E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

মাদারীপুর সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচন 

এমপি শাজাহান খানের বিরুদ্ধে চেয়ারম্যান প্রার্থী শফিক খানের নানা অভিযোগ 

২০২৪ এপ্রিল ২৯ ১৮:৪৯:১৯
এমপি শাজাহান খানের বিরুদ্ধে চেয়ারম্যান প্রার্থী শফিক খানের নানা অভিযোগ 

মাদারীপুর প্রতিনিধি : মাদারীপুর সদর উপজেলা পরিষদের নির্বাচন আগামী ৮ মে অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনকে ঘিরে মাদারীপুর-০২ আসনের সংসদ সদস্য, বীর মুক্তিযোদ্ধা শাজাহান খানের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ তুলেছেন মোটরসাইকেল প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী পাভেলুর রহমান শফিক খান। অভিযোগ এরইমধ্যে রির্টানিং কর্মকর্তার কাছে লিখিত দিয়েও কোন সুরাহা না পেয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন বলে জানান এই প্রার্থী।

সোমবার (২৯ এপ্রিল) দুপুরে মাদারীপুর শহরের ডিসিব্রীজ এলাকায় এই প্রার্থীর নিজস্ব কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য, মাদারীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য বীরমুক্তিযোদ্ধা শাজাহান খানের বড় ছেলে আসিবুর রহমান খান (আসিব খান)। আসিব খান কেন্দ্রীয় যুবলীগের সদস্য ও মাদারীপুর জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি। তিনি এবার মাদারীপুর সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আনারস প্রতীকে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন। অপরদিকে এমপি শাজাহান খানের চাচাতো ভাই পাভেলুর রহমান শফিক খানও সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মোটরসাইকেল প্রতিক নিয়ে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন। তিনি মাদারীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও দুইবারের সাবেক চেয়ারম্যান।

সংবাদ সম্মেলনে সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের চেয়ারম্যান প্রার্থী পাভেলুর রহমান শফিক খান অভিযোগ করেন, আসন্ন সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আনারস প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন শাজাহান খানের বড় ছেলে আসিবুর রহমান আসিব খান। এই নির্বাচনকে ঘিরে ছেলের পক্ষে কাজ করছেন এমপি শাজাহান খান। শাজাহান খান দীর্ঘদিন সংসদ সদস্য থাকায় এবং সাবেক মন্ত্রী হওয়ার কারণে প্রভাব বিস্তার করে ভোটারদের ভয়ভীতি দেখানো, প্রশাসনের উপর চাপ প্রয়োগ, কালো টাকা ছড়ানোর কারণে নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট করে, নির্বাচনী ফলাফল নিজের পক্ষে নিতে চেষ্টা করছেন। ইতিমধ্যে আমার নির্বাচনি প্রচারণায় বাধা প্রদান, নির্বাচনি ব্যানার, ফেস্টুন, স্টিকার, লিফলেট ছিড়ে ফেলা, আমার কর্মীদের মারধর, হত্যার হুমকি, নির্বাচনি অফিস বন্ধ করে দেয়াসহ বিভিন্ন নির্বাচনি আচরণবিধি ভঙ্গসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকান্ড সংগঠিত করেছেন।

শফিক খান আরো লিখিত অভিযোগ করেন, নির্বাচন কমিশনের আইনে স্থানীয় সংসদ সদস্য নির্বাচনী এলাকায় প্রচার-প্রচারণা অংশ নিতে পারবেন না। কিন্তু সেই আইনকেও বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাচ্ছেন সংসদ সদস্য। শাজাহান খান নির্বাচনি আচরণ বিধি লঙ্ঘন করে তফসিল ঘোষণার পরেও তার ছেলের পক্ষে এলাকায় অবস্থান করে প্রকাশে ও গোপণে নির্বাচনি প্রচারণা করে যাচ্ছেন। তিনি বিভিন্ন এলাকার সাধারণ ভোটার, রাজনৈতিক কর্মী, সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বাড়ীতে ডেকে এনে আবার কখনো নিজে তাদের বাড়িতে গিয়ে ছেলের পক্ষে নির্বাচন করার জন্য প্রভাবিত করছেন।

