E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

বাগেরহাটে বিতর্কিত প্রধান শিক্ষকের যোগদান, শিক্ষাথীদের স্কুল বর্জন

২০২৪ জানুয়ারি ২৯ ১৮:৪৬:১৪
বাগেরহাটে বিতর্কিত প্রধান শিক্ষকের যোগদান, শিক্ষাথীদের স্কুল বর্জন

সরদার শুকুর আহমেদ, বাগেরহাট : বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার রাজাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নাছরিন নাহার নামে নতুন একজন প্রধান শিক্ষক যোগদান করায় সৃষ্টি হয়েছে বিতর্কের। সেই বিতর্ককে কেন্দ্র করে বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিশুরা বিদ্যালয়ে আসা বন্ধ করে দিয়েছেন। ছাত্রছাত্রী না আসায় গেল ৫ কর্মদিবসে বিদ্যালয়টিতে কোন পাঠদান হয়নি। এই পরিস্থিতি স্বাভাবিক ও শিশুদের শ্রেনী কক্ষে ফেরাতে বিতর্কিত প্রধান শিক্ষককে ফিরিয়ে নিতে পুরুষ প্রধান শিক্ষক দেয়ার শর্ত জুড়ে দিয়েছেন অভিভাবরা। উপজেলা প্রথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বলছেন, এ বিষয়টি নজরদারির মধ্যে রেখে দ্রুত সমাধানে নেয়া হচ্ছে প্রশাসনিক ব্যাবস্থা। 

আজ সোমবার সকালে রাজাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায় স্কুলটিতে ২১০ জন শিক্ষার্থী থাকলেও কেউই স্কুলে আসেনি। ছাত্রছাত্রী শুন্য প্রতিটি শ্রেনীকক্ষ। অভিভাবকরা বলছেন, নলবুনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মালামাল অনুমতি না নিয়ে বিক্রির অভিযোগে প্রধান শিক্ষক নাছরিন নাহারকে বদলী করে রাজাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দেয়া হয়েছে। এমন একজন বিতর্কিত প্রধান শিক্ষকের এখানে পদায়ন করায় রাজাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার সুষ্ঠ পরিবেশ নষ্ট করা হয়েছে বলে অভিযোগ তাদের।

তারা বলছেন, এমন একজন শিক্ষক থাকলে কোন অবস্থায়ই তারা ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠাবেন না। গত ২৪ জানুয়ারি নাছরিন নাহার প্রধান শিক্ষক হিসেব যোগদান করার পর থেকে শিক্ষার্থীরা স্কুলে আসা বন্ধ করে দিয়েছেন। এই অবস্থায় বিদ্যালয়টি এখন শিক্ষার্থী শুন্য হয়ে পড়েছে। ভেঙ্গে পড়েছে স্কুলটির শিক্ষা ব্যবস্থা। সমস্য সমাধানে অভিভাবকরা নতুন একজন পুরুষ প্রধান শিক্ষক দেয়ার শর্ত জুড়ে দিয়েছেন।

দুইজন সহকারী শিক্ষক কে এম সাহিদুর রহমান ও শারমিন আক্তার জানান, নাছরিন ম্যাডাম যোগদানের পর থেকেই ক্ষুব্দ অভিভাবকরা তাদের ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠাচ্ছেনা। এখন স্কুলে শিক্ষার্থীরা না আসায় পাঠদান না করতে পেয়ে আমরা অলস সময় পার করছি। প্রধান শিক্ষক নতুন খাতা কিনে হাজিরা খাতায় স্বক্ষর করতে বছেছে। আমরা আগের হাজিরা খাতায়ই স্বাক্ষরও করছি। সব বিষয়ই আমরা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আশ্রাফুল ইসলাম স্যারকে অবহিত করেছি।

অভিভাবক আব্বাস গাজি, মিলন হাওলাদার, স্বপন বিশ্বাস ও স্থানীয় ইউপি সদস্য রহমান হাওলাদার জানান, নাছরিন নাহার একজন বিতর্কিত শিক্ষিকা। তার বিরুদ্ধে নলবুনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মালামাল বিক্রি করে বিক্রির অভিযোগ রয়েছে। তার মতো একজন বিতর্কিত প্রধান শিক্ষক যদি এই স্কুলে থাকে তাহলে ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া হবেনা। তাই সে স্কুলে থাকলে সন্তানদের স্কুলে পাঠাবেন না। তারা নাছরিন নাহারকে দ্রুত সরিয়ে নতুন একজন পুরুষ প্রধান শিক্ষক চান।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাছরিন নাহার জানান, তিনি নলবুনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রশাসনিক বদলীজনিত কারণে গত ২৪ জানুয়ারি রাজাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগদান করতে এসে দেখেন স্কুলের গেটে তালা মারা। তাই তিনি অপেক্ষা করে চলে যান। এর পরদিন সকালে স্কুলে এসে বসলেও কোনো হাজিরা খাতা পাননি। এমনকি অন্যান্য শিক্ষকরা হাজিরা খাতায় স্বাক্ষরও করেন না। সেই থেকে স্কুলে ছাত্রছাত্রীরাও আসছে না। এখন তিনি ছুটি নিবেন তাও পারছেন না।

রাজাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও রাজাপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নান্না মিয়া হাওলাদার জানান, নাছরিন নাহার যোগদান করার পর ক্ষুব্দ অভিভাবকরা তাদের ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠাচ্ছেনা। বিষয়টি ইউএনও মহোদয়কে বিষয়টি জানানো হয়েছে। পরে টিও সাহেব নিজে এসেও দেখে গেছেন। এখন বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের কোনো উপস্থিতি নাই। ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার কথা মথায় রেখে দ্রুত সমাধান করা প্রয়োজন।

শরণখোলা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আশ্রাফুল ইসলাম জানান, এলাকাবাসি চায় একজন পুরুষ প্রধান শিক্ষক। নাছরিন নাহারকে প্রসাসনিক ভাবে গত ২৪ জানুয়ারি রাজাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলী করার পর অভিভাবকরা তাদের ছেলেমেয়েদের স্কুলে আসতে দিচ্ছেন না। তবে বিষয়টি আমরা পর্যবেক্ষণে রাখছি। সবাইকে ম্যানেজ করে থাকতে না পারলে নাছরিন নাহারের বিষয়ে দ্রুত পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

(এস/এসপি/জানুয়ারি ২৯, ২০২৪)

পাঠকের মতামত:

২৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test