E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

রাজারহাটে বাড়িভিটা হারিয়ে দিশেহারা তিস্তা পাড়ের মানুষ

২০২৪ সেপ্টেম্বর ০৪ ১৯:১৫:১১
রাজারহাটে বাড়িভিটা হারিয়ে দিশেহারা তিস্তা পাড়ের মানুষ

প্রহলাদ মন্ডল সৈকত, রাজারহাট : ‘স্বামীর ভিটাও গেল, শ্বশুরের ভিটাও গেল এখন আমরা কই যামু। আপনেরা আমাদের থাকনের ব্যবস্থা করেন।’ -এসব কষ্টের কথা বললেন কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের চর খিতাবখাঁ গ্রামের গৃহবধূ নাজমা বেগম। তার স্বামী ছমির উদ্দিনও বলেন, ‘এই নিয়া ৩ বার বাড়ি ভাঙলো। এখন থাকনের কোন জায়গা নাই। আমাগো বাঁচান।’ 

বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান উক্ত ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল কুদ্দুছ প্রামাণিক। তিনি বলেন, ‘৬/৭টা বাড়ি ভাঙার খবর করার জন্য সাংবাদিক আসা লাগবে! আমি কোন বক্তব্য দিবো না। এমন ভাঙন কতো হয়। লিখি কি হবে! আপনারা যান। আমি কোন কথা বলবো না।’

গত ১৫দিন ধরে তিস্তা নদীর ভাঙনে এই এলাকার সরিষাবাড়ি শ্যালোঘাট থেকে পূর্বে চর খিতাবখাঁ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত তীব্র ভাঙন চলছে। ভাঙন প্রতিরোধে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দু’দিকে জিও ব্যাগ ফেলানো হলেও এখানে রঙধনু আকারে ভাঙছে সর্বগ্রাসী তিস্তা নদী।

এলাকার সাবেক মেম্বার শহিদুল আলম বলেন, ‘গত ১৫দিনে এখানে ৯টি বাড়ি ভেঙেছে। ভাঙনের মুখে একটি খিতাবখাঁ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ ৫০ থেকে ৬০টি বাড়ি হুমকীর মুখে রয়েছে। গত ৭দিনে এখানে ভেঙেছে ফকির উদ্দিন, সোনামিয়া, মোন্নাফ, চাঁদমিয়া, মতিয়ার, আতিয়ার, আনম, আজিজুল ও বাবলুর বাড়ি। পানি উন্নয়ন বোর্ডকে অনুরোধ করলেও তারা কর্ণপাত করছে না।’

সরেজমিন এলাকাটি ঘুরে দেখা গেল ভাঙন কবলিত মানুষের দুর্দশা। নদী এই শান্ত তো, এই আবার ভয়ংকর রূপ ধারণ করছে। গ্রামের ফসলি জমিন চলে যাচ্ছে নদী গর্ভে। কৃষকের চোখে মুখে বসতবাড়ি আর জমি হারানোর বেদনা। কিন্তু কোন প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহন না করায় অসহায় ফ্যালফ্যাল চোখে তাকিয়ে আছে তারা।

কৃষক হামিদ আলী জানান, ‘আমার এক একর আবাদি জমি নদীগর্ভে চলে গেছে। এখন আমার খাওয়ার জমি নাই। চেলেমেয়ে নিয়ে এখন পথে বসার মত অবস্থা।’

জাহেদা বেগম জানান, ‘নদী ভাঙতে ভাঙতে শেষ মাথায় চলে আসছি। এখন মানুষের হাত-পা ধরেও থাকনের জায়গা পাইছি না। কই যামু আপনেরা কন!’

ভাঙন কবলিতদের জন্য কি পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে বিষয়টি জানতে ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল কুদ্দুছ প্রামাণিকের বাড়িতে গেলে তিনি ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে জানান, ৬/৭টা বাড়ি ভাঙার খবর করার জন্য সাংবাদিক লাগে। আপনারা কোন কাজ করেন না। শুধু বিরক্ত করতে আসেন। আমি কোন বক্তব্য দিবো না। এমন ভাঙন কতো হয়।

এ ব্যাপারে কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান জানান, বাজেট সংকটের কারণে আমরা তাৎক্ষণিকভাবে সহায়তা দিতে পারছি না। তবে স্কুলটি রক্ষায় আমরা ইতোমধ্যে তিনশ জিও ব্যাগ ফেলেছি। আরো জিও ব্যাগের জন্য চাহিদা দেয়া হয়েছে। এখন সীমিত আকারে পাচ্ছি। ফলে আমাদের ইচ্ছে থাকলেও সব ভাঙন কবলিত এলাকায় যেতে পারছি না।

(পিএস/এসপি/সেপ্টেম্বর ০৪, ২০২৪)

পাঠকের মতামত:

১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test