E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

সিদ্ধান্ত আদালতে

কালিগঞ্জের বিষ্ণুপুর পিকেএম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দুই কর্মচারি নিয়োগ

২০২৪ আগস্ট ০৩ ১৯:২০:৫০
কালিগঞ্জের বিষ্ণুপুর পিকেএম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দুই কর্মচারি নিয়োগ

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : কালিগঞ্জের বিষ্ণুপুর প্রাণকৃষ্ণ স্মারক বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে কম্পিউটার অপারেটর পদে মধুসুধন মন্ডল ও আয়া পদে তাপসী সরদারের নিয়োগ নিয়ে জটিলতা দেখা দেওয়ায় তা আদালতের সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। গত বুধবার বিকেলে কালিগঞ্জ উপজেলা পরিষদে এক মতবিনিময় সভায় এ পরামর্শ দেন সাতক্ষীরা-৪ আসনের সাংসদ এসএম আতাউল হক দোলন।

বিষ্ণুপুর প্রাণকৃষ্ণ স্মারক বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ৯ ফেব্রুয়ারি ওই প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার অপারেটর ও আয়া পদে নিয়োগ বোর্ডে বসে। বোর্ডে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বাকী বিল্লাহ হাজির ছিলেন না। এমতাবস্থায় কম্পিউটার অপারেটর পদে মধুসুধনমন্ডল ও আয়া পদে তাপসী মন্ডলের পক্ষে সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকসহ চারজন সাক্ষর করেন। এর ১৫ দিন পর সভাপতি দেবদাস মন্ডল ও দাতা সদস্য গোবিন্দ লাল সরদার বিশেষ ব্যবস্থায় উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে ওই ফলাফল শীটে স্বাক্ষর করিয়ে নিয়োগ বৈধ করার পরিকল্পনা নেন। এতে ১১ সদস্য বিশিষ্ঠ বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির প্রধান শিক্ষকসহ সাতজন সদস্য নাখোশ হন। একপর্যায়ে তারা একসাথে সাক্ষর করে নিয়োগ বোর্ড বাতিল করে নতুন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার জন্য যশোর শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান, জেলা প্রশাসক, জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারসহ বিভিন্ন দপ্তরে চিঠি লেখেন। পরবর্তীতে বিদ্যালয়ের রেজুলেন খাতাসহ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সভাপতি দেবদাসমন্ডল ও দাতা সদস্য গোবিন্দ লাল সরদারের নির্দেশে লাইব্রেরিয়ান রাধেশ্যাম সরদার নিজের হেফাজতে রাখেন। এ নিয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরী করা হয়। পরবর্তীতে নিয়োগ বাতিলের দাবিতে বিদ্যোৎসাহী সদস্য সমীর কুমারমন্ডল ও নিয়োগের দাবিতে মধুসুধনমন্ডল ও তাপসী সরদার কালিগঞ্জ সহকারি জজ আদালতে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেন। গত ১৫ মে রাতে প্রধান শিক্ষকের উপর সভাপতি, দাতা সদস্যসহ কয়েকজন হামলা করেন। গত বছরের ২৩ নভেম্বর নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি থেকে ছয় মাস পেরিয়ে যাওয়ায় পরিপত্র অনুযায়ি গত ২৩ মে নিয়োগ কার্যক্রম বাতিল হয়ে যায়।

প্রধান শিক্ষক নিয়মবহির্ভুত বোর্ড মেনে নিয়ে নিয়োগপত্রে সাক্ষর না করায় সভাপতি দেবদাস ম-ল শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মীদের মে ও জুন মাসের বেতন বিলে সাক্ষর করেননি। ফলে সহকারি প্রধান শিক্ষক নির্মল ঘোষ, সহকারি শিক্ষক সন্ন্যাসী সরকার, রাধেশ্যাম বিশ্বাস ও লাইব্রেরিয়ান রাধেশ্যাম সরদার প্রধান শিক্ষককে বিদ্যালয়ের মধ্যে অবরুদ্ধ করে রাখেন। পরে স্থানীয় সাংসদের চাপের মুখে শিক্ষকদের বেতন বিলে সাক্ষর করেন সভাপতি। একপর্যায়ে মধুসুধনমন্ডল ও তাপসী সরদারকে নিয়োগ দিতে সাংসদের শরনাপন্ন হন নিয়োগ বাণিজ্যের নামে ২৫ লাখ টাকা নেওয়া দাতা সদস্য গোবিন্দ লাল সরদার ও তার খায়েরখাঁ সভাপতি দেবদাস মন্ডল। এরই মধ্যে যশোর শিক্ষা বোর্ডে শিক্ষকরা সাক্ষর করে সভাপতিকে অপসারন চান। তার একািদন পর সভাপতি হাতে পায়ে ধরে সাংসদের সহায়তায় অবারো ওই আবেদন প্রত্যাহার করান।

বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের বিদ্যোৎসাহী সদস্য সমীর কুমারমন্ডল জানান, দুর্নীতিবাজ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বাকী বিল্লাহ নিয়োগ বাণিজ্যের সুফলভোগী হিসেবে মধুসুধনমন্ডল ও তাপসী সরদারকে নিয়োগ দিতে আদাজল খেয়ে মাঠে নেমে পড়েন। তিনি সাংসদ এসএম আতাউল হক দোলনকে ভুল তথ্য দিয়ে প্রধান শিক্ষককে অস্পূর্ণ নিয়োগ বোর্ডকে বৈধ হিসেবে মেনে নিয়ে প্রধান শিক্ষককে ওই দুইজনের নিয়োগপত্রে সাক্ষর করানোর উদ্যোগ নেন। এরই ধারাবাহিকতায় গত বুধবার বিকেল সাড়ে চারটায় কালিগঞ্জ উপজেলা পরিষদে এ সংক্রান্ত বিশেষ সভার আহবান করেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বাকী বিল্লাহ। সেখানে হাজির হন সাংসদ আতাউল হক দোলন, ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দীপঙ্কর দাসসহ বিষ্ণুপুর ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম, বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি দেবদাস মন্ডল, প্রধান শিক্ষক অজয় মন্ডল, দাতা সদস্য গোবিন্দ লাল সরদার, বিদ্রোৎসাহী সদস্য সমীর কুমার মন্ডল, সদস্য আব্দুর রশীদ, নিয়োগ প্রার্থী মধুসুধন মন্ডলসহ কয়েকজন। সেখানে প্রধান শিক্ষক বিভিন্ন কাগজপত্র, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিপত্রসহ বিভিন্ন কাগজপত্রের আলোকে বলেন যে, আদালতে মামলা থাকলে কোন সমস্যা না হলে সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরের নির্দেশনা মাতাবেক তিনি আগামি এক মাসের মধ্যে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে নিয়োগ বোর্ড গঠণ করবেন। এরমধ্যে উপজেলা পরিষদ চত্বরে সাংবাদিকদের উপস্থিতি নতুন করে চমক সৃষ্টি করে। বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সদস্য ও ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম মিথ্যাচার করে বলেন যে, একজন হিন্দু ও একজন মুসলিম না নেওয়ায় এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। গোবিন্দ লাল সরদার মুর্শিদের ছেলের বাবদ নয় লাখ টাকা গ্রহণ করেছে। একপর্যায়ে বিস্তারিত জেনে সাংসদ এ নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে আদালতের সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়ার পরামর্শ দেন।

(আরকে/এসপি/আগস্ট ০৩, ২০২৪)

পাঠকের মতামত:

১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test