E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

যশোরে পুলিশের সাঁড়াশি অভিযান, আ.লীগের দুই অংশের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া

২০২৪ ফেব্রুয়ারি ১৭ ১৮:১১:১৬
যশোরে পুলিশের সাঁড়াশি অভিযান, আ.লীগের দুই অংশের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া

স্বাধীন মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ, যশোর : বেশ কিছুদিন ধরে যশোরের পরিবেশ ঘোলা করে চলেছে অপরাধীরা। সম্প্রতিক সময়ে বেশ কয়েকটা হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। যে কারণে আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় নড়েচড়ে বসেছে জেলা পুলিশ প্রশাসন। সন্ত্রাস দমন ও সন্ত্রাসীদের আশ্রয় প্রশ্রয় দাতাদের বিরুদ্ধে জিরো টরালেস নীতিতে কঠোর অবস্থানে রয়েছে পুলিশ। 

সুত্র মতে, চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী, কিশোর গ্যাং, মাদক কারবারের সাথে জড়িত চক্র ও এদের আশ্রয়দাতাদের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান অব্যাহত রাখবে পুলিশ। বেশ্ কিছু বিবর্কীত জনপ্রতিনিধিসহ ক্ষমতাসীন দলের একাধিক নেতা শহরে অধিপত্য বিস্তার করাকে কেন্দ্র করে অপরাধমূলক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। অপরাধ দমনে কঠোর হাতে অপরাধীদের দমন করবে পুলিশ।

এদিকে গত কয়েক দিনে যশোরে পুলিশের তৎপরতায় সাধারণ মানুষের মধ্যে অনেক স্বস্তি ফিরেছে। জনপ্রতিনিধিদের একাংশের দাবি, পুলিশ উদ্দেশ্যমূলকভাবে তাদের হয়রানি করছে। আর পুলিশের দাবি, কতিপয় জনপ্রতিনিধির অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট। কাউকে হুমকি কিংবা হয়রানি করা হয়নি। পুলিশ অপরাধীদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রেখেছে।

যশোরে গেল জানুয়ারিতে ৬ জন খুন হয়েছেন। সর্বশেষ ফেব্রুয়ারি মাসে আরও ৬ জন নিহত হয়। একই সাথে বেড়েছে কিশোর গ্যাংয়ের তৎপরতা, চুরি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি ও মাদক কারবারি। জেলা আইনশৃংখলা কমিটির সভায়ও এ নিয়ে তুমুল আলোচনা হয়েছে। আইনশৃংখলা পরিস্থিতির উন্নতিতে পুলিশকে আরও কঠোর হওয়ার জন্য গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। এরপর কঠোর অবস্থানে চলে গেছে জেলা পুলিশ।

গত ১৪ ফেব্রুয়ারি যশোর সরকারি প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্রে হানা দেয়ার ঘটনায় বহিষ্কৃত যুবলীগ নেতা শহরের চিহ্নিত সন্ত্রাসী মেহবুব রহমান ম্যানসেলসহ তার তিনজন সহযোগীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। একইদিন রাতে যশোর পৌরসভার আলোচিত কাউন্সিলর জাহিদ হোসেন মিলন ওরফে টাক মিলনকে তিন সহযোগীসহ মদ্যপ অবস্থায় গ্রেফতার করে পুলিশের একটি টিম। কাউন্সিলরকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে গেল বৃহস্পতিবার বিকেলে সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের প্রত্যাহার দাবি করে যশোর-৩ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদের অনুসারী জনপ্রতিনিধিরা। এ ঘটনার পর আরো নড়েচড়ে বসেছে পুলিশ। শহরের মোড়ে মোড়ে পুলিশের তল্লাশি জোরদার করা হয়েছে। শহরের বিভিন্ন স্থান থেকে বেশ কয়েকজন সন্ত্রাসীকে ছুরিসহ আটকও করে পুলিশ। এদিকে, শহরে পুলিশের তৎপরায় সাধারণ মানুষের মাঝে স্বস্তি ফিরেছে। অনেক এলাকায় মানুষ মিষ্টি বিতরণ করে উল্লাস প্রকাশ করেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শহরের একাধিক বাসিন্দা জানিয়েছে, পাড়ায় পাড়ায় কিশোর গ্যাং বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এদের আশ্রয় ও প্রশ্রয়ে প্রতিনিয়ত চাঁদাবাজি, মাদক, খুন, জখমের ঘটনা ঘটছে। ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায়না। এদের আশ্রয় দাতারা কেউ কেউ জনপ্রতিনিধি বনে চলে গেছেন। মুখোসের আড়ালে তারা বিভিন্ন অনৈতিক ও অনিয়ম করে বেড়ায়। অপরাধীরা তাদের পক্ষ নিয়ে ত্রাসের রাজত্ব তৈরি করে চলেছে। পুলিশ এদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করায় সাধারণ জনগণ খুশি। এদের গডফাদারদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনতে পারলে আইনশৃংখলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসবে বলেও তারা দাবি করেন।

