E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

বাড়িতে আগুন দিতে আসার অভিযোগ, পেট্রোলের বোতলসহ দুর্বৃত্ত আটক

২০২৪ এপ্রিল ১৪ ২৩:২৩:৪১
বাড়িতে আগুন দিতে আসার অভিযোগ, পেট্রোলের বোতলসহ দুর্বৃত্ত আটক

স্টাফ রিপোর্টার : ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক সংলগ্ন রাজবাড়ী জেলা সদরের কামালদিয়া মোড়ের আলমগীরের বাড়িতে আগুন দিতে আসার অভিযোগে পেট্রোলের বোতলসহ সাঈদ নামের এক দুর্বৃত্তকে আটক করে থানা পুলিশের হাতে সোপর্দ করেছে স্থানীয়রা।

রবিবার (১৪ এপ্রিল) বেলা সাড়ে ১১.টার দিকে কামালদিয়ে আলমগীরের দোকানের সামনে হতে পুলিশ তাকে আটক করে রাজবাড়ী সদর থানায় নিয়ে গেছে।

এ ঘটনায় ভুক্তভোগী স্থানীয় দোকানদার মোঃ লালন জানান, আমরা দোকানে বসে আছি, হঠাৎ করে একটা প্রাইভেটকার নিয়ে এসে দুটি লোক নেমে গিয়ে আমার ঘরে পেট্রোল ছিটে দিয়ে আগুন ধরাবের লাগছিল, তখন আমরা ও জনগন মিলে দাবড়া ধরছি। ধরার পর ওরে জিজ্ঞেস করছি তোর নাম কি, ও বলছে সাঈদ। তখন ওরে বলছি যে তুই আমাদের ঘরে আগুন ধরাতে আসলি কেন, তখন ওই সাঈদ বলে, আমার পাঠাইছে আবুল কালাম আজাদ। সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে লালন আরো জানায়;
আমাদের বাড়ির জায়গা কিনছে বলে আবুল কালাম আজাদ, এই কারণে ও দখল নিতে আইছে। তিনি আরো জানেন, পরে ট্রিপল নাইনে ফোন দিয়ে থানা পুলিশের হাতে দিয়ে দিয়েছে।

আরেক ভুক্তভোগী স্থানীয় দোকানদার লালনের ভাই আলমগীর হোসেন বলেন, এর প্রায় মাস দু'য়েক আগে, ওরা একদিন আমাকে এক/দেড়শ বার ফোন দিছে বিকেল ৫.টা পর্যন্ত। ফোন দেওয়ার পরে রাত ৮ টার দিকে আমি, আমার ভাইস্তা, আর আমার জামাই, আমাদের ৩ জনকে ডাক দিয়ে ভবানীপুর আবুল কালাম আজাদের বাড়িতে নিয়ে গেছে। সেখানে আবুল কালাম আজাদের সাথে দেখা হয়, আবুল কালাম আজাদ আমাকে জিজ্ঞেস করে তোমার নাম কি আলমগীর? তোমার দেখার ইচ্ছা ছিল, যাই হোক বসো, বসার পরে সে বলতেছে, তোমার ওই জায়গা তো আমরা কিনছি, এখন ছাইড়া দেও। আমি বললাম স্যার ওই জায়গায় যে আপনি কিনলেন, ওটা তো আমাদের বসতবাড়ি, আমাদের দলিল আছে। সে কয় তোমাদের ওই দলিল ওইটা কিছুই না, সরকার কিভাবে দেয়, তোমাদের দলিল আমি হাইকোর্টে থেকে বাতিল করে ফেলাব, আমি বললাম স্যার এটা নিয়ে তো কোর্টে মামলা চলতেছে, সে বলে কোর্টের মামলা আমার কাছে পানি, আমি টাকা দিয়ে ওই জজ কিনে নেব পুলিশ কিনে নেব। আর এখন থেকে মনে করবা খালেকের সাথে মামলা করতেছ না, আবুল কালাম আজাদের সাথে মামলা করতেছো।

ভুক্তভোগী দোকানদার আলমগীর আজকের ঘটনা সম্পর্কে বলেন, একটা প্রাইভেট কার আইসে আমার দোকান পার হয়ে দাঁড়াইছে, একজন লোক ফট করে ভেতরে ঢুকছে পেট্রোলের বোতল নিয়ে, পেট্রোল ম্যাট্রোল ছিটাইছে, এরপর আগুন ধরাই দিতে গেছিল আমার দোকান ও বাড়িতে। পরে আমার বড় ভাই দেখে দাবড়াইয়া একজনকে ধরছে। আর গাড়িতে যে ছিল সে তো গাড়ি নিয়ে টাইনে চলে গেছে। আর ধরা জনকে বাইধা রাইখা জিজ্ঞাসা করাতে সে শিকাড় গিছে যে, আমাদের আবুল কালাম আজাদ পাঠাইছে। পরে পুলিশের ফোন দিয়ে পুলিশের কাছে ধরাইয়া দিছি, পুলিশ নিয়ে গিছে।

