E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ঘরে-বাইরে স্বস্তি নেই

৪২ ডিগ্রী তাপমাত্রায় পুড়ছে ঈশ্বরদী

২০২৪ এপ্রিল ২১ ১৮:৫০:৪৯
৪২ ডিগ্রী তাপমাত্রায় পুড়ছে ঈশ্বরদী

ঈশ্বরদী প্রতিনিধি : পাবনার ঈশ্বরদীতে লাগাতার তাপপ্রবাহে চরম দুর্ভোগে জনজীবন। ঘরে-বাইরে কোথায়ও নেই স্বস্তি। বাতাসে বইছে হল্কা। সপ্তাহজুড়ে টানা দাবদাহে পুড়ছে ঈশ্বরদী। খাঁ খাঁ রোদে ঈশ্বরদী শহরের ব্যস্ততম সড়কগুলোতে লোক চলাচল কমে গেছে। খুব বেশি প্রয়োজন না হলে কেউ বাড়ি থেকে বের হচ্ছে না। 

ঈশ্বরদী আবহাওয়া অফিসের সহকারী পর্যবেক্ষক জানান, রবিবার ২১ এপ্রিল বিকেল ৩টায় ঈশ্বরদীতে ৪২ ডিগ্রী তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে। বাতাসে জলীয় বাস্পের পরিমাণ ছিল শতকরা ২১ ভাগ। ঘরে-বাইরে অসহ্য গরম। ভোগান্তিতে পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষ। খুব প্রয়োজন না হলে বাইরে না বেরোনোর পরামর্শ দিয়েছেন ডাক্তাররা।

তীব্র তাপমাত্রার রেকর্ডে পুড়ছে ঈশ্বরদী জনপদ। গত কয়েকদিন ধরেই বইছে তীব্র তাপপ্রবাহ। ঈশ্বরদীতে বিরাজমান মাঝারি ও তীব্র তাপপ্রবাহে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে জনজীবন। পাশাপাশি বাতাসে জলীয় বাস্পের পরিমাণ কম থাকায় ঘরের বাইরে বের হলেই রোদের প্রখরতায় যেন শরীর পুড়ে যাচ্ছে। তবে এবারে ঘন ঘন লোডশেডিং না থাকায় ঘরে কিছুটা হলেও স্বস্তিতে আছে মানুষ।

তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে কর্মরত শীতপ্রধান এলাকার বিদেশি নাগরিকেরা। তীব্র তাপপ্রবাহ উপেক্ষা করেই তাঁরা দিনের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে বিদেশিদের কর্মস্থল ও আবাসিক এলাকার বাইরে ঘোরাফেরা করতে এখন খুব কম দেখা যাচ্ছে। সাধারণত: শনিবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনে ঈশ্বরদী বাজারে বিদেশীদের ভীড় থাকে। কিন্তু তীব্র গরমের কারণে শনিবার (২০ এপ্রিল) বাজারে বিদেশীদের আগমন ছিল অতিনগণ্য।

সরেজমিনে রবিবার রূপপুর প্রকল্পে কর্মরত বিদেশিদের আবাসিক গ্রিনসিটি এলকায় এখন ভিন্ন চিত্র। যেখানে শত শত বিদেশি নাগরিকের পদচারণায় মুখর থাকে তা জনমানবশূন্য। গ্রিনসিটির আশেপাশের দোকানগুলোও বন্ধ। প্রকল্পের শ্রমিকরা জানান, গরমে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছি। তীব্র তাপের মাঝেই কাজ করতে হচ্ছে। স্থানীয়রা নিজেরা তাপ সইতে কিছুটা অভ্যস্থ হলেও বিপদে পড়েছেন প্রকল্পে নিয়োজিত রুশসহ অন্যান্য বিদেশী নাগরিকেরা।

