E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

পরিবারের আহাজারি যেন থামছেই না

মেঘনায় নৌকা ডুবিতে ২ মরদেহ উদ্ধার

২০২৪ মার্চ ২৩ ১৮:২০:৩৭
মেঘনায় নৌকা ডুবিতে ২ মরদেহ উদ্ধার

সোহেল সাশ্রু, ভৈরব : কিশোরগঞ্জের ভৈরব ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া আশুগঞ্জের মাঝামাঝি এলাকা মেঘনা নদীতে বালু ভর্তি বাল্কহেডের ধাক্কায় একটি যাত্রীবাহী ভ্রমণতরী নৌকা ডুবার ঘটনায় ২ জনকে উদ্ধার করে ডুবুরিদল। এ ঘটনায় আরো ৬ জন নিখোঁজ রয়েছে। উদ্ধার হওয়া ২ জনকেই সনাক্ত করেছে তাদের পরিবার। একজন পৌর শহরের কমলপুর আমলা পাড়া এলাকার টুটন দে এর কন্যা আরদ্দা (১১)। আরেকজন ভৈরব হাইওয়ে থানার কনস্টেবল সোহেল রানার স্ত্রী মৌসুমী। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন ভৈরব ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার আজিজুল হক রাজন।

গত শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে মেঘনার পাড় সৈয়দ নজরুল ইসলাম সেতুর নিচে মেঘনা নদীতে বালু ভর্তি বাল্কহেডের ধাক্কায় একটি যাত্রীবাহী ভ্রমণ তরী ডুবে যায়। এ ঘটনায় ১২ জন নারী পুরুষ উদ্ধার হয়েছে। এদের মধ্যে মুমূর্ষু অবস্থায় পৌর শহরের কমলপুর এলাকার সুবর্ণা নামের এক নারীকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়ার পর মৃত্যু বরণ করেন। ওইদিন এ ঘটনায় ৮ জন নিখোঁজ হয়। তবে নৌ-পুলিশ, ভৈরব ফায়ার সার্ভিস, ভৈরব র‌্যাব ও হাইওয়ে পুলিশ মধ্যরাত পর্যন্ত উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করে।

এদিকে নিখোঁজদের খোঁজ না পেয়ে দিশেহারা তাদের পরিবার ও স্বজনরা। সৈয়দ নজরুল ইসলাম সেতু মেঘনা নদীর পাড়ে করছেন এদিক ওদিক ছুটাছুটি। কারো সন্তান, কারো স্ত্রী, কারোবা আত্মীয় স্বজন রয়েছে নিখোঁজের তালিকায়। সৈয়দ নজরুল ইসলাম সেতু এলাকায় লোকে লোকারণ্য হয়ে রয়েছে।
এ ঘটনায় নিখোঁজরা হলো ভৈরব হাইওয়ে থানা পুলিশের কনস্টেবল সোহেল রানা, স্ত্রী মৌসুমী, মেয়ে মাহমুদা ও ছেলে রায়সুল, পৌর শহরের নিউটাউন এলাকার আরদ্দা দে, বেলান দে, রুপা দে ও নরসিংদীর রায়পুরা এলাকার আনিকা আক্তার। এদের মধ্যে আরদ্দা দে ও মৌসুমীকে উদ্ধার করা হয়েছে।

এ বিষয়ে নিখোঁজ রুপা দে কন্যা বেঁচে যাওয়া সুস্মিতা দে বলেন, আমি কিশোরগঞ্জে দাদীর সাথে থাকি। সেখানে একটি কলেজে পড়ি। সেখান থেকে বেড়াতে বাড়িতে এসেছি। আমার পিসা, পিসি ও পিসাতো ভাইও কটিয়াদী থেকে ভৈরব বেড়াতে এসেছে। আমরা আত্মীয় স্বজনরা ৯ জন এক সাথে মেঘনার পাড় ঘুরতে যায়। মেঘনা নদীতে ঘুরতে আমার মাসহ ৫ জন ভ্রমণ তরী নৌকাতে উঠি। ঘুরা শেষে ফেরার পথে নদীর মধ্যে নৌকা চালকের অসতর্কতা ও অসাবধানতায় আমরা একটি বড় নৌকার সাথে ধাক্কা লাগে। চালক অন্য দিকে তাকিয়ে ছিল তাই ওই নৌকার সাথে ধাক্কা লেগেছে। তখন আমরা সবাই পানিতে ডুবে যায়। আমি ও আমার পিসাতো ভাই অপূর্ব দে বেঁচে যায়। এ ঘটনায় আমার মা, পিসা নিখোঁজ রয়েছে। আমার চাচাতো বোনকে আজ মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে।

