E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

আগৈলঝাড়ায় মোনাই পাগলের আশ্রমে মাঘী পূর্ণিমা উপলক্ষে ধর্মীয় অনুষ্ঠান ও ২ দিনব্যাপী মেলা

২০২৪ ফেব্রুয়ারি ২৪ ১৬:৪৭:৫১
আগৈলঝাড়ায় মোনাই পাগলের আশ্রমে মাঘী পূর্ণিমা উপলক্ষে ধর্মীয় অনুষ্ঠান ও ২ দিনব্যাপী মেলা

আঞ্চলিক প্রতিনিধি, বরিশাল : বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার সরবাড়ী গ্রামে শ্রীমৎ স্বামী মনোহর গোস্বামী মোনাই পাগলের আশ্রমে মাঘী পূর্ণিমা উপলক্ষে ব্যপক উৎসাহ উদ্দীপনায় ধর্মীয় অনুষ্ঠান ও দু’দিনব্যাপী মেলার অনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়েছে। আশ্রমের পরিচালক শ্রী ঠাকুর দাস জানান, মাঘী পূর্ণিমা উপলক্ষে প্রতি বছরের ন্যায় এবছরও দু’দিন ব্যাপী ধর্মীয় অনুষ্ঠান ও মেলায় বাংলাদেশসহ বার্মা, নেপাল ও ভারত থেকে হাজার-হাজার ভক্তরা সমবেত হয়েছেন।

আজ শনিবার বিকেলে আশ্রমের পুরোহিত মঙ্গল প্রদীপ জ¦ালিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনার পরে শুরু হয়েছে মহানাম সংকীর্ত্তন। ঘোষিত মেলা রবিবার শেষ হলেও এর রেশ থাকতে আরও তিন চার দিন।

শুক্রবার রাতে মোনাই পাগলের আশ্রমের ভক্তদের সাথে কুশল বিনিময় করে একাকার হয়ে অনুষ্ঠান উপভোগ করেন জাতির পিতার ভাগ্নে, বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের নির্বাহী সদস্য সেরনিয়াবাত আশিক আবদুল্লাহ। এসময় তার সাথে ছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সুনীল কুমার বাড়ৈ, সাধারণ সম্পাদক আবু সালেহ মো. লিটন, বাকাল ইউপি চেয়ারম্যান বিপুল দাস, সাংগঠনিক সম্পাদক অনিমেষ চন্দ্র মন্ডল, উপজেলা যুবলীগের সভাপতি কামরুজ্জামান সেরনিয়াবাত আজাদসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দরা।

সরেজমিনে আগৈলঝাড়া-গোপালগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের জোবারপাড় এলাকায় ভক্তদের অনুদানে গড়া দৃষ্টি নন্দন শ্রীমৎ স্বামী মনোহর গোস্বামী মোনাই পাগলের আশ্রমের আঙ্গীনাসহ ও মহাসড়কের দু’পাশে অন্তত দু’কিলোমিটার বিস্তৃত এলাকা জুড়ে বসেছে মেলার বিভিন্ন স্টল। মেলার দোকানে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ছাড়াও রেডিমেট ফার্নিচারের দোকানে দেখা গেছে উপচে পড়া ভীর।

কয়েকদিন আগে থেকেই মন্দিরে আসতে শুরু করেছে দেশ-বিদেশের হাজারো শিষ্য ও ভক্তবৃন্দরা।
মোনাই পাগলের জন্ম ও ইতিহাস সম্পর্কে আশ্রমের সেবায়ত ঠাকুর দাস জানান, জোবারপার গ্রামের হালদার বাড়িতে গৌর মোহন হালদারের সন্তান হয়ে জন্মগ্রহণ করেন শ্রীমৎ স্বামী মনোহর গোস্বামী ওরফে মোনাই পাগল। মোনাই পাগলের জন্ম ইতিহাসের সঠিক দিনক্ষণ না জানলেও বাংলা ১৩৭৩ সালের ২৮ জৈষ্ঠ মোনাই পাগল ইহলোক ত্যাগ করেন।

