E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ফরিদপুরে বাস-পিকআপ সংঘর্ষে নিহত বেড়ে ১৪

২০২৪ এপ্রিল ১৬ ১৬:২৫:১৭
ফরিদপুরে বাস-পিকআপ সংঘর্ষে নিহত বেড়ে ১৪

রিয়াজুল রিয়াজ, ফরিদপুর থেকে : ফরিদপুরে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে কানাইপুরের তেঁতুলতলা নামক স্থানে বাসের সঙ্গে পিকআপ ভ্যানের সংঘর্ষে নারী-শিশুসহ মোট ১৪ জন নিহত হয়েছে। এতে আহত হয়েছেন আরও অনেকে। নিহতের মধ্যে ৭ জন নারী, ৪ জন পুরুষ ও ৩ জন শিশু রয়েছে। ২ জন শিশুসহ গুরুতর আহত মোট ৭ জনকে হাসপাতালে পাঠিয়েছে স্থানীয় লোকজন, পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস। হাসপাতালে নেওয়ার পর একজন মহিলা ও একজন শিশুর মৃত্যু হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন করিমপুর হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. সালাউদ্দীন চৌধুরী। ঘটনাস্থলে ১১ ও হাসপাতালে ৩ জনসহ মোট মৃত্যুের সংখ্যা দাড়িয়েছে ১৪। এর মধ্যে ১১ জনের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

এক পরিবারের নিহত পাঁচজন হলেন বোয়ালমারী উপজেলার বেজিডাঙ্গা গ্রামের রাকিবুল ইসলাম মিলন (৩৮), তার স্ত্রী সুমি বেগম (৩৫) ও দুই ছেলে রুহান (৮) ও হাবিব সিনান (৩) ও মিলনের মা মর্জিনা বেগম (৭০)।

নিহত অন্যরা হলেন- আলফাডাঙ্গা উপজেলার চরবকাইল গ্রামের তবিবুর খান (৫৫), বেজিডাঙ্গা গ্রামের জাহানারা বেগম (৫৬), সোনিয়া বেগম (৫৮), নুরারী (২), পিকআপ চালক কুসুমদি গ্রামের নজরুল ইসলাম (৩৫), হিদাডাঙ্গা গ্রামের শুকুরুন নেছা (৮৫), কহিনুর বেগম (৭০) ও সূর্য বেগম (৫৫)। এবং এই রিপোর্ট লেখার আগ মুহুর্তে ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইকবাল নামে আরেক জনের মৃত্যু'র খবর নিশ্চিত করেছে ফরিদপুরের করিমপুর হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সালাউদ্দিন চৌধুরী।

পুলিশ ও স্বজনরা জানিয়েছেন, রফিক ঢাকায় একটি সরকারি অফিসে লিফটম্যানের চাকরি করেন। ঈদের ছুটি শেষে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে সকালে ঢাকার উদ্দেশে বাড়ি থেকে বের হন তিনি।

বাসে সিট না পেয়ে পথে আলফাডাঙ্গা উপজেলা থেকে ছেড়ে আসা একটি পিকআপে উঠেছিলেন তারা। পথে ঢাকা থেকে মাগুরাগামী ইউনিক পরিবহনের বাসের সঙ্গে পিকআপের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়।

এতে ঘটনাস্থলেই পিকআপের চালকসহ ১১ জন নিহত হন। আহতদের ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানে আরও দুইজন মারা যান; বাকিরা চিকিৎসাধীন।

মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) সকাল ৮টার দিকে এই দুর্ঘটনা ঘটে।

ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোর্শেদ আলম দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শনকালে জানান, যাত্রীবাহী একটি বাস ঢাকা থেকে মাগুরার উদ্দেশে যাচ্ছিল। এ সময় ঢাকাগামী যাত্রীবাহী একটি পিকআপের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে।

দুর্ঘটনা বিষয়ে ফরিদপুরের করিমপুর হাইওয়ে থানার ওসি সালাউদ্দিন চৌধুরী দৈনিক বাংলা ৭১কে জানান, 'আমরা এসে ১১ জন ঘটনাস্থলে মৃত অবস্থায় পেয়েছি। ১ জন শিশুসহ আরও গুরুতর আহত ৪ জনকে হাসপাতালে পাঠিয়েছি'। ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ নিহতদের পরিবারের মাধ্যমে লাশ সনাক্ত করে দাপফের জন্য পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছে। হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

আহত একটি শিশুকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে বলে নিশ্চিত করে ফরিদপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. হাসানুজ্জামান।

স্থানীয় মামুন নামের এক ব্যক্তি জানান, 'বিকট শব্দ শুনে দৌড়ে রাস্তায় এসে দেখি শুধু লাশ আর লাশ। আহত মানুষের চিৎকার কি করবো কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। একটি বাচ্চার কান্না শুনে কাছে গিয়ে দেখি বাচ্চাটি সম্পুর্ণ অক্ষত অবস্থায় এক পাশে বসে আছে। পরে তাকে উদ্ধার করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করি।'

দুর্ঘটনায় কারণে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের প্রায় ১ ঘন্টা যানচলাচল বন্ধ থাকে।

পুলিশ জানায়, যাত্রীবাহী বাসটি ঢাকা থেকে মাগুরার উদ্দেশে যাচ্ছিল। কানাইপুরের তেঁতুলতলা বাজার সংলগ্ন দিকনগর এলাকায় পৌঁছালে এ দুর্ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস মরদেহ উদ্ধার করে। এছাড়া আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।

ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. আসাদুজ্জামান বলেন, সড়ক দুর্ঘটনায় আহত সাতজনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে আনার পথে একজন ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও একজন মারা যান। বাকি পাঁচজনের চিকিৎসা চলছে।

ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. কামরুল আহসান তালুকদার বলেন, এ ঘটনায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। একইসঙ্গে নিহতদের প্রত্যেকের পরিবারকে পাঁচ লাখ টাকা এবং আহতদের প্রত্যেককে তিন লাখ টাকা করে সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া হবে।

ফরিদপুরের করিমপুর হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সালাউদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘দুর্ঘটনা কবলিত যাত্রীবাহী বাস ও পিকআপ পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।’

(আরআর/এসপি/এপ্রিল ১৬, ২০২৪)

পাঠকের মতামত:

৩০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test