E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

ভৈরব মেডিল্যাব জেনারেল হাসপাতাল এন্ড ডায়াবেটিক সেন্টারে নবজাতকের মৃত্যু, সীলগালার নির্দেশ

২০২৪ সেপ্টেম্বর ০৩ ১৩:৩৫:২৪
ভৈরব মেডিল্যাব জেনারেল হাসপাতাল এন্ড ডায়াবেটিক সেন্টারে নবজাতকের মৃত্যু, সীলগালার নির্দেশ

সোহেল সাশ্রু, কিশোরগঞ্জ : ভৈরবে নরমাল ডেলিভারি করতে গিয়ে এইড নার্সের অবহেলায় নবজাতকের মৃত্যুর অভিযোগ পাওয়া গেছে। ১ সেপ্টেম্বর রবিবার দিবাগত রাতে পৌর শহরের কমলপুর এলাকা ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক মাইক্রো স্ট্যান্ড সংলগ্ন মেডিল্যাব জেনারেল হাসপাতাল এন্ড ডায়াবেটিক সেন্টারে এ ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগী গর্ভধারিণী মা সুবর্ণা বেগম (২২) নরসিংদীর জেলার নারায়নপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকার সিএনজি চালক ইয়ামিন মিয়ার স্ত্রী।

এদিকে অভিযুক্ত নার্স সুফিয়া বেগম ঘটনার পর পালিয়ে যায়। ঘটনার পর খবরটি ছড়িয়ে পড়লে সেখানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা, থানা পুলিশ, সেনাবাহিনীসহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স প.প. কর্মকর্তা ডা. বুলবুল আহম্মদ ঘটনাস্থলে যান। এ সময় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স প.প. কর্মকর্তা ডা. বুলবুল আহম্মদ বিষয়টি প্রাথমিক তদন্ত করে ঘটনার সত্যতা পান। পরে তিনি এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেন। ঊর্ধ্বতন কর্র্তৃপক্ষের নির্দেশে হাসপাতালটি সিলগালা করার কথা থাকলেও স্থানীয়দের অনুরোধে সিলগালা না করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। ৩ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটির নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তীতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এ বিষয়ে স্থানীয়রা জানান, এর আগেও মেডিল্যাব জেনারেল হাসপাতাল এন্ড ডায়াবেটিক সেন্টারে একাধিক অপকর্মের অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও তিনি নরসিংদী জেলার রায়পুরা উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও প.প. কর্মকর্তা। এখানেও রয়েছে তার বিভিন্ন অপকর্মের চিহ্ন। কিছুদিন আগেও সরকারি হাসপাতালের আল্ট্রাসনোগ্রাম ও ইসিজি মেশিন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে এনে নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ব্যবহার করেছেন। যা নিয়ে একাধিক পত্রিকায় রিপোর্ট হয়েছে। অদক্ষ নার্সদের দিয়ে চিকিৎসা কার্যক্রম চালায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এদের প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত নার্স নেই। আয়া বুয়াদের দিয়ে বিভিন্ন ভাবে নরমাল ডেলিভারী ও সিজারিয়ান অপারেশন করা হয়।

এ ঘটনার অভিযোগ করেন পলি বেগম। তিনি গর্ভবর্তী নারী সুবর্ণার ননাশ। তিনি এ প্রতিনিধিকে বলেন, ১ সেপ্টেম্বর সকালে ব্যথা উঠে সুবর্ণার। পরে ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক একটি আল্ট্রাসনোগ্রাম করতে বলে। বেলা ১২টায় কেয়ার নামে স্থানীয় একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে আল্ট্রাসনোগ্রাম করা হয়।

আল্ট্রাসনোগ্রাম দেখে ডা. জানান রিপোর্ট ভাল আছে। ১৫/২০ দিন পর ডেলিভারি করলেও চলবে। পরে পূর্ব পরিচিত সূত্রে বেলা ২টায় গর্ভবতী সুবর্ণাকে নিয়ে মেডিল্যাব জেনারেল হাসপাতাল এন্ড ডায়াবেটিক সেন্টারে গেলে এইড নার্স সুফিয়া বেগম স্বজনদের নরমাল ডেলিভারির আশ্বাস দেন। পরে অধিক মেডিসিন ব্যবহারের ফলে পেটেই নবজাতক শিশুটি মারা যায়। করুণ অবস্থায় গর্ভবতীর জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শিশু ডেলিভারি করা হয়। এদিকে গর্ভধারিণী মায়েরও অবস্থা খারাপ হতে থাকে।

এ বিষয়ে সুবর্ণার দোলাভাই রাজিব মিয়া বলেন, হাসপাতালের নার্সের অবহেলায় নবজাকের মৃত্যু হয়েছে। আমরা অভিযোগ না করতে হাসপতাল কর্তৃপক্ষের সাথে বিষয়টি মিটমাটের আলোচনা হয়েছে।

এ বিষয়ে হাসপাতালের নার্স ও চিকিৎসকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, সুফিয়া বেগম একজন অভিজ্ঞ এইড নার্স। হাসপাতালের সবাই তাকে খালা বলে সম্বোধন করেন। তিনি আয়া বুয়ার মতো সব কাজই করে থাকেন।

এ বিষয়ে হাসপাতাল মালিক ডা. কেএনএম জাহাঙ্গীর বলেন, হাসপাতালে নরমাল ডেলিভারিগুলো নার্স ডাক্তার সমন্বয়েই করে। সুফিয়া একজন ভাল (দায়) এইড নার্স। অনাকাক্সিক্ষত ভাবে ঘটনাটি ঘটেছে। তবে হাসপাতালের বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সাংবাদিকদের তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেনি।

এ বিষয়ে কথা বলতে হাসপাতালে গেলে কর্তব্যরত এইড নার্স সুফিয়াকে খোঁজে পাওয়া যায়নি। এমনকি তার মুঠো ফোনটিও বন্ধ পাওয়া যায়।

এ বিষয়ে ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স প. প. কর্মকর্তা ডা. বুলবুল আহম্মদ বলেন, রাতেই খবর পেয়ে হাসপাতালে গিয়েছি। নবজাতকের মৃত্যুর ঘটনায় হাসপাতালের কর্তৃপক্ষের অবহেলা পাওয়া গেছে। এছাড়া বিভিন্ন ধরণের অনিয়ম পাওয়া যায় হাসপাতালের। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনায় হাসপাতালটি বন্ধ করে দেয়া হবে। জেলা সিভিল সার্জনের নির্দেশনায় ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের গাইনী বিভাগের ডা. ফারজানা খান’কে প্রধান করে আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. আব্দুল করিম’ কে, সদস্য সচিব ও কনসালট্যান্ট (এনেস্থেসিয়া) ডা. এজেডএম ফরহাদ’কে সদস্য করে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ৩ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত কমিটি রিপোর্ট দাখিল করবেন। এরপর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। সদ্য নবজাতকের মরদেহটি পুলিশ হেফাজতে দিয়ে দেয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে ভৈরব থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. সফিকুল ইসলাম বলেন, নবজাতক শিশুটিকে ময়নাতদন্তের জন্য কিশোরগঞ্জ সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। শিশুটির পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

(এসএস/এএস/সেপ্টেম্বর ০৩, ২০২৪)

পাঠকের মতামত:

১১ অক্টোবর ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test