটা হয়েছে। নদী থেকে মাত্র ১০-২০ মিটার দূরে বসতবাড়ি। ভাঙনে বাঁধ ক্ষতিগ্রস্থ হলে বসতবাড়ি বিলীনের আশংকায় তারা আতঙ্কগ্রস্থ। এরইমধ্যে ভাঙনে প্রায় ৫০ একর জমি নিশ্চিহ্ণ হয়েছে। অভিযান হয় কিন্তু তবে মুল হোতারা সবসময় ধরা-ছোঁয়ার বাইরেই থাকে বলে অভিযোগ করেছেন।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা বলছেন, ভাঙন ঠেকাতে নিয়মানুযায়ী বালুর বস্তা ডাম্পিং করা হচ্ছে। নদীর অপর প্রান্তের কিছুটা আগে জেগে উঠা চর এবং অবৈধভাবে বালু উত্তেলন করায় নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়েছে। এখন নদীর স্রোত সরাসরি প্রবাহিত না হয়ে এই এলাকায় এসে আছড়ে পড়ায় ভাঙন শুরু হয়েছে। ভাঙন ঠেকাতে হলে বালু উত্তোলন বন্ধের পাশাপাশি গতিপথ পরিবর্তনের জন্য দ্রুত ওই চর এলাকায় ড্রেজিং করে স্রোতের গতিপথ পরিবর্তন করতে হবে। তবে পাবনার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীকে বার বার ফোন দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

রেলওয়ের বিভাগীয় প্রকৌশলী (ডিইএন-২) বীরবল মন্ডল বলেন, পদ্মা নদীর পানি প্রবাহ মূলত আপস্ট্রিমের পানি প্রবাহ। এভাবে যদি বালু কাটা হয় তাহলে হঠাৎ বণ্যা হলে রা বাধটাকে ধ্বংস হবে।

লক্ষীকুন্ডা নৌ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এমদাদুল হক বালু উত্তোলনকারীদের সাথে তাদের কোন সখ্যতা নেই জানিয়ে তিনি বলেন, বালু কাটার বিষয়টি এখনও আমাদের নলেজে নাই।

ঈশ্বরদী থানার অফিসার ইনচার্জ অরবিন্দ সরকার বলেন, নদীতে অভিযান পরিচালনার জন্য লক্ষীকুন্ডা নৌ পুলিশের ফাঁড়ি রয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুবীর কুমার দাশ বলেন, অবৈধ বালু উত্তোলকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

(এসকেকে/এএস/নভেম্বর ২৯, ২০২৩)

পাঠকের মতামত:

২৭ জুলাই ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test