E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

ভৈরবের পল্লীতে দুই পক্ষের সংঘর্ষ নিহত ১, আহত ৩০

২০২৪ সেপ্টেম্বর ১৪ ১৫:৪১:২৭
ভৈরবের পল্লীতে দুই পক্ষের সংঘর্ষ নিহত ১, আহত ৩০

সোহেল সাশ্রু, কিশোরগঞ্জ : ভৈরবের পল্লীতে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে একই গ্রামের দুইপক্ষ রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এ সংঘর্ষে ১ জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে উভয় পক্ষের অন্তত ৩০ জন। ১৩ সেপ্টেম্বর শুক্রবার দুপুরে উপজেলার সাদেকপুর ইউনিয়নের মৌটুপী গ্রামে আতিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সরকার বাড়ি ও কর্তা বাড়ির লোকজন দা, বল্লম, লাঠি সোটা, টেঁটা, ইট-পাটকেল নিয়ে এ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষে নিহত ইকবাল মিয়া (২৮) খলাপাড়া গ্রামের ধন মিয়ার ছেলে।

আহতদের মধ্যে শাফি বেপারী (৬৫), হোসাইন (২০), ইয়াছিন (২৫), রাকিব (৩২) শাহ আলম (৩০), তোফাজ্জল (৩৫), হেলেনা বেগম (৩৫) ও লাদেন (২০) উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়েছেন। সন্ধ্যা থেকে আহতরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসতে থাকে। এ সময় কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদেরকে চিকিৎসা দেন। এদের মধ্যে গুরুতর আহত অবস্থায় লাদেন, হেলেনা বেগম, শাহ আলম ও শাফি বেপারীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. ফারিয়া নাজমুন প্রভা।

জানা যায়, ৫৬ বছর যাবত চলছে ভৈরবে দুই বংশের দ্বন্দ্ব। বংশ দুটি হলো উপজেলার সাদেকপুর ইউনিয়নের মৌটুপি গ্রামে কর্তা বাড়ি ও সরকার বাড়ি। সরকার বাড়ি পক্ষে নেতৃত্ব দেন ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা সরকার সাফায়েত উল্লাহ। অপরদিকে কর্তা বাড়ির নেতৃত্ব দেন সাবেক চেয়ারম্যান ও বিএনপির নেতা তোফাজ্জল হোসেন। দুই বংশের দ্ব›েদ্ব ইকবাল মিয়াসহ দুই পক্ষের খুন হয়েছে এ পর্যন্ত ১৪ জন। এর আগে ১৬ জুন ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে দুই বংশের মধ্যে সংঘর্ষে কর্তা বাড়ির নাদিম গুরুতর আহত হলে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১৯ জুন চিকিৎসাধীন অবস্থায় সে মৃত্যুবরণ করেন। আবারো ৬ আগস্ট ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে সাদেকপুরের মেন্দিপুর পূর্বপাড়া এলাকায় দুই গ্রুপের সংঘর্ষ হয়। ৭ আগস্ট একই ঘটনায় সংঘর্ষে টেটার আঘাতে জহিরুল্লাহ নামে একজন নিহত হয়। এ দিকে নাদিম হত্যা ঘটনায় সরকার বাড়ির চেয়ারম্যান সাফায়েত উল্লাহ, তার ভাই ও দুই ছেলেসহ ৮৩ জনকে আসামি করে থানায় একটি হত্যা মামলা করে কর্তা বাড়ির পক্ষ। পরে সরকার বাড়ির ৬৯ জন কিশোরগঞ্জ কোর্টে হাজিরা দিতে গেলে তাদের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে প্রেরণ করেন বিচারক। ১৩ আগস্ট সরকার বাড়ির লোকজন জামিনে মুক্তি পায়। মুক্তি পেয়ে বাড়ি ফিরতেই শুরু হয় দফায় দফায় সংঘর্ষ। থেমে থেকে দু’একদিন যেতে না যেতে অদ্যাবধি চলছে সংঘর্ষ। পুলিশ ও সেনাবাহিনী একাধিকবার চেষ্টা করেও তাদের থামাতে পরেনি। ১৩ সেপ্টেম্বর শুক্রবার ৩টার পর থেকে দুই বংশ সংঘর্ষে জড়িয়ে পরে। এসময় ইকবাল মিয়া নামে একজন নিহত হন। আহত হন ৩০ জন।

এ বিষয়ে সরকার বাড়ির পক্ষে হাজী আনোয়ারুল হক বলেন, পূর্ব শত্রুতার জেরে কর্তাবাড়ির লোকজন আমাদের বাড়ির লোকজনের উপর অতর্কিত হামলা চালায়। কর্তাবাড়ির লোকজনের টেটার আঘাতে আমাদের বাড়ির ইকবাল নিহত হয়েছে আমরা এর বিচার চাই।

এ বিষয়ে কর্তা বাড়ি পক্ষের সাবেক চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা তোফাজ্জল হোসেন বলেন, পূর্ব শত্রুতা চলছে বহু বছর যাবত। আমি অতিষ্ট হয়ে ভৈরব শহরে দীর্ঘদিন যাবত বসবাস করছি। আজকে মারামারি হচ্ছে শুনেছি। তবে হত্যার বিষয়ে কিছুই জানি না।

ভৈরব থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. সফিকুল ইসলাম জানান, মৌটুপি গ্রামের মানুষ বংশ পরায়নভাবে শত্রুতা, আধিপত্য বিস্তার নিয়ে যুগ যুগ ধরে ঝগড়া সংঘর্ষ করছে। পুলিশও তাদেরকে দমন করতে পারেনা। আজকে দুই বংশের সংঘর্ষে একজন নিহত হয়েছে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়েছিল। পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক রয়েছে। নিহতের পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

(এসএস/এএস/সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২৪)

পাঠকের মতামত:

১১ অক্টোবর ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test