তিনি আরও জানান, মোনাইপাগলের জীবনীতে জানা গেছে অসংখ্য চমকপ্রদ তথ্য ও বিচিত্র লীলার খবর। সবর্দা সত্য কথা বলা, ন্যায় পথে চলা ও পরোপকার করাই ছিল মোনাই পাগলের অন্যতম বৈশিষ্ঠ। সৃষ্টিকর্তার কৃপা লাভ করে অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারীও ছিলেন বলেও জানান ঠাকুর দাস।
তার লীলার মধ্যে একটি হচ্ছে, ওই এলাকার জনৈক নীলকান্ত ঘরামী তার জমাজমি নিয়ে মহাবিপদে পরে কোন রকমেই বিপদ মুক্ত হতে পারছিলেন না। উপায়অন্তু না পেয়ে নীলকান্ত মোনাই পাগলের শরনাপন্ন হন। বিপদ মুক্ত হওয়ার জন্য মোনাই তাকে সাতদিন ধৈর্য্য ধরে সৃষ্টি কর্তাকে স্মরণের কথা বলেন। সৃষ্টিকর্তার উপর বিশ্বাস স্থাপন করে সাতদিন পর নীলকান্ত সম্পূর্ণ বিপদমুক্ত হন।

এছাড়াও ওই এলাকার জনৈক সূর্যমনি মোনাই পাগলের দর্শণ চান। সূর্যমনিকে পরীক্ষা করার জন্য তিন বছর না খেয়ে জঙ্গল ঘেরা পাহারে পাঠিয়ে দেন মোনাই। সূর্যমনির চোখ বন্ধ করে মুখে একটি পাতা দিয়ে মোনাই তাকে নিক্ষেপ করেন। কিছুক্ষন পর সূর্য মনি চোখ খুলে দেখতে পান সে এক জঙ্গল ঘেরা পাহারের চূড়ায় দাঁড়িয়ে আছেন। তিন বছর পর হঠাৎ একদিন মোনাই পাগল সূর্যমনির সাথে জঙ্গলঘেরা পাহারে দেখা করেন। সেখানে বসে মোনাই পাগল সূর্যমনিকে আর্শীবাদ করে ডান হাত ধরে নিক্ষেপ করলে সূর্যমনি তার বাড়ির উঠানে পৌঁছে যান। তাৎক্ষনিক সূর্যমনি দৌড়ে মোনাই পাগলের বাড়িতে যান। সেখানে গিয়ে দেখেন মোনাই তার ঘরেই অবস্থান করছেন। মোনাই পাগলের এহেন অসংখ্য চমকপ্রদ কাহিনী রয়েছে।

জীবিতবস্থায় বাংলা ১৩৫৫ সালে মোনাই পাগল আশ্রম তৈরির কাজ শুরু করেন। ১৩৭৩ সালের ২৮ জৈষ্ঠ শ্রীমৎ স্বামী মনোহর গোস্বামী ওরফে মোনাই পাগল দেহত্যাগ করেন। মোনাই পাগলের ব্যবহৃত পানসী নৌকাটি এখনও আশ্রমের মধ্যে অক্ষত অবস্থায় সংরক্ষিত রয়েছে। ভক্তরা প্রায়ই মোনাই পাগলকে তার পানসী নৌকায় রাতের আধারে এখনও বিচরন করতে দেখেন। মোনাই পাগলের মৃত্যুর পর নীলকান্ত ঘরামী আশ্রমের জন্য ৩৩ শতক জমি দান করেন। জীবিত অবস্থায় মোনাই পাগলের নিজ হাতে শুরু করা আশ্রমের কাজটি তার মৃত্যুর পর পর বন্ধ হয়ে গেলে পরবর্তীতে ভক্তদের অনুদানে তিলে তিলে গড়ে তোলা হয় নয়নাভিরাম বর্তমান আশ্রমটি। বাংলা ১৩৯৪ সালে মোনাই পাগলের আশ্রমটির নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করা হয়। বর্তমানে ৩ একর ৬০ শতক জমির ওপর নির্মিত ভক্তরা নিঃস্বার্থ ভাবে কর্মরত রয়েছেন।

(টিবি/এসপি/ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০২৪)

পাঠকের মতামত:

০৩ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test