E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Walton New
Mobile Version

দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে আটক ২১ দালালের নেপথ্যে শক্তিশালী সিন্ডিকেট

২০২৪ মে ১৯ ২০:০৮:০৯
দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে আটক ২১ দালালের নেপথ্যে শক্তিশালী সিন্ডিকেট

শাহ্ আলম শাহী, দিনাজপুর : দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বিশেষ অভিযানে আটক ৩ নারীসহ ২১ দালালকে আদালতের মাধ্যমে অবশেষে জেল-হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। তাদের অনেককে ছাড়িয়ে নেয়ার জন্য বিভিন্ন মহল থেকে জোর তদবির চলেছে।

এই দালালদের নেপথ্যে রয়েছে শক্তিশালী সিন্ডিকেট। তাদের আটকের পর বেরিয়ে এসেছে চমকপ্রদ তথ্য। এই দালালেরা মূলত বিভিন্ন বেসরকরি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের নিয়োগকৃত কর্মচারী। তারা মেডিকেল হাসপাতালে সেবা বা চিকিৎসা নিতে আসা রোগি, এটেন্ডেট বা স্বজনদের ভুল বুঝিয়ে প্রতারণা করে আসছিলো। এমন ৩ নারী ও বিভিন্ন ঔষধ কোম্পানির রিপ্রেজেনটিভসহ ২১ দালালকে আটক করেছে পুলিশ।

রবিবার (১৯ মে) সকাল ৯ টা থেকে সাড়ে ১১ টা পর্যন্ত বিশেষ অভিযানে তাদের আটক করা হয়।এবিষয়ে দুপুরে দিনাজপুর কোতোয়ালি থানায় প্রেস ব্রিফিং করেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড এপস্) আব্দুল্লাহ আল মাসুম।

তিনি জানান, আটককৃত হলেন রোজিনা খাতুন ওরফে রুনা (৩০)। তিনি দিনাজপুর সদরের করিমুল্লাপুর আদর্শ পাড়া গ্রামের মোস্তফা কামালের মেয়ে। আরমান হোসেন ডিভোর্স প্রাপ্ত স্ত্রী। স্পন্দন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে এক বছর ধরে কর্মরত আছেন।শাহানা বেগম ওরফে শাহনাজ (৩৪)। তিনি দিনাজপুর সদরের পাক পাহাড়পুর ইকবাল স্কুল মোড়ের পাশে ভাড়া বাসা থাকেন।তার পিতা সাজিদ উদ্দিন। তিনি জুয়েল হোসেনের ডিভোর্স প্রাপ্ত স্ত্রী। পাঁচ ছয় মাস ধরে বন্ধন কমিউনিটি সেন্টারে চাকরিরত।

মোসাম্মত বৃষ্টি (২৪) তিনি দিনাজপুর সদরের বালুবাড়ী নিমকালি মন্দির এলাকার ইমন আলীর স্ত্রী। জিএস হেলথ কেয়ারে ৮ মাস ধরে কর্মরত।

অপসনিন ফার্মার রিপ্রেসেন্টেটিভ আশরাফুল আলম ওরফে চান মিয়া (৩২)। তিনি গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি উপজেলার এরেন্ডাবাড়ি ইউনিয়নের সন্ন্যাসীর চর গ্রামের সাইফুর রহমানের ছেলে।

অপসোনিন ফার্মার রিপেজেনটিভ শরিফুল ইসলাম (৩৩)।তিনি সে রংপুর জেলার তারাগঞ্জ উপজেলার হারিয়ার কুঠির মন্ডলপাড়া গ্রামের হবিবর রহমানের ছেলে।
অপসোনিন ফার্মার প্রতিনিধি হাবিবুর রহমান (৩৬)। তিনি ঝিনাইদহ জেলার চাঁদপুর উপজেলার ফাজিলপুর গ্রামের সরদার আলীর ছেলে।

বিকন ফার্মার রিপেজেনটিভ শাহীন জামান (৩৫)। তিনি ঠাকুরগাও জেলার রাণীশংকৈল উপজেলার বড়নুনতর গ্রামের নুরুল ইসলামের ছেলে।

সায়নোফিয়া ফার্মার রিপেজেনটিভ শাওন মন্ডল (৩০)। তিনি জয়পুরহাট জেলার আক্কেলপুর উপজেলার বাড়ইল গ্রামের শামসুদ্দিন আহমেদের ছেলে।

জিসকো ফার্মার রিপ্রেসেন্টেটিভ জুলকার নয়ন (২৭)। তিনি পঞ্চগড় সদর উপজেলার অমরখানা গ্রামের শফিউল আলমের ছেলে।

রেনেটা ফার্মার রিপেজেনটিভ আয়নাল হোসেন (৩৪)। তিনি টাঙ্গাইল জেলার গোপালপুর উপজেলার শিবপুর গ্রামের মকবুল হোসেনের ছেলে।

রেনেটা ফামার রিপ্রেসেন্টেটিভ মুস্তাক আহমেদ (৩০)। তিনি রংপুর জেলার বদরগঞ্জ উপজেলার রাজারামপুর ধনতলা গ্রামের তৈয়ব আলীর ছেলে।

