E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

নলডাঙ্গায় উন্মুক্ত জলাশয় থেকে শতাধিক মৎস্যজীবি পরিবার উচ্ছেদ

২০১৪ নভেম্বর ০৯ ১৭:৪৮:৩৫
নলডাঙ্গায় উন্মুক্ত জলাশয় থেকে শতাধিক মৎস্যজীবি পরিবার উচ্ছেদ

নাটোর প্রতিনিধি : জাল যার জলা তার” নীতি উপেক্ষা করে নাটোরের নলডাঙ্গায় ইয়ারপুর উন্মুক্ত জলাশয় স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তির কাছে লিজ দিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। ফলে ওই ইজারাদাররা প্রকৃত মৎস্য জীবীদের উচ্ছেদ করে নিজেদের দখলে নিয়েছে।

তাদের টাকা না দিলে জলাশয়ে নামতে দেওয়া হচ্ছে না। উপরন্তু জেলেদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। এতে প্রায় তিন গ্রামের শতাধিক মৎস্যজীবী কর্মহীন হয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, মৎস্যজীবী সমিতিকেই ইজারা দেওয়া হয়েছে, কোন ব্যাক্তি বা গোষ্ঠিকে ইজারা দেওয়া হয়নি।

এলাকাবাসী জানায়, নলডাঙ্গা উপজেলার ইয়ারপুর এলাকায় হালতি বিলের মধ্যেকার একটি উন্মুক্ত জলাশয়ে স্থানীয় প্রায় শতাধিক জেলে সম্প্রদায় দীর্ঘদিন ধরে মাছ মেরে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে।

সম্প্রতি স্থানীয় প্রভাবশালী কয়েকজন ব্যাক্তি পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে ইয়ারপুর খাল ইজারা নেওয়ার কথা বলে খালটি দখলে নেওয়ার চেষ্টা করে। এক পর্যায়ে তারা মৎস্যজীবীদের কাছে মৎস্য আহরনের জন্য টাকা দাবী করে। কিন্তু তারা টাকা দিতে অপরাগতা জানালে ইজারাদারদের সাথে বিরোধ সৃষ্টি হয়। পরে তারা ওই জলাশয় থেকে মৎস্যজীবীদের উচ্ছেদ করে। প্রতিবাদ জানালে উল্টো নলডাঙ্গা থানায় মৎস্যজীবীদের নামে অভিযোগ করা হয়।

ইয়ারপুর গ্রামের মৎস্যজীবী মসলেম উদ্দিন,শামছুল ইসলাম,আবেদ আলী ও রফিকুল ইসলাম জানায়, বাপ দাদার আমল থেকে তারা তিন গ্রামের মানুষ এই খাল তেকে মাছ মেরে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। কিন্তু সম্প্রতি এলাকার কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি খালটি ইজারা নেওয়ার কথা বলে মাছ মারার জন্য তাদের কাছে টাকা দাবী করে। দিতে অপরাগতা জানালে তাদের খাল থেকে উচ্ছেদ করে। একই গ্রামের মোশারফ হোসেন ও রহমান জানায়,কথায় কথায় তারা পুলিশের ভয় দেখাচ্ছে। প্রতিবাদ করলে থানায় তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়। পুলিশ সবাইকে থানায় ডেকে নিয়ে যায়। ওই জলাশয় কোনদিন লিজ দেওয়ার কথা শোনেননি তারা। এখন উচ্ছেদ করায় প্রায় একশ পরিবার কর্মহীন হয়ে পড়েছে।

স্থানীয় ইউপি সদস্য সোহরাব হোসেন জানান,সরকারী এই উন্মুক্ত জলাশয় কোনদিন লিজ দেওয়া হয়নি। অথচ এলাকার কতিপয় প্রভাবশালী ব্যক্তি ইজারা নেওয়ার কথা বলে মৎস্যজীবীদের উচ্ছেদ করেছে। উপরন্তু মৎস্যজীবীদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করে হয়রানি করছে। এছাড়া আগে সাধারণ মানুষও ওই খালে থেকে মাছ মারতো। এখন তাদেও নামতে দেওয়া হচ্ছেনা। বরং তারাই ভোগদখল করে খাচ্ছে। উন্মুক্ত জলাশয় থেকে উচ্ছেদ হওয়ায়,ইয়ারপুর,ব্রক্ষ্মপুর পশ্চিম পাড়া ও কাশিয়াবাড়ি গ্রামের অন্তত ৯০ জন জেলে এখন বেকার দিন কাটাচ্ছে। ছেলে মেয়ে নিয়ে তারা খুব কষ্টে আছে।

ইজারাদার দাবীদার জিয়ারুল ইসলাম জানান, তিনি সহ কয়েকজন মিলে দুর্লভপুর গ্রামের একটি মৎস্যজীবি সংগঠনের নামে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে ইজারাকৃত ইয়ারপুর খালটি সাব ইজারা নিয়েছেন। তিনিও একজন মৎস্যজীবি বলে দাবী করে বলেন,কোন মৎস্যজীবিকে উচ্ছেদ করে নয়, সকল মৎস্যজীবিদের সাথে নিয়েই মাছ ধরা হচ্ছে। কতিপয় ব্যাক্তি বিভিন্ন ধরনের মিথ্যা প্রবাকান্ডা ছড়াচ্ছে। এখানে কেউ কোন সমস্যায় নেই। এখন প্রকৃত মৎস্যজীবীরাই জলাশয় থেকে মাছ মারছে (আহরণ) করছে।

ব্রক্ষপুর ইউপি চেয়ারম্যান সরদার আফজাল হোসেন জানান, সরকারী দলের স্থানীয় কয়েকজন ব্যাক্তি এই খালটি দখলে নিয়েছে। একারনে প্রকৃত মৎস্যজীবিরা মাছ মারতে পারছে না। ইতিপুর্বে কখনই খালটি ইজারা দেওয়া হয়নি। ইজারার বিষয়টি তার জানা নেই।

ব্রক্ষপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ সভাপতি তৌহিদুর রহমান ঝরু অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, সরকারী দল সহ প্রভাবশালী কেউ এর সাথে জড়িত নয়। প্রকৃত মৎস্যজীবীরাই জলাশয় থেকে মাছ মারছে (আহরণ) করছে ।

নলডাঙ্গা থানার ওসি আসলাম উদ্দিন জানান, দু’পক্ষকে ডেকে জাল যার জলা তার এই নীতির ভিত্তিতে জলাশয় থেকে মাছ মারা জন্য বলা হয়েছে। কাউকে হয়রানি করার অভিযোগ সঠিক নয় বলেও জানান তিনি।

নাটোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী বাবুল আক্তার জানান, মৎস্য সম্পদের উন্নয়ন ও আহরণের জন্য ইয়ারপুর স্লুইস গেইট সংলগ্ন ক্যানেলের প্রায় ২ একর জলাশয়টি তিন বছরের জন্য দুর্লভপুর গ্রামের একটি মৎস্যজীবি সংগঠণের নামে ইজারা দেওয়া হয়েছে। মৎস্যজীবী সমিতিকেই ইজারা দেওয়া হয়েছে, কোন ব্যাক্তিকে ইজারা দেওয়া হয়নি। মৎস্য জীবিদের উচ্ছেদের বিষয়টি তার জানা নেই।



(এমঅার/এসসি/নভেম্বর০৯,২০২৪)

পাঠকের মতামত:

০৬ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test