E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

কমিউনিটি ক্লিনিকটি এখন শাকসবজি উৎপাদন ও গরু পালনের আখড়া

২০২৪ এপ্রিল ০৮ ১৭:৫৪:২২
কমিউনিটি ক্লিনিকটি এখন শাকসবজি উৎপাদন ও গরু পালনের আখড়া

রাজন্য রুহানি, জামালপুর : জামালপুরের মাদারগঞ্জে সপ্তাহে একদিন খোলা হয় কমিউনিটি ক্লিনিক। থাকেন না কমিউনিটি হেলথকেয়ার প্রোভাইডার। ফলে কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসাসেবা পাচ্ছে না রোগীরা। মাসের পর মাস এমন অবস্থা চললেও কর্তৃপক্ষের নজরদারির অভাবে মির্জাপুর কমিউনিটি ক্লিনিকটি শাকসবজি উৎপাদন ও গরু পালনের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। 

উপজেলার বালিজুড়ি ইউনিয়নের মির্জাপুর এলাকায় অবস্থিত এ কমিউনিটি ক্লিনিকটিতে যাতায়াতের কোনো সুগম রাস্তা নেই। ফলে গ্রামের ওষুধের দোকানিরাই রোগীদের একমাত্র ভরসা। রোগীদের শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাদের ছুটতে হয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নয়তো জেলা সদরের হাসপাতালে। সপ্তাহে একদিন কমিউনিটি ক্লিনিক খুলে খাতাপত্র সাক্ষর দিয়ে কে কখন চলে যান কেউ জানেন না। বাকি ছয় দিন ক্লিনিকটি তালাবদ্ধ থাকে বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, চারপাশ ইটের তৈরি দেয়াল ঘেরা মির্জাপুর কমিউনিটি ক্লিনিকটি তালাবদ্ধ। দুতলা বিশিষ্ট ভবন। নিচতলায় ফাঁকা থাকায় গরু রাখার জায়গা বানিয়েছে স্থানীয় এক বাসিন্দা। দেয়ালের ভেতরে ভবনের সামনেই শাকসবজির গাছ লাগানো। দেখে মনে হয় কারও বাড়ির উঠোন।

স্থানীয়রা জানায়, দায়িত্বে থাকা সিএইচসিপি শ্যামলী আক্তার কিছুদিন হাসপাতালে আসার পর পারিবারিক সমস্যার কারণে দীর্ঘ আট মাস কমিউনিটি ক্লিনিকে আসেন না। স্বাস্থ্য সহকারী হিসেবে দায়িত্বে আছেন যিনি তিনিও আসেন মাসে একবার। এসে খাতাপত্র সাক্ষর করে কখন চলে যান কেউ জানে না। কোনো কোনো মাসে ক্লিনিকের ফটক খোলাও কারো চোখে পড়ে না।

ক্লিনিকে শাকসবজির গাছ লাগিয়েছেন সুবর্না নামের এক স্থানীয় বাসিন্দা। তিনি বলেন, প্রতি রবিবার করে আসে। যে মহিলা আসে তারে জিগাইয়ে লাগাইছি। কইছে যে পইরে আছে লাগানগা। এখন যদি কয় লাগান যাবো না তাইলে কাইটে ফালাইলাম।

স্থানীয় কয়েকজন মহিলা জানান, কোনো মাসে একবার আসে আবার কোনো মাসে আসেইনে। শুধু মিটিং হয় হাসপাতালে আর কিছু না। অসুদপত্রও দেয়না। আমরা কয়দিন যাইয়ে ফিরে আইছি অসুদ দেইনা। তাই আর যাইনে।

তারা আরও জানান, ভালো রাস্তা না থাকায় কোন যানবাহন চলাচল করে না। কেও অসুস্থ হলে যেতে হয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। ক্লিনিকটিতে সর্ব সময় সব ধরনের ঔষধ দিলে আমাদের কষ্ট লাঘব হতো।

এ বিষয়ে সিএইচসিপি শ্যামলী আক্তার বলেন, 'আমার একটি পারিবারিক কারণে ফেব্রুয়ারীর ১৪তারিখ থেকে নভেম্বরের ১১তারিখ পর্যন্ত আমি অনুপস্থিত ছিলাম। স্যারদের সাথে কথা বলে নভেম্বরে এসে জয়েন করছি। এখন আমি প্রতিনিয়মিত অফিস করতেছি। আমি হেড অফিসে কাগজপত্র দিয়েছি, ছুটি মঞ্জুর হয় নাই কিন্তু যে কয়দিন যায়নেই সেকয়দিন বেতনও পাইনেই। আমি যখন ছিলাম না স্বাস্থ্য সহকারী উম্মে সাহিদা ওনি প্রতি রবিবার করে একদিন যাইয়ে সেবা দিতো। ক্লিনিকে স্বাস্থ্য সহকারী পদে আছেন উম্মে সাহিদা, পরিবার পরিকল্পনা সহকারী রাজিয়া সুলতানা। তারাও নিয়মিত আসে না। অখানে শাকসবজির গাছ লাগাইছে, গরু রাখছে, নোংরা করে রাখছে এগুলা আমি বলে আসছি।'

এ বিষয়ে মাদারগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম জয় বলেন, 'তার আট মাসের মত সমস্যা ছিলো। এই জন্য তাকে বিনা বেতনে ঢাকা থেকে ছুটি মঞ্জুর করে দিছে। অই সময়টাতে আমাদের স্বাস্থ্য সহকারী দায়িত্বে ছিলো। এখন তাকে আবার যোগদান করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নিয়মিত অফিস করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আপনি যেটা বললেন এবিষয়ে অবগত ছিলাম না। আরও যারা দায়িত্বে আছে তারা নিয়মিত অফিস করতেছে। যদি অভিযোগের সত্যতা প্রমাণ পাই সেক্ষেত্রে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নেওয়া হবে।'

(আরআর/এসপি/এপ্রিল ০৮, ২০২৪)

পাঠকের মতামত:

০৬ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test