E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

কুমুর বড়ই তৈরিতে ব্যস্ত বগুড়ার নন্দীগ্রামের কারিগররা

২০১৪ নভেম্বর ২২ ১০:৪১:৪০
কুমুর বড়ই তৈরিতে ব্যস্ত বগুড়ার নন্দীগ্রামের কারিগররা

আব্দুস সালাম বাবু, বগুড়া : কুমুর বড়ি, এক সুস্বাদু খাবার। বিভিন্ন তরকারীর সাথে এ খাবার এনে দেয় ভিন্ন রকমের স্বাদ। গ্রামেগঞ্জে শহরে সবখানেই প্রায় সব শ্রেণির মানুষ এই কুমুরবড়ির প্রতি আকৃষ্ট।

কবে এ খাবার প্রথম তৈরী অথবা কিভাবে এর নাম করন তা সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানা না গেলেও শীতকালে এ খাদ্যদ্রব্য হাটে বাজারে ব্যাপকহারে পাওয়ো যায়। শীত আসার সঙ্গে সঙ্গে বগুড়ার বিভিন্ন উপজেলায় ‘কুমুর বড়ই’ তৈরীর কারিগররা ব্যস্ত হয়ে পড়ে।

শীতকালে বগুড়া জেলায় বাড়তি খাবার তৈরী, বিপনন, বাণিজ্য হয়ে থাকে। ভিন্ন পদের খাবারের পদের মধ্যে কুমুর বড়ই অন্যতম। শীত মানেই বাড়তি কিছু চাওয়া, বাড়তি কিছু পাওয়া, আর প্রাপ্তি। কুমুর বড়ই তৈরীর যেমন হিড়িক পড়েছে। তেমনি ব্যবসায়িদের আনাগোনা বেড়েছে।

গ্রামীণ নারীরা মৌসুমি খাদ্য হিসেবে ও সংসারের বাড়তি আয়ের জন্য কুমুর বড়ই তৈরি করে যাচ্ছে। জেলার নন্দীগ্রাম উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে কুমারবড়ি তৈরী হয়ে থাকে। নন্দীগ্রাম উপজেলার কয়াপাড়া, চাঁনপুরা, কল্যাণ-নগর, নুনদহ, হাটধুমাসহ বিভিন্ন গ্রামের গৃহবধুদের সাথে কথা বলে জানা যায়, শীত মৌসুমে নন্দীগ্রাম উপজেলার প্রায় প্রতিটি বাড়িতে কুমুর বড়ই তৈরির ধুম পড়ে যায়। কেউবা তৈরী করে রোদে শুকিয়ে নিচ্ছে। আবার কেউ বা রোদের জন্য ঘরের চালে শুকিয়ে নিচ্ছে।

কুমুর বড়ই তৈরির পর স্থানীয় ও পাশের উপজেলাসহ নাটোর, পাবনা, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ জেলার দোকানিরা এসে পাইকারি কিনে নিয়ে যায়। এতে করে নিজেদের খাবারের পাশাপাশি বিক্রয় করে বাড়তি আয় হয় বলে গৃহবধুরা জানান। ঠিক কবে কখন থেকে উপজেলায় কুমুর বড়ই তৈরী ও বিক্রি শুরু হয় তা কেউ বলতে না পারেনি। কিন্তু বর্তমানে গৃহীনি-তরুনীরা কুমুর বড়ই তৈরীতে কেউ বসে নেই। সাংসারিক কাজের ফাঁকে গৃহবধুরাই মুলত প্রধান কারিগর। কুমুর বড়ই তৈরী ও বিক্রি করে অনেকেই সংসারের বাড়তি আয় করে থাকে।

মাশকালাই ও খেসারি ডাল থেকে তৈরি করা এই সুস্বাদু খাবার শুধু শীতের সময়ই তৈরি এবং বিক্রি হয়ে থাকে। যা সারা বছরের খাদ্য হিসেবে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে জেলা ও জেলার বাইরে। সবজি ছাড়াও প্রায় সব তরকারিতে এই খাদ্য সহযোগী উপাদান হিসেবে ও আলাদাভাবে ছানা (ভর্তা) করেও কুমুর বড়ই খাওয়া যায়।

উপজেলার হাটধুমা গ্রামের রুবিয়া খাতুন জানান, মাশকালাই ডাল কুমুর বড়ই তৈরীর প্রধান উপাদান। তবে এর সঙ্গে চাল মিশিয়ে যে বড়ই তৈরি করা হয় তার কদর থাকলেও মান ভাল না। কুমুর বড়ই তৈরির প্রক্রিয়া হিসেবে তিনি জানান, সারা রাত পানিতে মাসকালাই ডাল ভিজিয়ে রাখার পর তা পিঁষে প্রতিদিন ভোরে গ্রাম্য বধুরা পাতলা কাপরের ওপর রোদে শুকাতে দেয়া হয়। দেড় থেকে দুই দিন শুকানোর পর কুমুর বড়ই খাওয়ার উপযোগী হলে বিভিন্ন দোকানে পাইকারী এবং খুচরা বিক্রয় করা হয়।

কখনও কখনও বড় বড় মহাজন ও ছোট ছোট দোকানিরা নিজেরাই এসে কিনে নিয়ে যায়। একই গ্রামের কুমুর বড়ই বিক্রেতা গোবেশর চন্দ্র জানান, মাসকালাই থেকে তৈরি আসল কুমুর বড়ই প্রতি কেজি ২০০ থেকে ২৫০টাকায় বিক্রয় করা হয়। অন্যান্য মানের কুমুর বড়ই প্রতি কেজি ৮০ থেকে ১৩০ টাকায় বিক্রি করা হয়।

নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে কুমুর বড়ই তৈরির উপযুক্ত সময়। এই দুই মাসে যতটুকু কুমুর বড়ই উৎপাদন করা হয় তা বছরজুড়ে বিক্রি হয়। তিনি জানান, বিভিন্ন উপজেলা ছাড়াও আশপাশের জেলার পাইকারি ব্যবসায়িরা এসে কুমুর বড়ই কিনে নিয়ে যায়। বগুড়া শহরের রাজা বাজার এলাকা ব্যবসায়ি নাজিরুল আমিন জানান, নন্দীগ্রাম এলাকা থেকে পাইকারি কুমুর বড়ই ক্রয় করা হয়ে থাকে। কুমুর বড়ই এর আলাদা একটা চাহিদা রয়েছে।

বাজারে বিভিন্ন মানের ও দামের কুমুড় বড়ই বিক্রি হয়। একেবারে ভালমানের কুমুর বড়ই বিক্রি হয় ২০০ থেকে ৩৫০ টাকা কেজি। কিছু কিছু ব্যবসায়ি আটা দিয়ে তৈরীকৃত কুমুর বড়ই বিক্রি করে থাকে। এসব যেমন স্বাদ থাকে না তেমনি রান্না করার সময় ঝামেলায় পড়তে হয়।





(এএসবি/এসসি/নভেম্বর২২,২০১৪)

পাঠকের মতামত:

১২ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test