E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

প্রধান শিক্ষককে জিম্মি করে পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর 

২০ দিন পর ফুলের মালা পড়িয়ে সেই শিক্ষককে চেয়ারে বসালো ছাত্র-ছাত্রীরা

২০২৪ সেপ্টেম্বর ০৯ ১৯:১২:২২
২০ দিন পর ফুলের মালা পড়িয়ে সেই শিক্ষককে চেয়ারে বসালো ছাত্র-ছাত্রীরা

সমরেন্দ্র বিশ্বশর্মা, কেন্দুয়া : মাঠ সংস্কারের জন্য টাকা দাবি করে না পেয়ে প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম আজাদকে জিম্মি করে জোর পূর্বক পদত্যাগ পত্রে স্বাক্ষর নেন এক শ্রেণির উত্তেজিত ছাত্র-জনতা। এ ঘটনার ২০ দিন পর ৯ সেপ্টেম্বর সোমবার সকাল ১১ টায় বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক ও অভিভাবকদের সমন্বয়ে সেই প্রধান শিক্ষকের বাড়িতে গিয়ে তাঁকে ফুলের মালা পড়িয়ে আনন্দ মিছিল করে বিদ্যালয়ে এনে প্রধান শিক্ষকের চেয়ারে বসানো হয়।

গত ২০ আগস্ট বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নামে কিছু অছাত্র ও এলাকার উত্তেজিত জনতা দুপুর ১২ টার দিকে বাঁশাটি উচ্চ বিদ্যালয়ে যান। সেখানে গিয়ে প্রধান শিক্ষকের নিকট মাঠ সংস্কারের জন্য কিছু টাকা দাবি করেন। কিন্তু প্রধান শিক্ষক তাদেরকে বলেন, মাঠ সংস্কারের জন্য ইতিমধ্যে টাকা দেওয়া হয়ে গেছে। দু’এক দিনের মধ্যেই মাঠের সংস্কার কাজ শুরু হবে। কিন্তু বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নাম করে উত্তেজিত লোকজন প্রধান শিক্ষককে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে। এক পর্যায়ে প্রধান শিক্ষক জ্ঞান হারিয়ে চেয়ারে ঢলে পড়েন। কিন্তু উত্তেজিত ছাত্র জনতা তাঁর হাতে কলম ধরিয়ে দিয়ে জোর করে পদত্যাগ পত্রে স্বাক্ষর নিয়ে প্রধান শিক্ষককে বিদ্যালয়ে আসতে মানা করে। সুস্থ হয়ে ২১ আগস্ট প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ কেন্দুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পদাধিকার বলে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দেন। ২৯ আগস্ট এ বিষয়টি উপজেলা মাসিক আইন শৃংখলা কমিটির সভার আলোচনায় গুরুত্ব পায়। ৪ সেপ্টেম্বর সহকারী কমিশনার (ভূমি) জান্নাতের নেতৃত্বে ৩ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি বিদ্যালয়ে গিয়ে তদন্ত শুরু করেন। তদন্ত চলাকালে বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা প্রধান শিক্ষককে স্ব-পদে বহাল রাখার দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করে।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সাইফুল আলম জানান, প্রধান শিক্ষকের সাথে গঠিত ঘটনায় তাঁর আবেদনের প্রেক্ষিতে ৫ সেপ্টেম্বর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে শিক্ষক, পরিচালনা কমিটির সদস্য ও আন্দোলন কারীদের নিয়ে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় বিষয়টি নিষ্পত্তি করা হয়। সোমবার বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক ও অভিভাবক সদস্যরা প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম আজাদের বাড়িতে গিয়ে তাঁকে ফুলের মালা দিয়ে বরণ করেন। পরে ফুলের পাঁপড়ি ছিটিয়ে আনন্দ মিছিল করে বিদ্যালয়ে এনে প্রধান শিক্ষককে তাঁর চেয়ারে বসানো হয়।

প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষকের স্ত্রী সুলতানা রাজিয়া বলেন, ২০ আগস্ট যে ঘটনা ঘটানো ঘটে ছিল, তাতে মনে করেছিলাম, এই অসম্মান নিয়ে পৃথিবীতে বেঁচে থাকার লাভ কি? আজ ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক ও অভিভাবকরা বাড়িতে এসে শিক্ষককের যে মর্যাদা ও সম্মান দিয়েছেন তা জীবনেও ভুলতে পারবো না।

বাঁশাটি উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক কামরুজ্জামান বলেন, মানুষ হিসেবে প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম আজাদের জানা অজানা অনেক ভুল থাকতে পারে, কিন্তু একজন শিক্ষক যখন চাপের মুখে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন, তখন তাঁর হাতে কলম ধরিয়ে দিয়ে জোর করে পদত্যাগ পত্রে স্বাক্ষর নেওয়া খুবই লজ্জাজনক। এই কাজটি যারা করেছে তারা ঠিক করেননি। আজ ছাত্র-ছাত্রীরা শিক্ষকের সেই সম্মান ফিরিয়ে দেওয়ায় আমরা গর্বিত।

প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ বলেন, সে দিনের ঘটনায় মনে হয়েছিল আমার শিক্ষকতার জীবন পুরোপুরিই ব্যর্থ। কিন্তু আজ ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক ও কতিপয় অভিভাবক বাড়িতে গিয়ে যে সম্মান দেখিয়েছেন তাতে শুধু শিক্ষক নয়, ছাত্র-ছাত্রী, অভিভাবক ও এলাবাসীর মাথাও উঁচু হয়েছে। আমি কৃতজ্ঞ। আজকের দিন থেকে শিক্ষা নিয়ে আগামীর সুন্দর পথ চলবো।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পরিচালনা কমিটির সভাপতি ইমদাদুল হক তালুকদার বলেন, বাঁশাটি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের সাথে যে ঘটনা হয়েছিল তা খুবই লজ্জাজনক। ইতিমধ্যে বিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্টদের নিয়ে বিষয়টি মিমাংসা করে দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, একজন শিক্ষককে সম্মান জানাতে ছাত্ররা যে উদ্যোগ নিয়েছে তা প্রশংসার দাবি রাখে।

(এসবি/এসপি/সেপ্টেম্বর ০৯, ২০২৪)

পাঠকের মতামত:

১১ অক্টোবর ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test