E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

মূর্তিমান আতংক খোকন রাজাকার দুবলা শুটকি পল্লী ছেড়ে পালিয়েছে, জেলেদের মিষ্টি বিতরণ

২০২৪ ফেব্রুয়ারি ০৬ ১৯:১৩:২১
মূর্তিমান আতংক খোকন রাজাকার দুবলা শুটকি পল্লী ছেড়ে পালিয়েছে, জেলেদের মিষ্টি বিতরণ

সরদার শুকুর আহমেদ, বাগেরহাট : সুন্দরবনের দুবলারচর শুটকি পল্লীর স্বঘোষিত রাজা খাঁন শফিউল্লাহ খোকন (৭৩) ওরফে খোকন রাজাকার এখন সাম্রাজ্য ছেড়ে পালিয়েছে। যুদ্ধাপরাধ মামলার তদন্ত শুরু হওয়ায় খোকন রাজাকার শুটকি পল্লী ছেড়ে সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারী) দিবাগত রাতে আত্মগোপন করার খবরে দুপুরে দুবলার চরের জেলে-মহাজনেরা মিষ্টি বিতরণ করে উল্লাস প্রকাশ করেছে। পাশাপাশি বিক্ষোভ মিছিল করে তাকে দ্রুত গ্রেফতার ও বিচার দাবীতে করেছেন। সুন্দরবনের দুবলারচরে শুটকি পল্লীতে নিরিহ জেলে-মহাজনদের শোষণ করা খোকন রাজাকার খুলনার রূপসার দেয়ারা গ্রামের শহিদুল্লাহ খাঁনের ছেলে।

মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে খুলনার রূপসায় রাজাকার বাহিনীর কমান্ডার হিসেবে এলাকায় নারকীয় অত্যাতার-নির্যাতন চালায় রাজাকার কমান্ডার খোকন। ওই সময় এলাকার মুক্তিযোদ্ধা শামসুর রহমান ওরফে শ্যাম মল্লিককে গুলি করে হত্যা করেন খোকন রাজাকার ও তার সহযোগীরা। এছাড়া তাদের হাতে আরও দুইটি হত্যাকান্ডেরও ঘটনা ঘটে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর খোকন দলবল নিয়ে ভারতে পালিয়ে যান। সেখানে দুই বছর আত্মগোপনে থাকার পর দেশে ফিরে খোকন রাজাকার খুলনার বটিয়াঘাটা এলাকায় আত্মগোপন করেন। পরে সুন্দরবনে শুরু করেন কাঁচা ও শুঁটকি মাছের ব্যবসা।

২০০২ সালে দুবলার চরের নিরিহ জেলে ও মৎস্য ব্যবসায়ীদের ভয় দেখাতে খুলনার শীর্ষ সন্ত্রাসী এরশাদ শিকারদার ও ক্রসফায়ারে নিহত আরেক সন্ত্রাসী লিটুকে নিয়ে জেলেদের উপর হামলা চালিয়ে মেহেরআলীর চরে মাছের ব্যবসা দখলে নেয় খোকন রাজাকা। পরবর্তীতে দখলে নেয় আরেক চর আলোরকোল। সেখানে জেলেদের উপর অমানসিক নির্যাতন চালিয়ে ‘যখন যা খুশি’র ইে রীতি রেওয়াজ চালু করেন খোকন রাজাকা। এতেকরে জেলেদের কাছে হয়ে উঠেন মূর্তিমান আতংক। এরপর ২০১৭ সালে মুক্তিযোদ্ধা সাব-সেক্টর কমান্ডার ও দুবলা ফিশারম্যান গ্রুপের চেয়ারম্যান মেজর জিয়া উদ্দিন আহমেদের মৃত্যু হলে পুরো ফিশারম্যান গ্রুপসহ দুর্গম দুবলার শুটকি পল্লী দখলে নেয় খোকন রাজাকার। হয়ে যান কয়েক’শ কোটি টাকার মালিক।

মুক্তিযোদ্ধা শামসুর রহমান ওরফে শ্যাম মল্লিককে গুলি করে হত্যার অভিযোগে তার ছেলে সাইফুল মল্লিক গামা বাদী হয়ে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে রাজাকার কমান্ডার খোকনসহ তিনজনের নামে যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন। যুদ্ধাপরাধ বিশেষ ট্রাইব্যুনালের তদন্তকারী কর্মকর্তারা সম্প্রতি খুলনার রূপসা এসে সরেজমিনে মুক্তিযোদ্ধা শামসুর রহমান ওরফে শ্যাম মল্লিককে হত্যাকান্ডের স্বাক্ষী গ্রহণ করেন। এখবর জানতে পেরে সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারী) দিবাগত রাতে সুন্দরবনের দুবলারচর শুটকি পল্লীর সাম্রাজ্য ছেড়ে পালিয়ে স্বঘোষিত রাজা খাঁন শফিউল্লাহ খোকন ওরফে খোকন রাজাকার।

মামলার বাদী সাইফুল মল্লিক গামা জানান, মামলা দায়ের হওয়ার আগে ও পরে বিভিন্ন সময় খোকন রাজাকারসহ ত্রা স্বজনরা তাকে হত্যাসহ মামলায় ফাঁসানোর নানা হুমকি দিয়েছে। খোকন রাজাকারকে দ্রুত গ্রেফতার ও বিচার দাবী করেন তিনি।

দুবলার চরে রাজাকার খোকন বাহিনীর হাতে নির্যাতনের শিকার পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার তুষখালী গ্রামের মামুন শরিফ ও মফিজুল শরিফ জানান, খোকন বাহিনীর বেপরোয়া অত্যচার ও নির্যাতনে বিগত কয়েক দশকে সুন্দরবন এবং সাগরে সামুদ্রিক মাছের ব্যবসায় নিঃস্ব হয়েছেন অসংখ্য পেশাজীবি। আবার অনেকে পুরোনো পেশা ছাড়াতে বাধ্য হয়েছেন।

দুবলার জেলে ও শুটকী ব্যবসায়ী গাজী রহমান, কেরামত মল্লিক ও বোরহান গাজী বলেন, যুদ্ধাপরাধের তদন্তের খবর পেয়ে খোকন রাজাকার দুবলার চর ছেড়ে রাতে আত্মগোপনে করেছেন। এমন খবরে দুবলার জেলে পল্লীতে স্বত্বি ফিরে আসায় মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে আনন্দ মিছিল করে মিষ্টি বিতরন করা হয়েছে। তাকে দ্রুত গ্রেফতার ও বিচার দাবী করা হয়েছে।

এ বিষয়ে দুবলা ফিশারম্যান গ্রুপের চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, যুদ্ধাপরাধ মামলার তদন্ত শুরু হওযায় দুবলার চরের বহুল আলোচিত মৎস্য ব্যবসায়ী খোকন রাজাকার আত্মগোপনে করেছেন। এতে জেলে ও ব্যবসায়ীরা দুবলার চরাঞ্চলে মিষ্টি বিতরণ ও উল্লাস করেছেন।

আত্মগোপনে থাকা খাঁন শফিউল্লাহ খোকন ওরফে রাজাকার খোকনের বক্তব্য জানতে তার ব্যবহৃত ০১৭১১-১৩০০৪৪ ও ০১৫১১-১৩০০৪৪ এই দুইটি নম্বরে যোগাযোগ করা হলে ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। এছাড়া এই দুই নম্বরে ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়েও কোন সাড়া পাওয়া যায়নি।

(এস/এসপি/ফেব্রুয়ারি ০৬, ২০২৪)

পাঠকের মতামত:

২৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test