শফিক খান লিখিত অভিযোগে আরো জানান, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলীয় এমপি ও মন্ত্রীদের স্বজনদের নির্বাচন থেকে সরে দাড়ানোর নির্দেশনা দিয়েছেন। শাজাহান খান এমপি ও আওয়ামলীলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য হওয়া সত্ত্বেও দলীয় সভানেত্রীর নির্দেশনা অমান্য করে নিজের ছেলেকে নির্বাচনি প্রতিদ্বন্দ্বীতা থেকে সরিয়ে নেননি।

শফিক খান জানান, এমন নানা অভিযোগ তুলে রির্টানিং কর্মকর্তার কাছে লিখিত দিয়েও কোন সুরাহা পাওয়া যায়নি। তাই আগামী ৮ মে হতে যাওয়া নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়া নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। নির্বাচন সুষ্ঠু করতে এখনই সেনাবাহিনী, র‌্যাব, বিজিবি মোতায়েনের পাশাপাশি নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগের দাবি জানান চেয়ারম্যান প্রার্থী শফিক খান।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে চেয়ারম্যান প্রার্থী শফিক খান সাতটি দাবী তুলে ধরেন। মাদারীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য শাজাহান খান নির্বাচনি আচারণবিধি লঙ্ঘন করে নির্বাচনি এলাকায় অবস্থান করতে পারবেন না। তিনি সশরীরে অথবা মোবাইল ফোনে কাউকে তার ছেলের পক্ষে নির্বাচন করতে নির্দেশ বা অনুরোধ করতে পারবেন না। তিনি কাউকে ভয়ভীতি ও হুমকি দিয়ে নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করতে পারবেন না। তার ক্ষমতার প্রভাবে তৈরি হওয়া সন্ত্রাসী, চাদাবাজ, মাদক ব্যবসায়ি, টেন্ডারবাজ, ভূমিদস্যু, কিশোর গ্যাং সদস্যদের অবিলম্বে গ্রেফতার করতে হবে। প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে প্রভাবমুক্ত থেকে নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। ঝুকিপূর্ণ প্রতিটি কেন্দ্রে একজন করে ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দিতে হবে। ইতিমধ্যে সংগঠিত সন্ত্রাসী ঘটনা সঠিক তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

এসব অভিযোগ অস্বীকার করে এমপি শাজাহান খান বলেন, আমি মাদারীপুরে থাকলেও আমার ছেলে আসিবুর রহমান আসিব খানের নির্বাচনী কোন প্রচার-প্রচারনায় অংশ নিচ্ছি না। আমার বিরুদ্ধে আনীত সব অভিযোগ মিথ্যা। আমি মাদারীপুরের নিজবাসায় স্থানীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে এলাকার উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডের আলোচনা করি, তবে এটা নির্বাচনী কোন বিষয় না। এরপর আমি সরকারি গাড়িতে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেই।

মাদারীপুর সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের রির্টানিং কর্মকর্তা ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আমম্মেদ আলী মুঠোফোনে বলেন, মোটরসাইকেল প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী পাভেলুর রহমান শফিক খানের অভিযোগগুলো আমলে নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। শফিক খানের অভিযোগ সবগুলোই গ্রহণ করা হয়েছে। সেই অভিযোগ নিয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কাজ শুরু করেছেন।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন মাদারীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা জাহাঙ্গীর কবির, সাধারণ সম্পাদক কাজল কৃষ্ণ দে, পৌর মেয়র খালিদ হোসেন ইয়াদ প্রমুখ।

(এএসএ/এসপি/এপ্রিল ২৯, ২০২৪)

পাঠকের মতামত:

১৪ অক্টোবর ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test