E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

দেশের আলোচিত কিশোরী ইয়াসমিনের মায়ের অস্বাভাবিক মৃত্যু 

২০২৪ মে ০৪ ১৭:৩৯:৫২
দেশের আলোচিত কিশোরী ইয়াসমিনের মায়ের অস্বাভাবিক মৃত্যু 

শাহ্ আলম শাহী, দিনাজপুর : দেশের আলোচিত ও চাঞ্চল্যকর ঘটনা ধর্ষণ ও হত্যার শিকার কিশোরী ইয়াসমিনের মা শরিফা বেগমের অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। পুলিশ দাফনের আগে নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠিয়েছে।

শুক্রবার (৩ মে) রাত ১১টায় দিনাজপুর শহরের গোলাপবাগ এলাকার নিজ বাসা থেকে তার শরিফা বেগমের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এরপর সুরত হাল শেষে পাঠানো হয়েছে দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিক্যাল কলেজ মর্গে। এর আগে ওইদিন দুপুরে নিজ বাসায় তার অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়। নিহতের মাথায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছেন।

শরিফার মরদেহ মর্গে পাঠানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন,দিনাজপুরের পুলিশ সুপার শাহ ইফতেখার আহমেদ।

দিনাজপুর শহরের গোলাপবাগ লেবুরমোড় এলাকায় দ্বিতীয় স্বামী মো. ডাবলু রহমান ও ছেলে সোহানসহ বসবাস করতেন ইয়াসমিনের মা শরিফা বেগম।

স্বামী ডাবলু রহমান জানিয়েছেন, 'শুক্রবার সকাল থেকে কয়েকবার পাতলা পায়খানা ও বমি হয় শরিফার। দুপুরে ওষুধ আনার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন তার স্ত্রী শরিফা বেগম।'

এদিকে লাশ গোসল করানোর পরও মরদেহের মাথা দিয়ে রক্ত পড়ায় এলাকাবাসীর মনে সন্দেহ জাগে।

শরিফা বেগমের মরদেহ গোসল করানোর কাজে অংশ নেয়া হামিদা বেগম জানান, 'তার মাথার পেছন দিক দিয়ে আঘাতজনিত কারণে রক্তক্ষরণ হচ্ছিলো। অনেক চেষ্টা করেও তা বন্ধ করা সম্ভব হয়নি। এ বিষয়ে শরিফার স্বামী তাদের জানিয়েছে, বাথরুমে পড়ে গিয়ে নাকি মাথায় আঘাত পেয়েছে, তাই রক্তক্ষরণ হচ্ছে।'

এলাকাবা মকবুল আলেয়া, মোসলেমা, শিউলি সহ কয়েকজন জানান, কয়েকদিন ধরে শরিফা বেগম শারীরিকভাবে অসুস্থ ছিলেন। বৃহস্পতিবার রাতে স্বামীসহ বাথরুমে গেলে পা পিছলে পড়ে যান। এ সময় স্বামী তাকে ধরতে গেলে দুই জনই মেঝেতে পড়ে যান। এতে মাথায় আঘাত পান শরিফা, তার স্বামীও পড়ে গিয়ে বাম হাতে আঘাত পান। ছেলে দৌড়ে গিয়ে তাদের উদ্ধার করেন। এ সময় শরিফার মাথা ও শরীরের বিভিন্ন স্থান ভালো করে দেখলেও আঘাতের কোনও চিহ্ন পাওয়া যায়নি। বাড়িতে স্বজনদের উপস্থিতিতে শুক্রবার সকালে নাস্তা ও ওষুধ খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েন শরিফা বেগম। দুপুরে ঘুমের মধ্যে তিনি মারা যান। পরে পরিবারের স্বজনরা এসে দাফনের কাজ শুরু করেন। পরে রক্ত দেখতে পেয়ে পুলিশে খবর দেন।'

দিনাজপুরের পুলিশ সুপার শাহ ইফতেখার আহমেদ জানান, ‘শুক্রবার সন্ধ্যায় জানাজার পূর্বে নিহতের মাথার পেছনের দিক থেকে রক্ত বের হতে দেখেন স্থানীয়রা। পরে খবর পেয়ে পুলিশ নিহতের মরদেহের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণ করেছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এলে শরিফা বেগমের মৃত্যু কীভাবে হয়েছে তা নিশ্চিত হওয়া যাবে। এ বিষয়ে এখন কিছু মন্তব্য ঠিক নয়।’

উল্লেখ্য, ১৯৯৫ সালের ২৪ আগস্ট একদল বিপথগামী পুলিশের দ্বারা ধর্ষণ ও হত্যার শিকার হন কিশোরী ইয়াসমিন। এই ঘটনায় বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে দিনাজপুর। বিক্ষোভের এক পর্যায়ের ২৭ আগস্ট পুলিশের গুলিতে কাদের, সামু, সিরাজসহ ৭ জন নিহত হয়। বিষয়টি সারা দেশে আলোচিত হয়।

পরবর্তীতে কিশোরী ইয়াসমিন ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় দিনাজপুর কোতোয়ালি পুলিশের তৎকালীন এএসআই ময়নুল ইসলাম, কনস্টেবল আব্দুস সাত্তার ও চালক অমৃত লালের ফাঁসি কার্যকর হয়।
১৯৯৫ সালের কিশোরী ইয়াসমিন ধর্ষণ ও হত্যা ঘটনার পর থেকে ইয়াসমিন নারী নির্যাতন প্রতিরোধের প্রতীক হয়ে ওঠেন। ২৪ আগস্টকে ঘোষণা করা হয় ইয়াসমিন ট্রাজেডি এবং নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস।

(এসএস/এসপি/মে ০৪, ২০২৪)

পাঠকের মতামত:

১৮ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test