নিখোঁজ আনিকার বাবা দারু মিয়া বলেন, আমার মেয়ে বান্ধবীর সঙ্গে ভৈরবে এসেছে আমার পরিবারের কেউই জানে না। ইফতারের পর নামাজ শেষে জানতে পারলাম আমার মেয়ে মেঘনা নদীতে নৌকা ডুবে নিখোঁজ হয়েছে। আমি জানতাম আমার মেয়ে তার খালার বাসায় গেছে। মেয়ের বান্ধবীসহ কয়েকজন উদ্ধার হলেও আমার মেয়ের কোনো সন্ধান এখনও পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে ভৈরব হাইওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. সাজু মিঞা জানান, ছুটির দিনে স্ত্রী সন্তান ও ভাগ্নেকে নিয়ে ভৈরব সেতু এলাকায় ঘুরতে যান কনস্টেবল সোহেল রানা। সেখান থেকে মেঘনা নদীতে ভ্রমণের জন্য নৌকায় চড়ে নদীতে ঘুরার সময় হঠাৎ একটি বালুবাহী বাল্কহেড নৌকায় ধাক্কায় মেঘনা নদীতে ডুবে যায়। তাদের মধ্য থেকে ভাগ্নে মারিয়া সাঁতার জানাতে প্রাণে বেঁচে ফিরেন। কিন্তু বাকীরা কেউ তীরে ফিরতে পারেননি। আজ শনিবার কনস্টেবল এর স্ত্রী মৌসুমীর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। বাকীদের উদ্ধারে কাজ চলছে।

এ বিষয়ে ভৈরব ফায়ার সার্ভিস স্টেশন অফিসার আজিজুল হক রাজন জানান, ঘটনায় রাত হওয়ায় আমরা আজ ২৩ মার্চ শনিবার সকাল ৮টায় আমাদের ৫ জন ও বিআইডব্লিওটিএ এর ২ জন ডুবুরীসহ মোট ৭ জন ডুবুরী উদ্ধার কার্যক্রম চালায়। বেলা ১টায় আমরা দুজনের লাশ উদ্ধার করি এবং নৌকাটির জায়গা চিহ্নিত করা হয়েছে। উদ্ধার কার দিয়ে নৌকাটি উদ্ধার করা হবে। এছাড়া উদ্ধার হওয়া ২ জনকে নৌ থানা পুলিশের মাধ্যমে তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
এ বিষয়ে নৌ-থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ মনিরুজ্জামান বলেন, আজ শনিবার সকালে সন্দেহভাজন ৩ জন বাল্কহেড চালককে আটক করা হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। দোষীদের ধরতে পুলিশ কাজ করছে।

এদিকে ঘটনাস্থলে কিশোরগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার রাসেল শেখ বিপিএম, ভৈরব উপজেলা নির্বাহী অফিসার একেএম গোলাম মোর্শেদ খান, ব্রাহ্মণবাড়িয়া আশুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার শ্যামল চন্দ্র বসাক, ভৈরব-কুলিয়ারচর সার্কেলের সিনিয়র পুলিশ সুপার দেলোয়ার হোসেন, ভৈরব থানা অফিসার ইনচার্জ মো. সফিকুল ইসলাম, নৌ-থানা অফিসার ইনচার্জ মনিরুজ্জামান ও ভৈরব হাইওয়ে থানা অফিসার ইনচার্জ মো. সাজু মিয়া ঘটনাস্থলে রয়েছেন এবং সার্বিক কর্মকা- পর্যবেক্ষণ করছেন।
এ বিষয়ে কিশোরগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার রাসেল শেখ বিপিএম বলেন, যতক্ষণ না নিখোঁজ মরদেহ পাওয়া যাবে ততক্ষণ ডুবুরীদল উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা করে যাবে। এ বিষয়ে দোষীদের সনাক্ত করতে পুলিশ কাজ করছে। এ সময় তিনি নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।

(এসএস/এসপি/মার্চ ২৩, ২০২৪)

পাঠকের মতামত:

২৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test