তীব্র তাপপ্রবাহে সবচেয়ে বেশি কষ্টে আছেন শ্রমজীবী মানুষ। প্রখর রোদে দাঁড়িয়ে থাকা রিকশাচালক মনিরুল বলেন, সড়কে মানুষের চলাচল তুলনামূলক কম। মালিকের জমা ছাড়াও সংসারের চাল-ডাল কেনার খরচ জোগাতে কষ্ট হলেও রিকশা চালাতে হচ্ছে।

ঈশ্বরদী জংশন স্টেশনে তীব্র গরমে যাত্রীদের হাঁসফাঁস করতে দেখা গেছে। প্লাটফর্মে সীমিত সংখ্যক ফ্যান থাকায় ট্রেনের জন্য অপেক্ষমান যাত্রীদের অসহনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

তাপপ্রবাহ দীর্ঘায়িত হলে ফসলের ক্ষতির আশঙ্কা করছেন কৃষকরা। বিশেষ করে বোরো ধান ও লিচুচাষিরা চলমান আবহাওয়ায় বেশি শঙ্কিত। পদকপ্রাপ্ত লিচুচাষি আব্দুল জলিল কিতাব মন্ডল জানান, তীব্র দাবদাহে গুটি ঝরে পড়ছে। এঅবস্থা চলমান থাকলে এবারে ঈশ্বরদীতে লিচুর ফলন বিপর্যয় ঘটবে।

ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মিতা সরকার বলেন, তীব্র খরা পরিস্থিতি বিরাজমান। চলতি বোরো ধানের জমিতে সবসময় ২-৩ ইঞ্চি পানি রাখতে হবে। পাশাপাশি বোরো ধানের জমিতে বিঘাপ্রতি পাঁচ কেজি পটাশ সার প্রয়োগ করতে হবে। লিচুর বিষয়ে তিনি বলেন, লিচু বাগানে সেচ দিতে হবে। কোনো অবস্থাতেই দিনে সেচ দেওয়া যাবে না। রাতে দিতে হবে। এখন সারের প্রয়োজন নেই। তাপমাত্রা কমলে সার প্রয়োগ করতে হবে।

খরায় ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় টিউবওয়েলে পানি উঠছে না। উপজেলা জুড়ে দেখা দিয়েছে পানি সংকট। প্রায় ১০ হাজার পরিবারের ৫০ হাজার মানুষ বিশুদ্ধ পানি সংকটে ভুগছে।

পৌর এলাকার ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা ফতেহমোহাম্মদপুর, পূর্ব-নূরমহল্লা, আমবাগান, আলহাজ্ব ক্যাম্প, মাহাতাব কলোনিতে দেখা যায়, শতকরা ৯৫ ভাগ বসতবাড়ির টিউবওয়েলে পানি উঠছে না। যাদের বাসাবাড়িতে সাবমার্সেবল বা গভীর নলকূপ রয়েছে তারা সুপেয় পানি পাচ্ছেন। পানির জন্য বেশিরভাগ মানুষকে মসজিদের গভীর নলকূপে ভিড় করতে দেখা যাচ্ছে। তাছাড়া এলাকার যে টিউবওয়েলে সামান্য পানি উঠছে সেখানে বালতি, কলসি, জগ হাতে নিয়ে মানুষ ভিড় করছেন।

উপজেলা সহকারী জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী মাহাবুব ইসলাম জানান, পানির স্তর ৩৫ ফুটেরও বেশী নিচে নেমে যাওয়ায় টিউবওয়েলে পানি উঠছে না। বৃষ্টিপাত হলে পানির স্তর স্বাভাবিক হয়ে যাবে। বৃষ্টিপাত না হওয়া পর্যন্ত সমস্যার কোনো সমাধান হবে না।

ঈশ্বরদী আবহাওয়া অফিসের সহকারী পর্যবেক্ষক নাজমুল হক রঞ্জন জানান, এরআগে ২০ এপ্রিল ৪১ দশমিক ৬ ডিগ্রী এবং ১৯ এপ্রিল ঈশ্বরদীতে ৪১ ডিগ্রী তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে।

(এসকেকে/এসপি/এপ্রিল ২১, ২০২৪)

পাঠকের মতামত:

০৪ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test