E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ওড়াকান্দিতে দেশের সর্ববৃহৎ মহাবারুনীর স্নানোৎসব 

২০২৪ এপ্রিল ০৬ ১৮:৪০:৫৮
ওড়াকান্দিতে দেশের সর্ববৃহৎ মহাবারুনীর স্নানোৎসব 

তুষার বিশ্বাস, গোপালগঞ্জ : গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার শ্রীধাম ওড়াকান্দিতে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সর্ববৃহৎ মহাবারুনীর স্নানোৎসব হয়েছে।  

আজ শনিবার ভোর ৬ টা ২৬ মিনিটে উৎসব মুখর পরিবেশে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত পুণ্যার্থীরা পৌনে দু’শ বছরের ঐতিহ্যবাহী এ স্নানোৎসবে অংশ নেন। স্নানোৎসবকে কেন্দ্রকরে ওড়াকান্দিতে ৫ দিন ব্যাপী মহাবারুনীর মেলা শুরু হয়েছে।

পুণ্যব্রহ্ম শ্রী শ্রী হরিচাঁদ ঠাকুরের ২ শ’ ১৩ তম অবির্ভাব তিথি উপলক্ষে শনিবার ভোরে গদীনশীল ঠাকুর ও মতুয়ামাতা সীমা ঠাকুর ও পদ্মনাভ ঠাকুর কামনা সাগরে স্নান করে স্নানোৎসবের শুভ সূচনা করেন। এর পর পাঁচ কুড়ির দল স্নানে অংশ নেয়। তার পর থেকে চলতে থাকে স্নানোৎসবের পালা। আজ দিনব্যাপী চলে স্নানোৎসব। রাতে স্নানোৎসব শেষ হবে।

কাশিয়ানী উপজেলা চেয়ারম্যান ও হরিচাঁদ ঠাকুরের ৬ষ্ঠ পুরুষ সুব্রত ঠাকুর জানান, দেশের বিভিন্ন জেলার প্রত্যন্ত এলাকা, ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, অসম ও ত্রিপুরা থেকে পুন্যার্থীরা দলে দলে ঢাক, ঢোল, শংখ, কাশি বাজিয়ে লাল নিশান উড়িয়ে হরি বোল ধ্বনিতে এলাকা প্রকম্পিত করে স্নানোৎসবে অংশ গ্রহন করেন। সারা দিন বিভিন্ন বয়সের নারী পুরুষ সহ লাখ লাখ পুন্যার্থীরা পাপ মুক্তি ও পাপ মোচনের আশায় স্নান করেছে। স্নান সেরে ভক্তরা ঠাকুরের মন্দিরে প্রনাম করে সুখ, শান্তি, সমৃদ্ধি ও ঠাকুরে কৃপা লাভের জন্য প্রার্থনা এবং গড়াগড়ি যান। এবছর ১০ লাখ পূণ্যার্থী স্নানোৎসবে অংশ নিয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ওড়াকান্দিতে শনিবার থেকে ৫ দিন ব্যাপী বারুনীর মেলা শুরু হয়েছে বলেও জানান সুব্রত ঠাকুর।
শ্রীধাম ওড়াকান্দি বরুনীর স্নান ও মেলা কমিটির সদস্য ডা. অসিত বরণ রায় বলেন, হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে এটি একটি মহা তীর্থস্থান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতায় আছেন বলেই আমরা উৎসবের আমেজে স্নানোৎসবে অংশ নিয়েছি। ভাব গাম্ভীর্যের মধ্য দিয়েই ধর্মীয় উৎসব করতে পারছি। তিনি স্নানোৎসবে আগত ভক্তদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুস্বাস্থ্য, দীর্ঘায়ু ও সাফল্য কামনায় প্রর্থনা করার আবহান জানান।

বাগেরহাট জেলার হোগলাবুনিয়া গ্রামের নির্মল ওঝা বলেন, এটি বারুনী উৎসবের বাংলাদেশের মধ্যে সবচেয়ে বড় স্নানোৎসব ও মেলা। এখানে পূণ্য লাভের আশায় স্নান করেছি। ওড়াকান্দিতে স্নান করলে পাপ মোচন হয় বলে প্রচলিত রয়েছে। এ বিশ্বাস আমাদের মধ্যে রয়েছে দীর্ঘ পৌঁনে ২শ’ বছর ধরে।

উল্লেখ্য, নিপীড়িত ও অবহেলিত মানুষের মুক্তির দূত হিসাবে আধ্যাত্মিক পুরুষ পূর্ণব্রহ্ম শ্রীশ্রী হরিচাঁদ ঠাকুর বাংলা ১২১৮ সালের ফাল্গুন মাসের মধুকৃষ্ণা ত্রয়োদশী তিথীর ব্রাহ্ম মুহুর্তে মহা বারুনীর দিনে গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানী উপজেলার সাফলীডাঙ্গা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি মাত্র ৬৬ বছর বয়সেই ১২৮৪ সালে জন্মের একই দিন ও তিথিতে তিরোধানে যান। এই পরম পুরুষ হরিচাঁদ ঠাকুরের জন্মের জন্য সাফলীডাঙ্গা গ্রাম হয়ে ওঠে ধন্য। এর পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী গ্রাম ওড়াকান্দি হরিচাঁদ ঠাকুরের অলৌকিকত্ব ও লীলার জন্য বিখ্যাত হয়ে উঠে। এটি জেলা সদর থেকে মাত্র ২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।

হরিচাঁদ ঠাকুরের বাল্য নাম হরি হলেও তাঁর একান্ত ভক্তরা হরিচাঁদ নামে ডাকতেন। পিতা যশোবন্ত ঠাকুরের ৫ পুত্রের মধ্যে তিনি ছিলেন দ্বিতীয় পুত্র । পৌনে ২শ’ বছর আগে ঠাকুরের অবির্ভাব দিবস উদযাপন উপলক্ষে ওড়াকান্দিতে স্নানোৎসবের প্রচলন করা হয়। তারপর থেকে প্রতি বছর ওড়াকান্দির স্নানোৎসব চলে আসছে।

(টিবি/এসপি/এপ্রিল ০৬, ২০২৪)

পাঠকের মতামত:

০৪ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test