রেনেটা ফার্মার রিপ্রেজেন্টটিভ হাবিবুল আরেফিন সোহাগ (২৯)। তিনি গাজীপুর জেলার কাপাসিয়া উপজেলার পাবুর গ্রামের আব্দুল আলীমের ছেলে।

রেনেটা ফার্মার রিপ্রেজেন্টটিভ ঈদুল রহমান (২৯) তিনি ঠাকুরগাঁও জেলার হরিপুর উপজেলার দামইল গ্রামের শমসের আলীর ছেলে।

রাশেদুল ইসলাম রাসেল (২৬) তিনি দিনাজপুর সদরের উপশহর নিউ টাউন ৭ ডেপুটি পাড়ার আমিনুল ইসলামের ছেলে এবং প্রাইম পয়েন্ট ডায়গনস্টিক সেন্টারে কর্মরত।

হাসিবুল আল আসাদ (৩০) তিনি দিনাজপুর সদরের মাহতুল্লাপাড় গাজারমারী গ্রামের শরিফুল ইসলামের ছেলে এবং পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারে কর্মরত।

রাশেদ আলী (৪০) তিনি দিনাজপুর জেলার বিরল উপজেলার বসন্তপুর গ্রামের হোসেন আলীর ছেলে এবং বন্ধন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে কর্মরত।

নাহিদ হাসান (২৪) তিনি দিনাজপুর জেলার চিরিরবন্দর উপজেলার তাজপুর গ্রামের গোলাম মোস্তফার ছেলে এবং সেফা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে কর্মরত।

মাসুম বিল্লাহ (৩২) তিনি দিনাজপুর সদরের ৮ নং উপশহর এলাকার সাবেত আলীর ছেলে এবং সোহাগ মেডিকেল স্টোরের মালিক।

মোরসালিন ইসলাম (২৫)। তিনি দিনাজপুর জেলার পার্বতীপুর উপজেলার মোস্তফা পুর ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের আব্দুল রশিদের ছেলে এবং ইউনিটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে কর্মরত।

আনিসুর রহমান (৪০) তিনি দিনাজপুর সদরের মেডিকেলের সামনে খোদমাদবপুর গ্রামের ইউনুস আলীর ছেলে এবং কাপড়ের দোকান ব্যবসায়ী।

আরিফিন আলী (৪০) তিনি দিনাজপুর সদরের ভবানীনগর সোনাহার পাড়া গ্রামের মুজিবুর রহমানের ছেলে এবং স্পন্দন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে কর্মরত।

তমাল রায় (২৬) দিনাজপুর জেলার বিরল উপজেলার ভাড়াডাঙ্গী গ্রামের পীযূষচন্দ্র রায়ের ছেলে এবং ল্যাব এইড লিমিটেড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে কর্মরত।

দিনাজপুর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ আল মাসুম জানান, কোতোয়ালী থানার কয়েকজন পুলিশের একটি চৌকস টিম গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দালাল আটকের অভিযান পরিচালনা করেন। মেডিকেলের দালাল বিরোধী অভিযানে রোগী ও তাদের স্বজনদের সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগে ৩ নারী ও ১৯ পুরুষকে গ্রেফতার করা হয়। তাদেরকে আটকের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। এতেবেরিয়ে এসেছে চমকপ্রদ তথ্য। তারা কিভাবে রোগি এবং তাদের স্বজনদের ভুল বুঝিয়ে প্রতারণা করে অর্থ হাতিয়ে নেয়। নিজেদের বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিককে রোগি নিয়ে যায়।নিজেদের ল্যাব ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে বিভিন্ন পরীক্ষা-নীরিক্ষা করায়।

এএসপি মাসুম বলেন, দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আগত ৮০ শতাংশ দরিদ্র পীড়িত সেবা প্রার্থীরা নানাভাবে প্রতারণার শিকার ও স্থানীয় ক্লিনিকে ভর্তি হওয়ার জন্য প্ররোচনা করে। কিছু সংখ্যক দালাল রোগী ও রোগীর নিকটে থাকা মোবাইল ও টাকা পয়সা চুরি করে নেয়। বিশেষ করে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের সাথে শনিবার ও মঙ্গলবার বারোটার পর ডাক্তারের সাক্ষাতের নিয়ম থাকলেও তারা প্রতিদিন সকাল থেকেই ডাক্তারের রুমের সামনে ভিড় জমিয়ে সেবা প্রার্থীদেরকে ঢোকার ক্ষেত্রে বিভ্রান্ত সৃষ্টিসহ প্রেসক্রিপশনের ছবি উঠানোর জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়ে এবং ব্যক্তিগত ডকুমেন্টস নিয়ে সম্মানে আঘাত হানে।

কিছু লোককে আটক করা গেলেও মোস্ট ওয়ান্টেড রুনা সহ আরো বেশ কয়েকজন আছে তাদের কেউ শীঘ্রই গ্রেফতার করা হবে।

দিনাজপুরে আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আগত সেবা প্রার্থীরা যাতে এ ধরনের শিকার না হয় এজন্য আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে।

আটক ২১ ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে আদালতের মাধ্যমে জেলা কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।

(এসএএস/এএস/মে ১৯, ২০২৪)

পাঠকের মতামত:

২৭ জুলাই ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test