অপরদিকে, যশোরের জনপ্রতিনিধিদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে হুমকি দেয়ার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। জেলা ডিবি পুলিশ ও কোতোয়ালী থানা পুলিশের একাধিক টিম সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের বাড়িতে গিয়ে এই হুমকি দিচ্ছেন বলে অভিযোগ। বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুরু করে শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত চেয়ারম্যানদের বাড়িতে গিয়ে এই হুমকি দেয়া হয়। এ সময় বেশ কয়েকজন আওয়ামী লীগ ও যুবলীগ নেতাদের বাড়িতে যায় পুলিশ।

এ বিষয়ে এমপি কাজী নাবিলের অনুসারী ও সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন বিপুল দাবি করেছেন, বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলন করে পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ার্দ্দার ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বেলাল হোসাইনের অপসারণে দাবি জানানোর পর থেকে জনপ্রতিনিধিদের বাড়িতে গিয়ে পুলিশ হুমকি দিচ্ছে। শুক্রবার রাতে যশোর পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রাজিবুল আলম, চুড়ামনকাটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দাউদ হোসেন দফাদার, লেবুতলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলীমুজ্জামান মিলন ও রামনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহমুদ হাসান লাইফের বাড়িতে গিয়ে পুলিশ মানববন্ধন কর্মসূচিতে না আসার হুমকি দেন। আর শুক্রবার সকাল থেকে পুলিশ আমার বাড়ির সামনে অবস্থান নিয়েছে। এছাড়া, সকাল থেকে পুলিশের একাধিক টিম উপশহর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এহসানুর রহমান লিটু, নরেন্দ্রপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাজু আহমেদসহ অধিকাংশ জনপ্রতিনিধিদের বাড়িতে গিয়ে পুলিশ হুমকি দিচ্ছে।

এদিকে পুলিশের এই চলমান কার্যক্রমকে স্বাগতম জানিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন। তিনি বলেন, যে পুলিশের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করেছেন তিনি বিএনপি থেকে আসা। আ'লীগের কেউ না। পুলিশ অপরাধীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছে এতে করে জনমনে স্বস্তি ফিরেছে। জেলা আ'লীগ পুলিশের এই অভিযান অব্যহত রাখতে দাবি করেছেন।

এদিকে চলমান বিষয়ে জানতে চাইলে যশোর জেলা পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বেলাল হোসাইন বলেন, পুলিশের অভিযান কোন ব্যক্তি কিংবা জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে নয়। সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, মাদক ও কিশোর গ্যাংয়ের সঙ্গে জড়িত ও মদদদাতাদের বিরুদ্ধে পুলিশের এই অভিযান অব্যাহত রয়েছে। আমরা অপরাধীকে অপরাধী হিসেবেই বিবেচনা করছি। তার অন্য পরিচয় আমাদের কাছে মূখ্য নয়। জেলার আইনশৃংখলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনে মানুষকে স্বস্তি দিতে পুলিশ কাজ করছে।

এক প্রশ্নের জবাবে বেলাল হোসাইন বলেন, পুলিশের বিরুদ্ধে হুমকি কিংবা হয়রানির অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। পুলিশ কাউকে হয়রানি করছে না। কাউকে হুমকিও দেয়নি। অপরাধীদের বিরুদ্ধে পুলিশ তৎপর রয়েছে।

(এসএ/এসপি/ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০২৪)

পাঠকের মতামত:

০৫ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test