E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ভৈরবে খাল খননের দোহাই দিয়ে চলছে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন, প্রশাসন নিরব

২০২৪ ফেব্রুয়ারি ১৮ ১৪:৫৮:০২
ভৈরবে খাল খননের দোহাই দিয়ে চলছে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন, প্রশাসন নিরব

সোহেল সাশ্রু, কিশোরগঞ্জ : ভৈরব উপজেলার মহেশপুর ও চানপুর এলাকায় কোদাল কাটি খাল থেকে ড্রেজারের মাধ্যমে অবৈধভাবে বালু তুলে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে শিমুলকান্দি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি আবদুল আজিজ ও কালিপুর গ্রামের ড্রেজার ব্যবসায়ী রাশেদ মিয়ার বালু সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে। অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে বিক্রি করলেও এ বিষয়ে নিরব দর্শকের ভূমিকায় স্থানীয় প্রশাসন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মেসার্স মুমিনুল হক এন্ড হাসান কনস্ট্রাকশন নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কোদাল কাটি খাল খননের কাজ পায়। খালটি মেঘনা নদীর মোহনা মহেশপুর এলাকা থেকে কালিকাপ্রসাদের ছিদ্দিরচর পর্যন্ত এক্সাভেটর ও শ্রমিকের মাধ্যমে খাল খনন করে দুইপাশে রাস্তা তৈরিসহ গাছ রোপনের মাধ্যমে খালের সৌন্দর্য বর্ধন করাই ছিলো সরকারের মূল উদ্দেশ্য।

কিন্তু গত কয়েক মাস আগে বর্ষা মৌসুমে এক্সাভেটরের পরিবর্তে ১২ থেকে ১৫টি বাংলা ও লোড ড্রেজার দিয়ে অবৈধভাবে লক্ষ লক্ষ টাকার বালু উত্তোলন করে বিক্রি করে কৃষি জমির ব্যাপক ক্ষতি করে। এঘটনায় ফুসে উঠে স্থানীয় কয়েকটি গ্রামের নিরীহ কৃষক।

অবৈধভাবে ড্রেজার দিয়ে লাখ লাখ ঘনফুট বালু উত্তোলন করে অন্যত্র বিক্রি করে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে ঠিকাদার ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের একটি প্রভাবশালী মহল। ফলে সাধারণ কৃষকের শত শত বিঘা ফসলি জমি ভাঙ্গনের মুখে পড়ে।

শুকানো মৌসুমে এক্সাভেটর দিয়ে খাল খননের অনুমতি নিয়ে ওয়ার্ক অর্ডারে নির্ধারিত সময়ের একমাস আগে ড্রেজারে বালু লুটপাটের অভিযোগ ছিলো ওই প্রভাবশালী বালু সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে।

অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধের জন্য গত বছরের ১৬ সেপ্টেম্বর, ভৈরব উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর ও শিমুলকান্দি ইউপি চেয়ারম্যান একাধিক লিখিত অভিযোগ দেন শিমুলকান্দি ইউনিয়নের শতশত ভুক্তভোগী কৃষক। এছাড়াও তারা দফায় দফায় মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেন।
এসব ঘটনায় কয়েক মাস বালু উত্তোলন বন্ধ থাকলেও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকে আবারো ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের দোহাই দিয়ে মহেশপুর ও চানপুর এলাকায় ১০টি লোড ড্রেজার দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে বিক্রি করার অভিযোগ উঠে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি আবদুল আজিজের নেতৃত্বধীন প্রভাবশালী বালু সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে।

