E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

ব্লাকমেইলের প্রতিশোধ নিতে

সাতক্ষীরার এক ক্লিনিকের নারী কর্মীকে তুলে নিয়ে গণধর্ষণ! 

২০২৪ সেপ্টেম্বর ১৬ ১৭:০৯:০৪
সাতক্ষীরার এক ক্লিনিকের নারী কর্মীকে তুলে নিয়ে গণধর্ষণ! 

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : ব্লাকমেইলের প্রতিশোধ নিতে এক ক্লিনিকের নারী কর্মীকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে প্রাইভেটকারের মধ্যে গণধর্ষণ করা হয়েছে। শুক্রবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে ওই নারীকে সাতক্ষীরার পাটকেলঘাটা ব্রীজের পাশ থেকে অপহরণ করা হয়।

সাতক্ষীরা সদরের দক্ষিণ ফিংড়ি গ্রামের এক নির্মাণ শ্রমিকের মেয়ে ও দহকুলা গ্রামের এক দিনমজুরের স্ত্রী (২৬) জানান, তার যখন আট মাস বয়স তখন তার মা আত্মহত্যা করে মারা যান। তারপর তার বাবা এক নিকট আত্মীয়কে বিয়ে করেন। ছয় বছর আগে দহকুলা গ্রামের এক দিনমজুরের সঙ্গে বিয়ে দেন। তাদের চার বছরের এক সন্তান রয়েছে। স্বামীর উপার্জন কম থাকায় দুই বছর আগে তিনি শহরের একটি ক্লিনিকে কাজ নেন। শহরের কাটিয়া আমতলায় কয়েকজন ক্লিনিক কর্মী মিলে ভাড়া থাকেন। মাঝে মাঝে স্বামীর বাড়িতে৷ বাচ্চাটাকে দেখতে যেতেন তিনি। ক্লিনিকে কাজ করার সুবাদে তালা উপজেলার কুমিরা গ্রামের জনৈক রুবেল হোসেনের মাধ্যমে পাটকেলঘাটা থানাধীন বাইগুনি গ্রামের খলিলুর রহমানের ছেলে জালালউদ্দিন এর সাথে এক বছর আগে তার পরিচয় হয়। এরপর থেকে মোবাইলে মাঝে মাঝে কথা হতো। তিন মাস আগে জালাল তারই কর্মস্থলের এক নারী কর্মীর কাছে গাজা বিক্রি করতে এলে তিনি প্রতিবাদ করেন। দ্বিতীয় দিন এলে তাকে পুলিশকে খবর দিয়ে ধরিয়ে দেন। রাতে মোটা অংকের টাকা পুলিশের হাত থেকে রক্ষা পায় জালাল। এরপর থেকে জালাল প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য চেষ্টা চালিয়ে আসছিলো। তারই ধারাবাহিকতায় জালাল কয়েকজন মাদক ব্যবসায়িকে তার (নারী) মোবাইল নাম্বার দেয়। এরমধ্যে মনিরামপুর উপজেলার তেঁতুলিয়া গ্রামের আরাফাত নামের একজন তাকে কয়েকবার ফোন করে তার সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করে। একপর্যায়ে তাকে পাটকেলঘাটায় আসতে বললে ব্রীজের উপর থেকে একটি প্রাইভেটকারে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে মীর্জাপুর এলাকায় নিয়ে চালক শামীম,আরাফাত,রুবেল ও জালাল তাকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। পরে তাকে ইসলামকাটি ইউনিয়নের ভাগবাহ এলাকায় নিয়ে গাড়ির মধ্যে শ্বাসরোধ করে হত্যার চেষ্টা করে বাগানের মধ্যে ফেলে দিতে গেলে রাত সাড়ে আটটার দিকে পাশ্ববর্তী মসজিদে নামাজ পড়তে যাওয়া মুসল্লিরা তার চিৎকার শুনে তাকে উদ্ধার করেন। আটক করেন জালালকে। পরে পাটকেলঘাটা পুলিশের সহায়তায় তাকে ও জালালকে তালা থানায় সোপর্দ করা হয়।

