E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

তিন মেম্বারের কারসাজিতে নিষ্পেষিত শ্রমিকেরা

২০২৪ এপ্রিল ০৭ ১৭:৪০:১৪
তিন মেম্বারের কারসাজিতে নিষ্পেষিত শ্রমিকেরা

রাজন্য রুহানি, জামালপুর : জামালপুর সদরের শাহবাজপুরে তিন মেম্বারের কারসাজিতে মজুরি খোয়াচ্ছে অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচি প্রকল্পের শ্রমিকেরা। একদিকে, তালিকায় নাম লেখাতেও দিতে হয় অর্থ অপরদিকে তালিকাভুক্ত হয়ে কাজ করার পর 'অর্ধেক নাই' হয়ে যায় মজুরি। এ ঘটনায় ভুক্তভোগীদের অবস্থা যেন মরার উপর খাঁড়ার ঘায়ের মতো। এ নিয়ে স্থানীয় প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে ১৮ জন শ্রমিক।

ভুক্তভোগী শ্রমিকদের অভিযোগ, ইজিপিপি প্রকল্পে শ্রমিকের তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত করতে প্রতিজনের কাছ থেকে আট থেকে দশ হাজার টাকা নেন ৬, ৭ ও ৮নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য নিয়ামত আলী, আশরাফুল আলম ও মারফত আলী। এরপর ২০২৩-২৪ অর্থবছরে শাহবাজপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন জায়গায় ইজিপিপি প্রকল্পের কাজ করার পর প্রথম ধাপের আট হাজার টাকা পান তারা। শ্রমিকের তালিকা থেকে নাম কেটে দেয়ার ভয় দেখিয়ে সেখান থেকে চার হাজার টাকা নিয়ে নেন এই তিন ইউপি সদস্য। এছাড়াও দ্বিতীয় ধাপের কাজ কয়েক মাস আগে শেষ হলেও সেই মজুরি এখনো না পাওয়ার অভিযোগ হত দরিদ্র শ্রমিকদের।

ষাটোর্ধ শ্রমিক সুফিয়া বেগম বলেন, ‘৩০ দিন মাটি কাটছি। আগের বিল আট হাজার থেকে চার হাজার নিয়ে গেছে। পরের বিল আট হাজার। সেই টাকা আর দেয় নাই। মোবাইলে দেয় নাই। মেম্বারের বাড়িতে গিয়ে চিৎকার করে কানছি। তবুও আমাদের টাকার কোনো ব্যবস্থা তারা করে দিলো না।’

ইজিপিপি প্রকল্পের শ্রমিক রমেছা বেগম বলেন, ‘১০ হাজার টাকা দিয়ে কার্ড করছি। কার্ড কইরে ৪০ দিনের কাজ করছি। অর্ধেক বেতন আঙ্গরে দেয়, অর্ধেক বেতন মেম্বর চেয়ারম্যানরা নিয়ে জায়গা। অর্ধেক দেয় না। এই ধাপের টাকা বলতেই দেয় নাই। টাকা চাইতে গেলে আরো মারতে আসে।’

মোছা. হামিদা বেগম বলেন, ‘আট হাজার টাকা দিয়ে কার্ড করছি। তার বিনিময়ে কাজ করতাছি। যদি আমরা টাকা না দেয়। তাহলে বলে যে-আঙ্গর নাম বাদ দিয়ে দিবো। নাম কাইটে দিমু। তুঙ্গরে ফিল্ডে নামতে দিবো না। এই অত্যাচার করে। আমরা যদি রাতে টাকা তুইলে আনি, পরের দিন সকালে টাকা দিয়ে দেই। এই বার আমরা টাকা দেয়ার পরেও পরের বারের টাকাটা আমরা পাইতাছি না। পরের বিলটা আঙ্গরে মোটও দিতাছে না। এই জন্য আমরা এটা অভিযোগ জানায়ছি।’

ঈদুল ফিতর ঘনিয়ে আসলেও এখনো মজুরির টাকা না পাওয়ায় কষ্টে ও দুশ্চিন্তায় দিন পার করছে এসব হতদরিদ্র শ্রমিকেরা। মজুরি টাকার বিষয়ে বারবার ইউপি চেয়ারম্যানের কাছে ধরনা দিলেও কোনো সুরাহা না হওয়ার অভিযোগ শ্রকিদের।

জহিরন বেগম নামে একজন শ্রমিক বলেন, ‘আমরা গরীব মানুষ। ঈদ আইতাছে পুলাপানের কাপর চোপর কিনবো, চিনি-সেমাই কিনবো। তাহলে পুলাপানের মুখে আমরা দিমু কি? আমরা নিজে খামু কি? আঙ্গরতো পেট আছে। আমরা পেট ছাড়া না তো। আমরা চেয়ারম্যান- মেম্বাররে জানাইছি। চেয়ারম্যান- মেম্বার বলছে যে-দিমু দিমু। আঙ্গরে মিছে কথা কয়ে আঙ্গরে এই পর্যন্ত রাখলো।’

আমেনা বেগম নামে একজন শ্রমিক বলেন, ‘চেয়ারম্যান-মেম্বারে কই যে টাকা আর আসবো না। টাকাগুলা ব্যাংকে রাইখে দিছে। অফিসারেরা খাইছে। আমরা খাই নাই। এই গুলা বলছে।’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে তিন জন ইউপি সদস্যের সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করলেও কোনা সাড়া পাওয়া যায়নি তাদের। তবে বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের আশ্বাস দিয়েছে স্থানীয় চেয়ারম্যান ও উপজেলা প্রশাসন।

শাহবাজপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আয়ুব আলী খান বলেন, ‘ব্যাংক থেকে সরাসরি তাদের একাউন্টে চলে যায়। নিশ্চয় তারা টাকাটা পাওয়ার কথা। এক্ষেত্রে ওয়ার্ড মেম্বাররা কোথাও কোনো অনিয়ম করে থাকলে। আইনগত ব্যবস্থা আমি গ্রহন করবো।

জামালপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মেহনাজ ফেরদৌস বলেন, ‘আমি অবশ্যই দেখবো বিষয়টা। স্থানীয়ভাবে আমি খোঁজখবর নেবো। আর যদি কোনো অভিযোগ পাই তাহলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

(আরআর/এসপি/এপ্রিল ০৭, ২০২৪)

পাঠকের মতামত:

০৬ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test