বুধবার ভৈরব পৌর এলাকার মহেশপুর ও শিমুলকান্দি ইউনিয়নের চানপুর এলাকায় কোদাল কাটি খালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, চানপুর ব্রীজের উত্তরপাশের তিনটি ড্রেজার ও দক্ষিণ পাশে ৭টি ড্রেজারের মধ্যে দুটি ড্রেজারে মাটি উত্তোলন করে পাইপলাইনের মাধ্যমে কয়েকটি কৃষি জমি ভরাট করা হচ্ছে। এসময় ঘটনাস্থলে পাওয়া যায় ড্রেজার ব্যবসায়ী রাশেদ মিয়াকে। তার কাছে জানতে চাওয়া হয় কিসের ভিত্তিতে ড্রেজারে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এমন প্রশ্নের জবাবে রাশেদ মিয়া বলেন বালু উত্তোলন করতে হলে কাগজপত্র লাগেনা।

তবে তিনি কয়েকটি ড্রেজারে বালু উত্তোলনের কথা স্বীকার করে বলেন, তিন টাকা ফুটে ঠিকাদার মুমিনুল হক সেলিমের কাছ থেকে মহেশপুর এরিয়ায় কাজ নেন তিনি। দূরত্ব বেধে ৭ থেকে ৮ টাকা ফুটে বালু বিক্রি করছেন। তার সাথে শিমুলকান্দি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. আবদুল আজিজসহ কালিপুর এলাকার বেশ কয়েকজন নেতা বালু উত্তোলনে জড়িত রয়েছে। এ বিষয়ে তিনি নিউজ না করার জন্য সাংবাদিকদের অনুরোধ করেন।

এ বিষয়ে শিমুলকান্দি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি আবদুল আজিজের বক্তব্য নিতে বুধবার বিকেলে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে বৃহস্পতিবার তিনি ক্যামেরায় বক্তব্য দেয়ার কথা বলে সাংবাদিকদের সামনে আসেননি।

এ বিষয়ে ভৈরব উপজেলা প্রকৌশলী আবুল হাসানাত মহিউদ্দিন সাংবাদিকদের জানান, কোদাল কাটি খাল খননের কাজ বর্তমানে বন্ধ রয়েছে। ঠিকাদার কাজ করার লিখিত কোন নির্দেশনা নেই এখন। তিনি জানান, কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের মৌখিক অনুমতি নিয়ে ড্রেজারে বালু উত্তোলনের কথা।

ভৈরবের মহেশপুর এলাকায় কোদাল কাটি খাল থেকে বালু তুলে বিক্রির করার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন ভৈরব উপজেলা নির্বাহী অফিসার এ.কে. এম গোলাম মোর্শেদ খান। তিনি বলেন, ডিসি স্যার বা আমি মৌখিক কোন আদেশ দেয়নি। বালু উত্তোলনের বিষয়টি তিনি অবগত নয় বলে জানান।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জনৈক এক ব্যক্তি জানান, নদী বা খাল থেকে বালু উত্তোলনের নির্দেশনা শুধুমাত্র পানি উন্নয়ন বোর্ড অথবা জেলা প্রশাসক দিতে পারেন। কিন্তু ভৈরবে খাল থেকে বালু উত্তোলনের পারমিশন দেন এলজিইডি প্রকৌশলী আবুল হাসানাত মহিউদ্দিন। কি কারণে এই প্রকৌশলী বারবার উপজেলা নির্বাহী অফিসারের দোহাই দিচ্ছেন তা বুঝতে পারছি না। এর আগেও তিনি ইউএনও মহোদয়ের দোহাই দিয়েছেন। ওই ইউএনও সাহেবও অস্বীকার করেছেন। আবার বর্তমান ইউএন স্যারের দোহাই দিয়েছেন তিনি নাকি বালু উত্তোলনের মৌখিক অনুমোদন দিয়েছেন। দু’দিন পরপর এই রশি টানাটানির কারণ কি এলাকাবাসীর কাছে একটি রহস্য রয়ে গেছে। তিনি আরো বলেন, আমরা সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে তদন্ত সাপেক্ষে এর সুষ্ঠু বিচার কামনা করছি।

(এসএস/এএস/ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০২৪)

পাঠকের মতামত:

০৭ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test