এদিকে গ্রেফতার হওয়া জালালউদ্দিন রবিবার বিকেলে আদালত চত্ত্বরে এ প্রতিবেদককে জানান, এক বছর আগে পরিচয় হয় ক্লিনিক কর্মী মিম এর সাথে। সে নিজেকে অবিবাহিত বলে পরিচয় দিতো। নিজের স্ত্রী অসুস্থ থাকার কারণে পরিবারের সদস্যদের অনুমত সাপেক্ষে মিমকে বিয়ের প্রস্তাব দেন তিনি। একপর্যায়ে তিন মাস আগে মিম তাকে শহরের কাটিয়া আমতলা মোড়ের পাশে তার ভাড়া বাসায় ডেকে নিয়ে আসে। বাসায় ঢোকার পর কিছুক্ষণ পর দরজায় ছিটকানি দিয়ে দেয়। পরে সাদা পোশাকে ডিবি পুলিশ (হাতে পিস্তল ও হাতকড়া) দরজায় ধাক্কা দিলে সে দরজা খুলে দেয়। তখন পুলিশ এসে তাকে মারপিট করে হাতকড়া পরায়। বাইরে এনে তার কাছে এক লাখ টাকা দাবি করে। সেখান থেকে তাকে বাইপাস সড়কে আনা হয়। এরপর তেলকুপি গ্রামের কাঠ ব্যবসায়ি মোস্তফার সঙ্গে পুলিশ ফোনে কথা বলিয়ে দেয়। এক পর্যায়ে মোস্তফা ৩৫ হাজার টাকা যোগাড় করে পুলিশকে খবর দিলে রাত দুইটার দিকে তাকে মজুমদার ফিলিং স্টেশনের পাশে নিয়ে যাওয়া হয়। ৩৫ হাজার টাকা নিয়ে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। জালালের অভিযোগ, মিম ও তার সঙ্গে একই বাসায় থাকা কয়েকজন নারী ক্লিনিক কর্মী পরিচয়ে আসল নাম পাল্টে পতিতাবৃত্তির পাশাপাশি পুরুষদের ব্লাকমেইল করে থাকে।

তিনি পুলিশের কাছ থেকে ছাড়া পেশে ওই নারীকে কল দিলে তিনি জানান, ওটা তার ব্যবসা। তখন থেকে তার মাথায় প্রতিশোধের আগুন জ্বলে ওঠে। বিষয়টি তিনি তার ভাগ্নে মনিরামপুরের কলেজ ছাত্র তেঁতুলিয়া গ্রামের আরাফাতকে বলেন। তাকে দেওয়া হয় ওই নারীর মোবাইল নাম্বার। একপর্যায়ে আরাফাত ওই নারীর সাথে ভালবাসার অভিনয় করে। শুক্রবার বিকেলে আরাফাতকে পাটকেলঘাটায় আসতে বলে ওই নারী। পাটকেলঘাটায় বাঁধন কনফেকশনারিতে খায় ওই নারী। বিকেল ৬ টার দিকে একটি প্রাইভেটকার নিয়ে পাটকেলঘাটা ওভার ব্রিজের পাশে অবস্থান নেয় আরাফাত। সঙ্গে ছিল কুমিরার রুবেল ও চালক মনিরামপুরের জসীম। ওই নারীকে প্রাইভেটকারে তুলে ১৮ মাইলের দিকে যায়। পথিমধ্যে মীর্জাপুর শ্মশানঘাট এলকায় ওই নারীকে তিনজন মিলে ধর্ষণ করে। পরে তাকে আরাফাত ফোন করে ওই নারীকে ধরা হয়েছে বলে তাকে ভাগবাহ্ মোড়ের আগে আসতে বলে। একটি ভাড়ায় চালিত মোটর সাইকেলে তিনি সেখানে যেয়ে ওই নারীকে বিধ্বস্ত অবস্থায় প্রাইভেটকারের মধ্যে দেখতে পেয়ে পুলিশের দেওয়া ৩৫ হাজার টাকা চান। ওই নারী তার কাছে সাত দিন সময় চান। রাতের মধ্যে টাকা দিতে বলায় সে তার (জালাল) বাড়িতে থেকে টাকা দিতে চায়। একপর্যায়ে ওই নারীকে প্রাইভেটকারে করে বাড়ির পাশে আনা হয়। গাড়ির ডালা খুলতেই মেয়েটি চিৎকার করতে করতে দৌড়াতে থাকে। এসময় প্রাইভেটকার নিয়ে আরাফাতসহ তিনজন চলে যায়। বৃষ্টি চলাকালিন সময় মসজিদে যাওয়া মুসল্লিরা ওই নারীকে উদ্ধার করে পাটকেলঘাটা থানায় দেয়। পরে পাটকেলঘাটা থানার পুলিশ ওই নারীর কাছে পাওনা টাকা দেওয়ার কথা বলে মোবাইলে থানায় ডেকে আটকে দেয়। পরে তাকে তালা থানার মাধ্যমে অপহরণ ও ধর্ষণ মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে রবিবার আদালতে পাঠানো হয়।

তালা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ মনিরুল ইসলাম জানান, এ ঘটনায় ওই নারী বাদি হয়ে শনিবার রাতে অপহরণ ও গণধর্ষণের অভিযোগে জালাল, রুবেল, আরাফাত ও চালক জসীমের নাম উল্লেখ করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা দায়ের করেছে। গ্রেফতারকৃত জালালকে রবিবার সকালে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। ভিকটিমকে শনিবার বিকেল সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। রবিবার তার ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। পলাতক আসামীদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

(আরকে/এসপি/সেপ্টেম্বর ১৬, ২০২৪)

পাঠকের মতামত:

১৬ অক্টোবর ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test