রাজবাড়ী জেলা ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি ও ভুক্তভোগী আলমগীরের মামা হাবিবুর রহমান বলেন, আমি এসে দেখি অনেক লোকজন, একটা ছেলেকে বাঁধা, পেট্রোলের বোতল, নাম সাঈদ। ওকে জিজ্ঞেস করলাম তুই এখানে কেন, ও বললো আবুল কালাম আজাদ পাঠাইছে। ওকে জিজ্ঞেস করলাম জমিটা কি তোর নাকি আবুল কালাম আজাদের? ও বলে আবুল কালাম আজাদের সে কিনছে। এরপর আমি মুঠোফোনে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী ইরাদত আলী ভাইকে, আমাদের এমপি মহোদয় কে ও পুলিশকে জানালাম। পুলিশ এসে পেট্রোল সহ আটক করে নিয়ে গেছে, এবং এবং পুলিশের কাছেও স্বীকার করেছে আবুল কালাম আজাদ পাঠিয়েছে। এর আগেও আবুল কালাম আজাদ আমাকে বানিবহ ডেকে নিয়ে এই জমি সম্পর্কে অনেক কথা বলেছে।

প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় বাসিন্দা মাইক্রো ড্রাইভার আরিফ জানান; আমি মানুষের মুখ থেকে শুনে দৌড়ে এসে দেখি একটা লোক খুটির বাঁধা, তার হাতে একটা পেট্রোলের বোতল, নাম শুনলাম স্ঈদ, তখন পুলিশ এসে তাকে জিজ্ঞেস করল তুমি এখানে কেন আসছো, সে বলল আমাকে পাঠাইছে আবুল কালাম আজাদ, এই বাড়িতে আগুন দেওয়ার জন্য। তারপর পুলিশ নিয়ে গেল।

এ ব্যাপারে সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী হিসাবে প্রচারণা চালিয়ে আসছিলেন কিন্তু নির্বাচন করবেন না ও কিশোরগঞ্জ জেলা পরিষদের হিসাব রক্ষক, রাজবাড়ীর শিল্পপতি জমি ব্যবসায়ী আবুল কালাম আজাদের সাথে মুঠো ফোনে ঘটনার বিস্তারিত অবগত করলে তিনি বলেন, কিছুক্ষণ আগে শুনলাম ওই ছেলেটি জমিটি কিনে দিয়েছিলো আমার এক আত্মীয়র, ও ওখানে ছবি উঠাইতে গেছে সে কারেন ওর মারছে, আর আগুন ধরানোর বিষয়টি পুরো ভুয়া তথ্য। তিনি আরো বলেন, আজকে আমার বাড়িতে একজন লোক আসলে তাকে বেঁধে নিয়ে পিটিয়ে ইচ্ছামতো যা খুশি তাই স্বীকার করাতে, পারি বুঝছেন, এরকম একটা ছেলেকে অকারনে আঘাত করা মোটেও ঠিক না। তিনি আরো বলেন, ওই জমি নিয়ে ৮/৯ বছর মামলা চলছে সেটার কোন হদিস নাই। ওই জমিতে ছাপরা -টাপরা ছিল সেটা নাকি ভেঙে নিয়ে গেছে, কারা ভেঙে নিয়ে গেছে, ওই ছেলেটা সেটার ছবি তুলতে গেছে।

আপনি কি এর আগে আলমগীরদের ডেকে নিয়ে জমি খালি করতে বলেছিলেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি প্রতিবেদককে বলেন, কক্ষনো না, কোনদিনও এ বিষয়ে তাদের সাথে আমার কথা হয়নি।
এ বিষয়ে, রাজবাড়ী সদর থানার ওসি ইত্তেখারুল আলম প্রধান আটকের বিষয়টি স্বীকার করে মুঠোফোনে বলেন; আগুন দিতে আসছে কিনা এটা কনফার্ম না, তবে ইনভেস্টিগেশন চলছে।

(একে/এসপি/এপ্রিল ১৪, ২০২৪)

পাঠকের মতামত:

০৪ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test