E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ছেলের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন পক্ষাঘাতগ্রস্ত বাবা 

২০২৪ ফেব্রুয়ারি ২১ ১৬:১৫:৫৫
ছেলের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন পক্ষাঘাতগ্রস্ত বাবা 

তুষার বিশ্বাস, গোপালগঞ্জ : বিদেশে পাড়ি জমাতে গিয়ে ভূমধ্যসাগরে নৌকা ডুবে নিহত ৮ জনের মধ্যে ৩ জনের বাড়ি গোপালগঞ্জে মুকসুদপুর উপজেলার ৩টি গ্রামে। সংসারের হাল ধরতে গিয়ে দালালদের মাধ্যমে অবৈধ পথে বিদেশ যাওয়ার পথে মৃত্যুবরণ করেছে তারা। এখন পরিবারের আশা সন্তানদের মরদেহ যেন বাড়িতে আসে, এক নজর যেন দেখতে পারেন।

গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার গয়লাকান্দি গ্রামের পক্ষঘাতগ্রস্ত বাবা পান্নু শেখ অপেক্ষায় রয়েছেন ছেলে ইমরুল কায়েস আপনকে ফিরে পাওয়ার আশায়। তিনি এখনো জানেন না ছেলে বেঁচে আছে নাকি মারা গেছে। আপনের বাবা বলেন, কেউ বলেছে আমার ছেলে হাসপাতালে আছে। কেউ বলেছে জেলে। আমি শুধু আমার ছেলেকে ফিরে পেতে চাই। ছেলেকে ফিরে পেলে আমার কোন অভিযোগ নেই। আমার একটাই চাওয়া আমি যেন আমার ছেলেকে ফিরে পাই।

মা কেয়া কামরুন নাহার ছেলের মৃত্যুর খবর পেলেও জানাননি পক্ষাঘাতগ্রস্ত অসুস্থ স্বামীকে। মা কেয়া কামরুন নাহার ছেলের শোকে পাথর হয়ে পড়েছেন। তাই কারও সঙ্গে কোন কথা বলছেন না। শোকে পাথার এ মা বাকরুদ্ধ। মঙ্গলবার বিকেলে গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার গয়লাকান্দি গ্রামে ইমরুল কায়েস আপনের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে শোকের ছায়া। শুধু ইমরুল কায়েস আপন নয় এমন পরিণতি বরণ করেছেন একই উপজেলার বড়দিয়া গ্রামের দাদন শেখের ছেলে রিফাত শেখ ও ফতেপট্টি গ্রামের রাসেল শেখ।

জানা গেছ, বাবা পান্নু শেখ ২০০৪ সালে সৌদি চলে যান। ১৫ বছর পর ২০১৯ সালে বাংলাদেশে ফিরে এসে একটি কোম্পানিতে ড্রাইভারের চাকরি নেন। এক বছর আগে তিনি পক্ষাঘাতগ্রস্থ হয়ে কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেললে বন্ধ হয়ে যায় আয় রোজগার। তাই সংসারের হাল ধরতে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র ইমরুল কায়েস আপন ইতালি যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করে। পরে আত্মীয় রহিমের মাধ্যমে ১১ লাখ টাকায় গত ১০ জানুয়ারি ইতালির উদ্দেশ্যে পাঠান ছেলে আপনকে। ১৪ ফেব্রুয়রারি লিবিয়া থেকে নৌকা যোগে ইতালির উদ্দেশ্যে রওনা দেন আপন। পরে ভূমধ্যসাগরে নৌকা ডুবে ছেলের মৃত্যুর খরর বাড়িতে আসলে নেমে আসে শোকের ছায়া।

পান্নু শেখ সৌদি থাকার সময় ছেলে ও মেয়েকে নিয়ে স্ত্রী কেয়া কামরুন নাহার পাবনা বাবার বাড়িতে থাকতেন। ইমরুল কায়েস আপন পাবনাতেই পড়াশোনা করেছে। সেখান থেকে এসএসসিও এইচএসসি উভয় পরীক্ষায় জিপিএ ৫ পেয়ে পাশ করেন। বেধাবী এই শিক্ষার্থী ভর্তি হন রাজশাহী এক্সিম ব্যাংক কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানে তিনি ৪র্থ বর্ষের ছাত্র ছিলেন।

শুধু আপন নয় একই চিত্র রিফাত শেখ ও রাসেল শেখের বাড়িতে। তিন যুবকের মুত্যুতে শুধু পরিবার নয় গ্রামে জুড়ে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। তাদের বাড়িতে ভিড় করেছেন গ্রামবাসী। এমন ঘটনা যেন আর না ঘটে সেজন্য দালালদের দৌরাত্ম কমাতে আইনি পদক্ষেপ নেয়ার দাবী স্থানীয়দের।

নিহত ইমরুল কায়েস আপনের বাবা পান্নু শেখ বলেন, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুরসহ আশপাশের অনেকেই ইতালি যায়। তাদের সঙ্গে ছেলেকে পাঠিয়েছেন। তাকে পাঠিয়ে এখন মনে হচ্ছে ভুল করেছি। গত ৮ জানুয়ারি এক্সিম ব্যাংকের টেকেরহাট শাখার মাধ্যমে দালাল রহিমের কাছে ১১ লাখ টাকা পাঠাই। রহিম লিবিয়া থাকে। তার বাড়ি মুকসুদপুর উপজেলার রাগদী ইউনিয়নের গজনা গ্রাম। জীবনের সঞ্চিত সব সম্বল দিয়ে ছেলেকে বিদেশ পাঠিয়ে এখন নিঃস্ব হয়ে পড়েছি। এখন কি করবো কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না।

পান্নু শেখ আরো বলেন, ছেলের সঙ্গে সর্ব শেষ কথা হয়েছে গত ১২ ফেব্রুয়ারি। তখন সে বলেছিল ১৪ তারিখে ইটালীর উদ্দেশ্যে রওনা দেবে। কখন তার সাথে প্রায় ১৫ মিনিটি বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা হয়েছে। ১৪ ফেব্রুয়ারির পর আর তার সাথে কোন যোগাযোগ হয়নি।

ইমরুল কায়েস আপনের বড় চাচি আনোয়ারা বেগম বলেন, আমার দেবর পান্নু শেখ ১ ছেলে ও ১ মেয়ের বাবা। ছেলে ইমনুল কায়েস আপন বড়। মেয়ে মীমের বয়স মাত্র ৫ বছর। আপসেন জন্ম পাবনায়। সে সেখানে বড় হয়েছে। সেখানেই পড়াশোনা করেছে। গ্রামে মাঝে মধ্যে বেড়াতে আসত। ছেলেকে হারিয়ে আমরা দারুনভাবে ব্যাথিত।

(টিবি/এসপি/ফেব্রুয়ারি ২১, ২০২৪)

পাঠকের মতামত:

০৪ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test